যশোর: যশোরের মণিরামপুরে আব্দুল মালেক নামে একজন সহকারী শিক্ষকের বিরুদ্ধে জাল শিক্ষক নিবন্ধন সনদে চাকরি করার অভিযোগ উঠেছে। তিনি জাল সনদে নিয়োগ নিয়ে ১৪ বছর সরকারি কোষাগার থেকে বেতন-ভাতা উত্তোলন করেছেন। এনিয়ে আদালতে মামলা দায়ের করেন জুলফিক্কার আলী নামে এক ব্যক্তি। তদন্ত বেরিয়ে আসে আব্দুল মালেকের শিক্ষক সনদটি জাল। পরে তিনি মাদরাসা থেকে পদত্যাগ করে অন্য একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সহকারী প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেছেন। এনিয়ে শিক্ষক মহলে তোড়পাড় শুরু হয়েছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০১০ সালের ১৫ ডিসেম্বর আব্দুল মালেক উপজেলার ‘খেদাপাড়া গাংগুলিয়া ফাজিল মাদরাসার সহকারী শিক্ষক (কৃষি) হিসেবে যোগদান করেন। ২০০৯ সালে পাস দেখানো শিক্ষক নিবন্ধন সনদে রোল নম্বর ৩১৯১২৫৭১। যোগদানের পর থেকে দাখিলকৃত নিবন্ধন সনদটি নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়। এনিয়ে খেদাপাড়া গ্রামের মৃত মকছেদ আলী সরদারের ছেলে জুলফিক্কার আলী আদালতে একটি মামলা করেন। মামলার তদন্তের দেওয়া হয় মণিরামপুর থানায়। তৎকালীন থানার উপ-পরিদর্শক সৈয়দ আজাদ আলী ২০২০ সালে ৫ জুলাই তারিখে আদালতে একটি প্রতিবেদন দাখিল করেন।
দাখিলকৃত প্রতিবেদন উল্লেখ করা হয়, সহকারী শিক্ষক আব্দুল মালেক এনটিআরসি’র যে সনদটি নিজের দাবি করছেন সেটি তার নয়। ৩১৯১২৫৭১ এই রোল নম্বরের সনদের প্রকৃত মালিক বগুড়ার সাইদুর রহমানের ছেলে আইয়ুব আলী। অথচ, আব্দুল মালেক ওই রোল নম্বর ব্যবহার করে শিক্ষক নিবন্ধন সনদ ভূয়া তৈরি করে চাকরি করে আসছেন। তিনি গত ঈদুল ফিতর আগ পর্যন্ত খেদাপাড়া গাগুলিয়া ফাজিল মাদরাসা হতে সরকারি বেতন বোনাস উত্তোলন করেছেন। চলতি মাসের ১ তারিখ তিনি ওই মাদরাসা থেকে পদত্যাগ করেছেন। অবশ্য,শিক্ষক নিবন্ধনটি সঠিক বলে মুঠোফোনে দাবি করেছেন অভিযুক্ত আব্দুল মালেক।
খেদাপাড়া গাগুলিয়া ফাজিল মাদরাসার অধ্যক্ষ ছায়াদাত হোসেন বলেন, শিক্ষক আব্দুল মালেক সম্প্রতি মাদরাসার সহকারী শিক্ষক পদ থেকে পদত্যাগ করে অন্যত্র চলে গেছেন। এক প্রশ্নের জবাবে অধ্যক্ষ বলেন, সনদ নিয়ে বিভিন্ন ধরনের কথা শুনেছি। তবে, কখনো যাচাই করে দেখিনি।
খোঁজখবর নিয়ে জানাগেছে, মামলাটি আদালতে বিচার প্রক্রিয়ায় যাওয়ার পর বাদীর সঙ্গে মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে আপস মীমাংসা করে বাদী মামলাটি প্রত্যাহার করেন।
এদিকে, অভিযোগ উঠেছে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে আব্দুল মালেককে গত বছরের ডিসেম্বর মাসে বোয়ালিয়াঘাট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সহকারী প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদান দেখানো হয়েছে। এনিয়েও একটি পক্ষ অভিযোগ তুলছেন। বিদ্যালয়ের কোনো শিক্ষক মুখ খুলছেন না।
তবে, ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কুদ্দুস আলম যোগদানের বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে বলেন, বর্তমান এমপি মহোদয় আব্দুল মালেকের বিষয়টি জানেন।
মণিরামপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার বিকাশ চন্দ্র সরকার বলেন, সনদটি যাচাই পূর্বক ভূয়া প্রমাণিত হওয়ায় নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ করা হয়নি। তবে পরবর্তীতে কি হয়েছে, সেটি জানার সুযোগ হয়নি।
এসআই
আপনার মতামত লিখুন :