মোর বাবায় পোলায় মোরে ঢাকা নিতে পারলো না, মাটির নিচে ঘুইয়া রইছে

  • বরিশাল প্রতিনিধি | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: আগস্ট ৪, ২০২৪, ১০:১৬ পিএম
মোর বাবায় পোলায় মোরে ঢাকা নিতে পারলো না, মাটির নিচে ঘুইয়া রইছে

বরিশাল:  সংসারে অভাব অনটনের কারণে মোগো একমাত্র ছেলেকে লেখা পড়া করাতে পানি নাই। পরিবারে বৃদ্ধা শ্বশুর ও শ্বাশুরি সহ ৬ জনে পরিবার। মোর স্বামীর মাসে বার হাজার টাকায় একটি স্কুলে রাতে পাহারার কাজকরে। তার একার আয় দিয়ে মোগো পরিবার বহুকষ্টে চলে আসছে। মোগো কষ্টদেখে। মোগো ছেলে দুই মাস আগে কাজের জন্য ঢাকা গিয়ে ধানমন্ডি এলাকায় একটি চায়ের দোকানে কাজ করে।

দোকান বন্ধকরে মোগো ছেলেটা বাসায় জাবার সময় দুই পায়ে গুলি লাগে। মোরা ৪ দিন পরে খবর পাইয়া পঙ্গু হাসপাতালে যাইয়া দেখি তারে চিকিৎসা না করে হাসপাতালের ফ্লোরে ফেলে রাখে। মোর পোলায় মোরে ঢাকায় নেবে। মোর বাবায় (পোলায়) মোরে ঢাকা নিতে পারলো না। মোর বাবায় মাটির নিচে ঘুইয়া রইছে।

একমাত্র ছেলে হারিয়ে পাগল প্রায় মা আমবিয়া বেগম আহাজারি করে কথাগুলো বলেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ঢাকায় ধানমন্ডি এলাকায় গুলিতে নিহত হয় তার ছেলে ধানমন্ডি এলাকার চায়ের দোকানে কর্মচারী সাগর হাওলাদার (১৬)। সে বরিশাল জেলার আগৈলঝাড়া উপজেলার বাগধা ইউনিয়নের দাসপাড়া গ্রামের দরিদ্র মো. নূরুল হক হাওলাদার ও আমবিয়া বেগমের ছেলে। 

পরিবার সূত্রে জানা গেছে, বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার বাগধা ইউনিয়নের দাসপাড়া গ্রামের বাগধা মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নৈশ প্রহরী নুরুল হক হাওলাদারের ছেলে সাগর হাওলাদার। ৬ জনের সংসার কোন রকমে টানা পোড়নের মধ্য দিয়ে চলছিল। যার জন্য ছেলে সাগর হাওলাদার (১৬) সংসারের স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে আনার জন্য দেড়মাস পূর্বে ঢাকা গিয়ে ৩২নং ধানমন্ডির লেকপাড়ে চায়ের টং দোকানে ৭ হাজার টাকা বেতনে কাজ নেয়। 

কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালে ২৩ জুন সন্ধ্যার দোকান বন্ধ করে রায়েবাজার তার বাসায় যাবার সময় সাগরে দু-পায়ে গুলি বৃদ্ধ হয়। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে ভর্তি করেন।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ প্রাথমিক চিকিৎসা দিলেও গুলি বৃদ্ধ সাগরের কোনো অভিভাবক না থাকায় তাকে উন্নত চিকিৎসা দেয়নি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তিনদিন পর ২৬ জুলাই সাগরের জ্ঞান ফিরে আসলে কর্তব্যরত নার্সরা তার নামঠিকানা জানতে পেয়ে সাগরের গ্রামের বাড়ির পিতা-মাতাকে মোবাইল ফোনে সংবাদ দেন। সড়ক যোগাযোগ বিছিন্ন থাকার কারণে সাগরের পিতা-মাতা ঢাকায় যেতে বিলম্ব ঘটে। ২৭ জুলাই সাগরের দরিদ্র পিতা নুরুল হক হাওলাদার ও মা আমবিয়া বেগম পঙ্গু হাসপাতালে সাগর হাওলাদারের গুলি বৃদ্ধ পায়ে  মুমুর্ষ অবস্থা। 

অতিরিক্ত রক্তক্ষরনেন ফলে সাগর হাওলাদারের শারীরিক অবস্থান অবনতি ঘটে। তারা একটি পা কেঁটে ফললে ২৭ জুলাই রাত ১০টার দিগে সাগর  মৃত্যুর কোলে ঢলে পরে। গুলিতে নিহত সাগরের লাশ ২৮ জুলাই বিকেলে গ্রামের বাড়িতে আসলে তার বৃদ্ধ দাদা মজিদ হাওলাদার (৮০), দাদী রহিমা বেগম (৬৫) ও ৫ম শ্রেনী পড়-য়া একমাত্র বোন মরিয়ম খানম (১২) কারদ্ধি হয়ে পরে। পরে সাগর হাওলাদারের লাশ নিজ বাড়ির বসত ঘরের পূর্ব পাশের দাফন করা হয়।

সাগরের দরিদ্র পিতা বিদ্যালয়ের নৈশ প্রহরী নুরুল হক হাওলাদার জানান, আমার ১ ছেলে ১ মেয়ে, বৃদ্ধ বাবা-মাসহ ৬ জনের সংসার। আমি যে বেতন পাই তাইদেয়ে সংসার চালিয়ে ছেলে মেয়ের লেখা পড়া চালাতে পারি না। আমার ছেওে সাগর ৫ম শ্রেণী পর্যন্ত লেখা পড়া করছে। আমার কষ্টদেখে ছেলে (সাগর) সংসারের হাল ধরার জন্য ঢাকায় গিয়ে চায়ের দোকানে কাজ নেয়। কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালে ২৩ জুন সন্ধ্যার পরে দু-পক্ষের সংঘর্ষের মাঝে পরে দু-পায়ে গুলি বৃদ্ধ হন সাগর। তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ যদি সঠিকভাবে চিকিৎসা সেবা দিত তাহলে হয়ত সাগর বেচে যেত। একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে আমার পরিবার নিঃশ্ব হয়ে গেছি। এখন আমি কি নিয়ে বাঁচবো-?। 

এ ব্যাপারে আগৈলঝাড়া উপজেলার বাগধা ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম বাবু ভাট্রি সাংবাদিকদের বলেন, সাগর দরিদ্র পরিবারের সন্তান। ঢাকায় কাজ করতে গিয়ে গুলি বৃদ্ধ হয়ে মারা যান। তার পরিবারকে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে সার্বিক সহযোগীতা করা হবে। 

বরিশাল আগৈলঝাড়া থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো.আলম চাঁদ বলেন, দরিদ্র  বিদ্যালয়ের নৈশ প্রহরী নুরুল হক হাওলাদারের ছেলে সাগর হাওলাদার গুলিতে মারা গেছে এই সংবাদ আকে কেউ জানানাই।

এআর

Link copied!