মধ্যরাত থেকে অবরোধ শুরু

নিষেধাজ্ঞার ৬৫ দিন কী খাবে জেলেরা?

  • তাপস মাহমুদ, বরগুনা | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: মে ১৯, ২০২৪, ০৬:২৫ পিএম
নিষেধাজ্ঞার ৬৫ দিন কী খাবে জেলেরা?

ফাইল ছবি

বরগুনা: মাছের প্রজনন ও উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে সাগরে মাছ শিকারে প্রতিবছরের ন্যায় এ বছরও ৬৫ দিনের অবরোধ শুরু হচ্ছে আজ মধ্যরাত থেকে। আগামী ২০ মে থেকে শুরু হয়ে ২৩ জুলাই পর্যন্ত চলবে ৬৫ দিনের এই অবরোধ। অবরোধের ৬৫ দিন কর্মহীন হয়ে যাচ্ছে উপকূলীয় অঞ্চল বরগুনার পাথরঘাটা, তালতলী ও সদর উপজেলার হাজার হাজার জেলে। দুইমাস কর্মহীন হয়ে যাওয়ার আতঙ্কে কপালে চিন্তার ভাজ তুলে অন্ধকার দেখছে জেলে পল্লীর জেলে পরিবার গুলো। 

আজ ১৯মে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মৎস বিপনন কেন্দ্র পাথরঘাটা উপজেলার বিভিন্ন স্থানে গিয়ে দেখা গেছে জেলে পল্লীতে জেলেসহ জেলে পরিবার গুলোতে কর্মহীন হয়ে যাওয়ার চিন্তা বিরাজ করছে। এবছর আবহাওয়ার কারণে জেলেদের জালে তেমন মাছ না পড়ায় লোকসানের বেড়াজালে পড়ে মহাজনের টাকা, বিভিন্ন এনজিও থেকে ঋণের টাকা পরিশোধের পাশাপাশি পরিবার পরিজন নিয়ে কিভাবে দিন কাটাবে এই ৬৫ দিন, সেই চিন্তায় আঁধারে আচ্ছন্ন হয়ে যাচ্ছে তাদের সকল উৎসাহ উদ্দীপনা ও কর্মচাঞ্চল্য।  

বরগুনার পাথরঘাটায় উপজেলায় জেলের সংখ্যা প্রায় ৩০ হাজার। এদের মধ্যে সমুদ্রগামীসহ সকল  জেলারাই ৬৫ দিনের জন্য কর্মহীন হয়ে পড়বে। পাথরঘাটায় সরকারি নিবন্ধিত ১১ হাজার ৪১১ জন জেলে। অবরোধের ৬৫ দিনের জন্য ১১ হাজার ৪১১ জন জেলে সরকারি সহায়তা পাবে ৮৬ কেজি চাল । অথচ সরকারি হিসাব মতে জেলায় প্রকৃত জেলেদের তালিকা সাতাশ হাজার দুই শত পঞ্চাশ জন।

বরগুনা জেলা মৎস্য কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বরগুনা জেলার পাথরঘাটা উপজেলায় সবচেয়ে জেলের সংখ্যা বেশি। সেখানে নিবন্ধিত জেলের পরিমাণ চৌদ্দ হাজার একশত ছিয়াত্তর জন। এরপরে বরগুনা সদর উপজেলায় আট হাজার নয় শত বাইশ জন, আমতলী উপজেলায় সাত হাজার আটশত চুয়ান্ন জন। সবচেয়ে কম বামনা উপজেলায়। এখানে নিবন্ধিত জেলের পরিমাণ নয় শত একজন। এবিষয় সংশ্লিষ্টরা বলছেন প্রকৃত জেলের সংখ্যা প্রায় পয়ত্রিশ হাজারোর বেশি। 

সাগর থেকে ঘুরে আসা জেলে হেলাল মিয়া বলেন, অবরোধের ৬৫ দিনে আমরা ৮৬ কেজি চাল পেয়ে থাকি। এই ৮৬ কেজি চাল দিয়ে সংসার চলে না। চালের পাশাপাশি নগদ টাকা দিলে অন্যান্য বাজারও করা যেত। শুধু চাল দিয়েতো আর পেট ভরবে না। আাঃ রহিম নামের এক জেলে বলেন, সামনের ৬৫ দিনের কথা চিন্তা করলে এখন থেকে চোখের সামনে সবকিছু অন্ধকার দেখি। আর চিন্তা করি এই অন্ধকারের ৬৫ দিন কবে যে কাটবে।  এই সময়ের এক একটি দিন মনে হবে মাসের সমান। বর্তমান সময়ে নদীত ও সাগরে  তেমন মাছও নেই যে পুঁজি করে কিছু টাকা রাখবো এই ৬৫ দিনের জন্য। ধার দেনা করে জীবন চলে। আর অন্য কোন কাজের ব্যবস্থা নেই যে ৬৫ দিন করে খাব। এই জেলে বলেন, আমরা এই সময় না খেয়ে কষ্টের দিন কাটাবো কিন্তু ভারতীয় ট্রলার ঠিকই এই সময়ে তারা মাছ ধরছে । ও মাছ বিক্রি করে টাকা পাবে ।

বরগুনা জেলা মৎস্যজীবী ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী বলেন, ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞায় আমাদের এলাকার জেলেদের কষ্টে কাটবে দিন । ভারত-বাংলাদেশ একই সময়ে সাগরে মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা জারি করা হোক। জেলেদের এই ৬৫ দিনের জন্য বিকল্প কোন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে দেয়ার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানান তিনি। 

বরগুনা জেলা মৎস কর্মকর্তা মোঃ মহসিন  বলেন, মাছের প্রজনন ও উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে সরকার আজ মধ্যরাত থেকে এই নিষেধাজ্ঞা জারি করবে। জেলার নিবন্ধিত জেলেদের এই নিষেধাজ্ঞার ৬৫ দিনের জন্য ৮৬ কেজি চাল দেয়া হবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন নিবন্ধনের বাইরে থাকা জেলেদের তালিকা প্রস্তুত করতে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে তালিকার কাজ চলছে। এ ছাড়া সরকারিভাবে অন্য কোন সহায়তা বৃদ্ধি করলে তা আমরা জেলেদের কাছে পৌঁছে দেব। 

এমএস

Link copied!