লক্ষ্মীপুর: ‘ইফতার হাতে করে এসেছিল দুই যুবক। স্থানীয়রা কেউই তাদের চেনে। তবুও এমনভাবে এসেছিল তারা কেউই আঁচ করতে পারেনি তারা স্থানীয় নয়। মাগরিবের আজানের সময় একটি নিরাপত্তা দেওয়ালের ওপর বসে দু’জনই ইফতার করে। এর পরই তারা দুইজন চুরি করতে ঢুকে সহকারী পুলিশ পরিদর্শক (এএসআই) হুমায়ুন বাশারের ঘরে। একপর্যায়ে স্থানীয় এক নারী দেখে ফেলায় তারা পালিয়ে যায়। তাদের ধাওয়া করলেও ধরা সম্ভব হয়নি’।
রোববার (১৭ মার্চ) সকালে লক্ষ্মীপুর শহর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ জহিরুল আলম ও স্থানীয়রা সাংবাদিকদের বিষয়টি জানিয়েছেন।
এরআগে শনিবার (১৬ মার্চ) সন্ধ্যায় লক্ষ্মীপুর পৌরসভার ১২ নম্বর ওয়ার্ডের আবিরনগর এলাকায় দেওয়ান বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে। স্থানীয় একটি ক্লোজ সার্কিট (সিসি) ক্যামেরার ফুটেজে দেখা যায় তারা পলিথিনে করে ইফতার নিয়ে ঘটনাস্থল যাচ্ছে।
এদিকে ১৪ মার্চ রাতে একই এলাকায় দক্ষিণ আফ্রিকান প্রবাসী রায়হান মাহমুদ ও ফোরকান মাহমুদদের বাড়িতে ঢুকে একদল মুখোশদারী প্রায় ৭ ভরি স্বর্ণালংকার, ৬০ হাজার টাকা ও ৩ টি মোবাইল নিয়ে যায়। ঘরে থাকা সবাইকে বন্দুক ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে জিম্মি করে ঘটনাটাটি ঘটনানো হয়। যাওয়ার সময় সবাইকে বেঁধে রেখে যায় মুখোশধারীরা। পরদিন পরিবারের সদস্য ইমরান হোসেন সদর মডেল থানায় ডাকাতির ঘটনায় মামলা করতে চাইলেও পুলিশ চুরি বলে অভিযোগ নিয়েছে। তবে এখনো পর্যন্ত কাউকে আটক করতে পারেনি পুলিশ।
পুলিশের এএসআই হুমায়ুন বাশার খাগড়াছড়িতে কর্মরত রয়েছেন। এ ব্যাপারে বক্তব্য জানতে তাকে একাধিকবার কল করলেও তিনি রিসিভ করেননি। তার স্ত্রীও গণমাধ্যমে বক্তব্য দিতে রাজি হচ্ছেন না।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, শুক্রবার সন্ধ্যায় হুমায়ুন বাশারের স্ত্রী ফারজানা আক্তার সন্তানদের নিয়ে তার বাবার বাড়ি কমলনগর উপজেলার চরফলকন ইউনিয়নের বেড়াতে যান। যাওয়ার সময় প্রতিবেশী রোকেয়া বেগমকে ঘরের চাবি দিয়ে যান। শনিবার (১৬ মার্চ) ইফতারের পর তিনি পুলিশ কর্মকর্তার ঘরের প্রধান ফটকের তালা খুলে ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করেন। কিন্তু ভেতর থেকে বন্ধ থাকায় ঢুকতে পারছিলেন না। পরে প্রধান ফটকের বাইরে থেকে তিনি দেখতে পান দুই যুবক বাসায় ঢুকেছে। এসময় চিৎকার চেচামেচি করলে আশপাশের লোকজন জড়ো হতে থাকে। একপর্যায়ে ওই দুই যুবক নিরাপত্তা দেওয়াল লাফিয়ে পালিয়ে যায়। তাদেরকে ধরার চেষ্টা করে রোকেয়ার ছেলে রিফাত। এসময় তাকে আঘাত করে ও অস্ত্র দেখিয়ে পালিয়ে যায় দুই চোর।
স্থানীয় একটি সিসি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা যায়, দুই যুবক হেটে আসছে। এরমধ্যে একজনের হাতে পলিথিন ভর্তি ইফতার। পরে তারা ইফতারও করেও। তারা পালিয়ে যাওয়ার পর পুলিশ কর্মকর্তার বাসার নিরাপত্তা দেওয়ালের সঙ্গে ইফতারের পলিথিন ঝুলতে দেখে স্থানীয়রা।
লক্ষ্মীপুর শহর পুলিশ ফাঁড়ির (ইনচার্জ) জহিরুল আলম সাংবাদিকদের বলেন, খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। বাড়িটি খালি থাকায় ঘটনাটি ঘটেছিল।
লক্ষ্মীপুর সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইফুদ্দিন আনোয়ার বলেন, ঘটনাটি শুনেছি। তবে এখনো পর্যন্ত কেউ থানায় অভিযোগ করেননি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তিনি আরও বলেন, ১৪ মার্চের ঘটনায় পুলিশ কাজ করছে। এখনো কাউকে আটক করা সম্ভব হয়নি। ওই ঘটনা ডাকাতি নয়, চুরির ঘটনা ছিল। খুব শিগগিরই জড়িতদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা হবে।
এমএস
আপনার মতামত লিখুন :