রংপুর: সারা দেশে বিএনপি-জামায়াতসহ দলগুলোর ডাকা চতুর্থ দফা অবরোধের প্রথম দিনে রংপুর থেকে ট্রেন ও আন্তঃজেলার বাস স্বাভাবিক রয়েছে। তবে যাত্রী সংকটে দূরপাল্লার বাস নিয়ে বিপাকে পড়েছেন পরিবহন মালিক ও শ্রমিকরা।
সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত রংপুর নগরীর কামারপাড়া ঢাকা কোচ স্ট্যান্ড থেকে যাত্রীর অভাব ও নিরাপত্তা আশঙ্কায় ছেড়ে যায়নি ঢাকাগামী কোনো কোনো বাস। রংপুর-ঢাকা মহাসড়কেও দূরপাল্লার যাত্রীবাহী বাস চলাচল করতে দেখা যায়নি। তবে পণ্যবাহী ট্রাক, পিকআপ ভ্যান, মাইক্রোবাস, থ্রি-হুইলারসহ হালকা যানবাহন চলাচল করছে।
রোববার (১২ নভেম্বর) সকাল নয়টা থেকে বেলা একটা পর্যন্ত নগরীর কামারপাড়া ঢাকা কোচ স্ট্যান্ড, কেন্দ্রীয় সিটি বাস টার্মিনাল, বিআরটিসি বাস ডিপোসহ বিভিন্ন পয়েন্ট ঘুরে দেখা গেছে বেশির বাস বন্ধ রয়েছে। স্ট্যান্ডগুলোতে চালক-হেলপারসহ শ্রমিকরা থাকলেও প্রত্যাশানুযায়ী মিলছে না যাত্রীর দেখা। কাউন্টার খোলা রেখে অলস সময় পার করছেন শ্রমিকরা।
তবে পরিবহন শ্রমিক ও মালিকরা বলছেন, বাস চলাচলের সিদ্ধান্ত রয়েছে। এই কারণে ভোর থেকে কাউন্টার খোলা রাখা হয়েছে। কিন্তু অবরোধের কারণে যাত্রীরা তেমন ভিড় করছেন না। বাস ছাড়ার মতো যাত্রী মিললে বিগত দিনের মতো আজও ঢাকার উদ্দেশ্যে বাস ছেড়ে যাবে বলেও জানান তারা।
সরেজমিন বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, সকাল থেকে অফিস আদালত, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ শহরের সব দোকানপাট স্বাভাবিকভাবে খুলেছে। মহাসড়কে দূরপাল্লার বাস ছেড়ে না গেলেও নগরীতে অটোরিকশা, সিএনজি ও ব্যক্তিগত প্রাইভেট কার স্বাভাবিকভাবে চলাচল করছে। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের পাশাপাশি গোয়েন্দা পুলিশের নজরদারি অব্যাহত রয়েছে। সেই সঙ্গে শহরের বিভিন্নস্থানে অবরোধের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে আওয়ামী লীগ সমর্থকরা।
রংপুর কেন্দ্রীয় সিটি বাস টার্মিনাল থেকে আন্তঃজেলা রুটের কোনো বাস চলাচল করলেও খুব কম। বাস টার্মিনালে অন্যান্য দিনের মতো যাত্রী চোখে পড়েনি। তবে যাত্রীরা ঝুঁকি এড়াতে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা, লেগুনা, পিকআপ, মাইক্রোবাসসহ প্রাইভেট কারে করে গন্তব্যে ছুটছেন। আন্তঃজেলা সড়ক ও আঞ্চলিক মহাসড়কে অবরোধের তেমন প্রভাব না পড়লেও রংপুর-ঢাকা মহাসড়কে দূরপাল্লার বাস চলাচলের সুনশান নীরব দৃশ্য চোখে পড়ার মতো।
রংপুর রেলওয়ে স্টেশন সুপার শংকর গাঙ্গুলীর সাথে কথা হলে তিনি বলেন, সকাল থেকে সঠিক সময়ে প্রতিটি ট্রেন রংপুর স্টেশন ছেড়ে গেছে। এ সময় যাত্রীদের কোনো প্রকার সমস্যা হয়নি। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে স্টেশন এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।
অন্যদিকে জেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক এম এ মজিদ জানান, আন্তঃজেলাসহ সব রুটেই গাড়ি চলাচল করছে। তবে যাত্রী সংকট রয়েছে। ঢাকাগামী দূরপাল্লার বাসও চলাচল করবে। আমরা যাত্রী পেলেই বাস ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
এদিকে সকাল ৬টা থেকে অবরোধ শুরু হলেও এখন পর্যন্ত কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। অবরোধের সমর্থনে বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীদের কোনো তৎপরতা চোখে পড়েনি। সকাল থেকে নগরীর গ্রাণ্ড হোটেল মোড়স্থ বিএনপির কার্যালয় তালাবদ্ধ থাকতে দেখা গেছে। দলীয় কার্যালয়সহ নগরীর গুরুত্বপূর্ণ সড়ক এবং জনগুরুত্বপূর্ণ এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। বাড়ানো হয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর টহল তৎপরতা।
তবে সকালে নগরীর কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল সংলগ্ন রংপুর-বদরগঞ্জ সড়কে অবরোধের সমর্থনে ঝটিকা মিছিল করেছে মহানগর বিএনপির নেতাকর্মীরা। মিছিল শেষে সেখানে সংক্ষিপ্ত প্রতিবাদ সভা থেকে অবিলম্বে সরকারকে পদত্যাগ করাসহ দলের সকল আটক নেতাকর্মীর নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানান। মিছিলে মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক শহিদুল ইসলাম মিজু ও ভারপ্রাপ্ত সদস্য সচিব আব্দুস সালাম নেতৃত্ব দেন।
এদিকে রংপুর জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) ফেরদৌস আলী চৌধুরী বলেন, মানুষের জীবনযাত্রা স্বাভাবিক রয়েছে। এরপরও শহর ও মহাসড়কে পুলিশি টহল জোরদার করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।
সোনালীনিউজ/একেএম/এসআই
আপনার মতামত লিখুন :