নতুন আলুতে স্বস্তি ফিরছে রাজশাহীর বাজারে

  • রাজশাহী ব্যুরো | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২৯, ২০২৪, ০৩:৫১ পিএম
নতুন আলুতে স্বস্তি ফিরছে রাজশাহীর বাজারে

রাজশাহী: রাজশাহীর বাজারে বাজরে এখন নতুন আলুতে ভরে উঠেছে। কৃষকরা মাঠ থেকে পুরোদমে আলু উত্তোলন করছেন। সেই আলু খুচরা ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা। ক্রয় করে রাজধানী ঢাকাসহ নগরীর বিভিন্ন বাজারে সরবরাহ করছেন। এতে বছর জুড়ে আলুর উর্ধমূল্য ছিল তা একটু কমেছে। ফলে বাজারে আলুর সরবরাহ বেশি থাকায় টান পড়েছে দামে। আলুর দাম কমায় ব্যবসায়ী ও চাষীরা অসন্তুষ হলেও কিছুটা হলেও স্বস্তি ফিরছে বাজারে। মৌসুমের শুরুর দিকে রাজশাহীর বাজারে নতুন আলু বিক্রি হয়েছে ৭০ থেকে ৮০ টাকা কেজি দরে। তবে ভরা মৌসুমের এই সময়ে আলুর দাম কমে বৃহস্পতিবার (২৯ ফেব্রুয়ারি) রাজশাহীর বাজারে আলু বিক্রি হয়েছে ১৮ থেকে ২২ টাকা কেজি দরে।

ক্রেতারা বলছেন, রমাজন মাসকে কেন্দ্র করে কোন ব্যবসায়ী যেনো আলুর দাম না বাড়িয়ে দেয়। সেই বিষয়ে বাজার মনিটরিং করতে হবে। আর ব্যবসায়ীরা বলেছেন, আলু পুরোদমে তোলা শুরু হয়েছে। বাজারে আলুর পর্যাপ্ত সরবরাহ রয়েছে। তাই দাম বাড়ানো কোন কারণ নেই।

চাষীরা বলছেন, এবছর শীত আর বৃষ্টিপাতের কারণে আলুর কিছুটা ক্ষতি হয়েছে। শতকরা হিসেবে জমিতে আলুর ২০ থেকে ২৫ শতাংশ গাছ নষ্ট হয়ে গেছে। তারপরেও যে গাছগুলো হয়েছে তাতে আশানরূপ আলুর ফলন আসেনি। ফলে আলু চাষে ফলনের দিক থেকে কৃষক হতাশ হলেও দামের দিক থেকে খুশি তারা।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহী জেলায় এ বছর আলুর চাষ হয়েছে ৩৪ হাজার ৯৫৫ হেক্টর জমিতে। গত বছর জেলায় আলুর চাষ হয়েছিল ৩৬ হাজার ৬৫১ হেক্টর জমিতে। এ বছর আলুর চাষের পরিমাণ কমেছে ১ হাজার ৬৯৬ হেক্টর। এছাড়া রাজশাহী জেলার মধ্যে তানোর উপজেলায় সবচেয়ে বেশি আলুর চাষ হয়। এবার তানোর উপজেলায় আলুর চাষ হয়েছে ১৩ হাজার ১৭০ হেক্টর জমিতে।

জেলা পবা, তানোর ও মোহনপুর উপজেলার ঘুরে দেখা গেছে, চাষী ও ব্যবসায়ীদের জমি থেকে আলু তুলতে ব্যস্ত সময় কাটছে। এলাকাগুলোর জমি থেকে আলু তোলার পরে সেখানেই বস্তা জাত করা হচ্ছে। কেউ কেউ জমিতেই আলু ওজনের ব্যবস্থা রেখেছেন। বেশির ভাগ আলু কাঁচা হওয়ায় সেগুলো বাজার জাত করা হচ্ছে। এছাড়া যাদের আলুর পরিপূর্ণ বয়স হয়েছে তারা কোল্ড স্টোরে রাখছেন। তবে অল্প পরিমানে আলু কোল্ড স্টোরেজে নিয়ে রাখা হচ্ছে। কয়েকদিন পরে তার পরিমান আরও বাড়বে।

