প্রায় দুই কোটি টাকা ব্যয়ে খাল খননে অনিয়মের অভিযোগ

  • তাড়াশ (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: মার্চ ১৭, ২০২৪, ০২:৪৮ পিএম
প্রায় দুই কোটি টাকা ব্যয়ে খাল খননে অনিয়মের অভিযোগ

তাড়াশ: সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার সগুনা ইউনিয়নের বিন্নাবাড়ি আমতলা কাটা খাল ভায়া কুন্দইল সেতু পর্যন্ত ২ দশমিক ৬ কিলোমিটার খাল খননে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।

বিশেষ করে ওই খাল খননের সময় খালের তলায় গড়ে সাড়ে ছয় ফুট গভীর করে খনন করার কথা থাকলেও তা করা হচ্ছে না বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন।

জানা যায়, ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স আকাশ ট্রের্ডাসের লোকজন খালের দুই পাড়ে ঘাস থাকা মাটি গুলো সেটে এবং খালের তলার মাটি যেনতেন ভাবে খালের পাড়ের উপরে তুলে রেখে দায়সাড়া ভাবে কাজ করছেন। যা দেখতে ভাল লাগলেও শুল্ক মৌসুমে খাল খননের কোন সুফলই স্থানীয় কৃষকরা পাবেন বলে মনে হয় না।

এ দিকে বিন্নাবাড়ি আমতলা কাটা খাল ভায়া কুন্দইল সেতু পর্যন্ত খাল খনন কাজের তদারকি কর্মকর্তা তাড়াশ উপজেলা প্রকৌশল অফিসের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. বাবুল আখতার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, খাল খনন কাজের ত্রুটি থাকায় এবং বর্ষা মৌসুমের পূর্বে কাজ শেষ করার জন্য ওই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে একাধিক বার মৌখিক এবং লিখিত ভাবে জানানো হয়েছে।

তাড়াশ উপজেলা প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ২০২৩-২০২৪ অর্থ বছরে সারাদেশে পুকুর, খাল উন্নয়ন প্রকল্প (১ম সংশোধিত) (আইপিছিপি) প্রকল্পের আওতায় তাড়াশ উপজেলার সগুনা ইউনিয়নে বিন্নাবাড়ি আমতলা-কাটা খাল ভায়া কুন্দইল সেতু পর্যন্ত ২ দশমিক ৬ কিলোমিটার বা ২ হাজার ৬০০ মিটার খাল খনন করা হচ্ছে। এ কাজের প্রাক্কলিত মূল্য ধরা হয়েছিল ১ কোটি ৯৬ লাখ ২৫ হাজার ৩৩৬ টাকা। চুক্তি মূল্য ১ কোটি ৮৬ লাখ ৪৪ হাজার ৬৯ টাকা। এ খালে ১৪ টি রেফারেন্স বেড বøক ও ১৪ টি টেম্পোরারি বেঞ্চ মার্ক নির্মাণ করার কথা রয়েছে। যে কাজটি বর্তমানে চলমান রয়েছে এবং তা বাস্তবায়ন করছেন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স আকাশ ট্রের্ডাস।

সরেজমিনে প্রকল্প এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স আকাশ ট্রের্ডাসের লোকজন কয়েকটি মাটি খনন যন্ত্র এক্সেভেটর (ভেকু মেশিন) দিয়ে বিন্নাবাড়ি আমতলা কাটা খাল ভায়া কুন্দইল সেতু খাল খনন করছেন। কিন্তু খালের তলাদেশের প্রস্থ অনেক কম। যা খালের সাবেক অবস্থার চেয়ে তুলনামুলক সুরু। আবার খালের দুই পাড়ের দুর্বা ঘাস সেটে এবং সামান্য পরিমাণ মাটি ফেলে বক্সার রাখা হচ্ছে। সেটা পরে ড্রেসিং করা হচ্ছে। যাতে লোকজন বুঝতে কাজটি সঠিকভাবে করা হচ্ছে। কিন্তু বাস্তবে সেখানে চলছে খাল খননের নামে ফাঁকিবাজি বলে মন্তব্য করেন বিন্নাবাড়ি এলাকার কৃষক মো. সুরুজ আলী। তিনি বলেন, সরকার শুল্ক মৌসুমে এলাকার হাজার হাজার হেক্টর জমি সেচ সুবিধয়া আনতে প্রায় দুই কোটি টাকা খরচা করে যে উদ্যেশে খাল খনন করছেন। অথচ ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান যেনতেন ভাবে খাল খনন করছেন তাতে এলাকার কৃষকেরা শুল্ক মৌসুমে সেচ সুবিধা পাবেন বলে মনে হয় না।

অবশ্য, বিন্নাবাড়ি ও কুন্দইল এলাকার কৃষক জামিরুল ইসলাম, মহের আলী, মামুন সরকার,  একাধিক কৃষকেরা ওই খালের ভাটিতে শূল্ক মৌসুমে চাষাবাদের জন্য পানি ধরে রাখতে একটি রাবার ড্যাম স্থাপনেরও দাবী জানিয়েছেন।

অপর দিকে চলনবিল রক্ষা আন্দোলনের সদস্য সচিব এসএম মিজানুর রহমান বলেন, চলনবিলের উন্নয়ন করতে হলে সামগ্রিকভাবে করতে হবে। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশে কাজ করলে সুফল মিলবে না। মানুষের কোন উপকারও হবে না। শুধু মাত্র প্রকল্প বাস্তবায়নকারীরাই লাভবান হবেন।

আর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স আকাশ ট্রের্ডাসের সত্ত্বাধিকারী মো.আনোয়ার হোসেন জানান, ব্যস্ততার কারণে আমি বিন্নাবাড়ী আমতলা কাটা খাল ভায়া কুন্দইল সেতু খাল খনন করা দেখতে যেতে পারিনি। যদি সেখানে কাজের কোন ক্রটি থাকে তবে তা অবশ্যই নিরসন করা হবে। আর সিডিউল মোতাবেক কাজ না করলে এলজিইডি আমাকে বিলও দেবে না। যেহেতু কাজ এখনও শেষ হয়নি বা কাজ বুঝেও দেওয়া হয়নি তাই তা সংশোধনের সুযোগও রয়েছে।

এ প্রসঙ্গে সিরাজগঞ্জ জেলা প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো.শফিকুল ইসলাম বলেন, এ কাজের সাথে জড়িত কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে সব জেনে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার হবে। 

এমএস

Link copied!