নারায়ণগঞ্জ : নারায়ণগঞ্জ-১ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজীর মিছিলে প্রদর্শিত আগ্নেয়াস্ত্রটির লাইসেন্স বাতিলের জন্য নড়াইল জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে সুপারিশ করেছে জেলা প্রশাসন।
নারায়ণগঞ্জের জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মাহমুদুল হক জানান, শুক্রবার নড়াইলের জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বরাবরে সুপারিশপত্রটি পাঠিয়েছেন তিনি।
মাহমুদুল হক বলেন, অস্ত্রটির লাইসেন্স নড়াইল জেলা থেকে ইস্যু করা। এ কারণে লাইসেন্স বাতিলের জন্য নড়াইল জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে সুপারিশ করা হয়েছে।
আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-১ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে আবার মনোনয়ন পেয়েছেন গোলাম দস্তগীর গাজী। রূপগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্বেও রয়েছেন তিনি।
গত বুধবার দুপুরে কয়েকশ নেতাকর্মীর মিছিল নিয়ে তিনি যখন রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে মনোনয়নপত্র জমা দিতে যান, সেখানেই এক ব্যক্তিকে প্রকাশ্যে আগ্নেয়াস্ত্র প্রদর্শন করতে দেখা যায়।
ওই ঘটনার পর ‘নির্বাচনের আচরণবিধি না মেনে প্রচার শুরুর নির্দিষ্ট তারিখের আগেই সশস্ত্র কর্মীসহ মিছিল নিয়ে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার’ অভিযোগে গোলাম দস্তগীর গাজীকে কারণ দর্শাও নোটিস দেয় নির্বাচনি অনুসন্ধান কমিটি।
দস্তগীর গাজীর পক্ষে তার এক প্রতিনিধি শুক্রবার নারায়ণগঞ্জ-১ আসনের নির্বাচনি অনুসন্ধান কমিটির সভাপতি জেলার জ্যেষ্ঠ সহকারী জজ শেখ আনিসুজ্জামানের আদালতে উপস্থিত হয়ে লিখিত ব্যাখ্যা দেন বলে আদালতের পেশকার ইবনে সাউদ জানান।
লিখিত ব্যাখ্যায় কী বলা হয়েছে, সে বিষয়ে কিছু জানা যায়নি। এ বিষয়ে কথা বলতে গোলাম দস্তগীর গাজীকে কয়েক দফা ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সেদিনের মিছিলের একটি অংশের নেতৃত্ব দেন রূপগঞ্জ উপজেলার কাঞ্চন পৌরসভা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রসুল কলি। মিছিলের অগ্রভাগে এক ব্যক্তিকে কাঁধে শটগান ঝুলিয়ে ঘুরতে দেখা যায়।
পরে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, অস্ত্রধারী ওই ব্যক্তি গোলাম রসুল কলির ব্যক্তিগত দেহরক্ষী আশিকুজ্জামান। কলিও পরে বিষয়টি স্বীকার করে নেন।
কলি বলেন, সে আমার দেহরক্ষী। শটগানটি তার নামে লাইসেন্স করা।
আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স প্রদান, নবায়ন ও ব্যবহার নীতিমালা অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তি তার লাইসেন্সেকৃত অস্ত্র আত্মরক্ষার প্রয়োজনে নিজে বহন বা ব্যবহার করতে পারবেন। তবে অন্যের ভীতি বা বিরক্তি উদ্রেক করতে পারে, এমনভাবে প্রদর্শন করা যাবে না।
ঘটনার রাতেই অস্ত্র ও অস্ত্রের লাইসেন্সটি জব্দ করে পুলিশ। পরে সেই লাইসেন্স বাতিলের জন্য নারায়ণগঞ্জের জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে সুপারিশ করেন জেলার পুলিশ সুপার গোলাম মোস্তফা রাসেল।
সেখানে বলা হয়, অস্ত্রটি ব্যবহারবিধি সংক্রান্ত ন্যূনতম জ্ঞানের অভাব রয়েছে (লাইসেন্সধারী) আশিকুজ্জামানের। ফলে তার এ ধরনের অস্ত্র ব্যবহার সংক্রান্ত বিধিবহির্ভূত আচরণে নির্বাচনি আচরণবিধি লঙ্ঘনজনিত ঘটনা ঘটার কারণে স্থানীয় প্রশাসন ও নির্বাচন পরিচালনা সংশ্লিষ্ট সকলকে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হয়।
তারই ধারাবাহিকতায় নারায়ণগঞ্জের জেলা ম্যাজিস্ট্রেট নড়াইলে চিঠি দিয়ে অস্ত্রটির লাইসেন্স বাতিলের সুপারিশ করলেন।
সেখানে বলা হয়, বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের ক্যামেরার সামনে অস্ত্রটি উঁচিয়ে প্রার্থীর পক্ষে স্লোগান দেওয়ায় জনমনে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়। জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের সুপারিশের প্রেক্ষিতে বিদ্যমান আইন ও নীতিমালা অনুযায়ী লাইসেন্সটি বাতিল ও আগ্নেয়াস্ত্রটি সরকার বরাবর জব্দ করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ করা হল।
এমটিআই
আপনার মতামত লিখুন :