চাষী ও ব্যবসায়ী আলমঙ্গীর হোসেন বলেন, এখন যে আলুগুলো তোলা হচ্ছে সেগুলো সরাসরি বাজারে বিক্রি করা হচ্ছে। এগুলো কাঁচা আলু। বেশি দিন রাখা যাবে না। তবে অনেকের আলুর পরিপূর্ণ বয়স হয়েছে। সেই আলুগুলো তুলে কোল্ড স্টোরে রাখছেন অনেকেই। কেউ কেউ ট্রাকে করে বিভিন্ন জেলায় পাঠাচ্ছেন আলু।

তানোর উপজেলার চিমনা গ্রামের চাষী হাবিবুর রহমান বলেন, ৪ বিঘা জমিতে আলু চাষ করেছেন তিনি। তবে তার দাবি এবছর আলু ফলন কম হয়েছে। তার পরেও কয়েকদিনে আলুর দাম কমেছে। তিনি আলু জমি থেকে তুলে কোল্ড স্টোরে রাখছেন। পরে সুবিধা মত সময়ে তিনি আলুর বিক্রি করবেন।

অপর কৃষক জালাল উদ্দিন বলেন, এবার তুলনামূলক শীত বেশি ছিল। শীতের কারণে আলুর অনেক গাছ নষ্ট হয়ে গেছে। বিভিন্ন রোগেও আক্রান্ত হয়েছিল। এরপরে আবার বৃষ্টি হয়েছিল। সবমিলে আলুর কিছুটা ক্ষতি হয়েছে। তবে আশা করছি, এমন দাম থাকলে লাভ হবে।

সবজি বিক্রেতা আনোয়ার হোসেন বলেন, আজ রাজশাহী নগরীর বাজারে আলু বিক্রি হয়েছে ১৮ থেকে ২২ টাকা প্রতি কেজি দরে। এরমধ্যে সাদা আলু ১৮ টাকা ও লাল আলু ২২ টাকা। গত শুক্রবারের তুলনায় আলু প্রতিকেজিতে কমেছে ২ থেকে ৩ টাকা।

আলু ক্রেতা সাব্বির হোসেন বলেন, আলুর দাম কমে ভালো হয়েছে। মানুষের সব তরকারির মধ্যে আলু থাকে। এবছর আলুর দাম কোন কারণ ছাড়ায় এতো বেশি ছিল। এখন আলুর যে দাম তাতে বাজার ভালো আছে। তবে সরকারকে খেয়াল রাখতে হবে রমজানকে কেন্দ্র করে আলুর দাম না বাড়ায় ব্যবসায়ীরা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন কোল্ড স্টোরের ম্যানেজার বলেন, এখনও সেইভাবে কোল্ড স্টোরগুলোতে আলু আসতে শুরু করেনি। এখন জমি থেকে আলুগুলো তোলা হচ্ছে, সেগুলো সাধারণত বিক্রির জন্য। কেউ কেউ আলু উত্তোলন করে কোল্ড স্টোরের রাখছেন। তবে তুলনায় কম। কিছুদিন গেলে আরো চাষী ও ব্যবসায়ীরা কোল্ড স্টোরে আলু রাখবে।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচারক মোজদার হোসেন বলেন, জমি থেকে এখনও আলু সেইভাবে তোলা শুরু হয়নি। তাই এখনও ফলনের বিষয়টি বলা যাচ্ছে না। তবে বাজারে আলুর দাম ভালো আছে। চাষীরা ভালো দাম পাচ্ছে। ৫০ শতাংশ আলু উঠতে ২০ থেকে ২৫ দিন সময় লাগবে। তখন বোঝা যাকে আলুর ফলন কেমন হয়েছে।

এমএস

Link copied!