মৃত্যুর ৩৬ দিন পর 

বাবা হলেন আন্দোলনে নিহত স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা, পরিবারের পাশে জামায়াত

  • জেলা প্রতিনিধি | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১০, ২০২৪, ১০:০৭ এএম
বাবা হলেন আন্দোলনে নিহত স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা, পরিবারের পাশে জামায়াত

স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা রুবেলের মায়ের কোলে তার নবজাতক। ছবি: সংগৃহীত

কুমিল্লা: বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গত ৪ আগস্ট কুমিল্লার দেবিদ্বারে গুলিতে নিহত হন উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা আবদুর রাজ্জাক রুবেল। তাঁর মৃত্যুর মাত্র এক মাসের ৫ দিনের মধ্যেই ফুটফুটে এক পুত্রসন্তানের জন্ম দিয়েছেন রুবেলের স্ত্রী হ্যাপি আক্তার।  সোমবার (৯ সেপ্টেম্বর) রাত ৮টার দিকে দেবিদ্বার উপজেলা সদরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে সন্তানের জন্ম দেন তিনি। দরিদ্র পরিবারের রুবেল বাস চালিয়ে সংসার চালাতেন। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম মানুষটির মৃত্যুতে এমনিতেই ভবিষ্যৎ চিন্তায় দিশেহারা পরিবার। এখন পৃথিবীতে এসেছে তাঁর সন্তান। ফলে অসহায় পরিবারের দায়িত্ব এখন কে নেবে, তা নিয়ে রাজ্যের শঙ্কা চেপে বসেছে হ্যাপি আক্তারের মনে।

তবে আশার খবর হলো রুবেলের পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামি।ৎ

কুমিল্লা উত্তর জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি মু. সাইফুল ইসলাম শহীদ বলেন, দেশের জন্য শহীদ রুবেলের আত্মত্যাগ বিফলে যায়নি। তার আত্মত্যাগের বিনিময়ে স্বৈরাচারী হাসিনার পতন হয়েছে। বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামী চেষ্টা করেছে শহীদ রুবেলের পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর। এরই অংশ হিসেবে তার স্ত্রীর সিজার অপারেশন ও ওষুধপত্রের যাবতীয় খরচ বহন করেছে। ভবিষ্যতেও রুবেলের পরিবারের পাশে থাকবে জামায়াত।

রুবেলের শ্যালক মো. সৈকত হোসেন বলেন, সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে ভাগনের জন্ম হয়েছে। আমার বোন ও ভাগনে সুস্থ আছেন। আমরা খুবই টেনশনে ছিলাম খরচ নিয়ে। কিন্তু জামায়াত ইসলামীর পক্ষ থেকে সকল খরচ বহন করা হয়েছে।’

পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সন্তান ভূমিষ্টের পর নাম ‘রাইয়ান’ রাখবেন বলে ঠিক করেছিলেন গুলিতে নিহত রুবেল। তখন তার স্ত্রী হেপী আক্তার নয় মাসের অন্তঃস্বত্তা ছিলেন। পুত্রসন্তানের জন্মের পর বাবার অসিয়ত অনুযায়ী সন্তানের নাম রাখা হয়েছে ‘রাইয়ান’। যার বাংলা অর্থ জান্নাতের দরজা।

পরিবার সূত্রে জানা গেছে, বাবা রফিকুল ইসলামের মৃত্যুর পর সংসারের হাল ধরেন একমাত্র ছেলে রুবেল। তিনি পেশায় বাসচালক ছিলেন। ছিলেন দেবিদ্বার পৌর স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক। তার নৌফা নামে ছয় বছরের একটি কন্যাসন্তানও আছে।

রুবেলের বৃদ্ধা মা হোসনেয়ারা বেগম বলেন, ‘আমার ছেলে আইজ বাঁইচ্ছা থাকলে কত খুশি হইতো! কপালপোড়া নাতিডা জন্মের পর তার বাবার মুখটা দেখতে পারল না! বড় হইয়া বাবারে খুঁজলে আমি কী জবাব দিমু? এখন এই সন্তানের দায়িত্ব নেবো কে?’

রুবেলের স্ত্রী হেপী আক্তার বলেন, ‘আমার স্বামীর ইচ্ছে ছিল ছেলে হলে ‘রাইয়ান’ নাম রাখবেন। নাম রাইয়ানই রাখা হয়েছে। আমার একটি সুখী পরিবার ছিল। একটি গুলিতে সব নিভে গেলো। সন্তানের মুখ দেখে যেতে পারলো না তার বাবা। আমার স্বামীর কী অপরাধ ছিল? কেন তাকে গুলি করলো?’ 

প্রসঙ্গত, গত ৪ আগস্ট দুপুরে দেবিদ্বার উপজেলা সদরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালে আক্রমণ চালায় দুর্বৃত্তরা। ওই সময় দেবিদ্বার আজগর আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের সামনে আবদুর রাজ্জাক রুবেলকে প্রথমে গুলি পরে রামদা দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয়।

এম

Link copied!