বরগুনা: দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র বরগুনার পাথরঘাটায় শত শত ট্রলার ভর্তি ইলিশ নিয়ে বিক্রি উদ্দেশ্যে আসছে জেলেরা। এখান থেকে শত শত মন ইলিশ কিনে নিচ্ছে পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীরা।
তবে ইলিশ কিনে নিয়ে বিভিন্ন বাজারে ব্যবসায়ীরা ইচ্ছে মত দাম হাকাচ্ছেন। যত ব্যবসায়ীদের হাত পরিবর্তন হচ্ছে, ততই ইলিশের দাম বাড়ছে। তিন থেকে চার হাত বদলে পাল্টে প্রতি কেজিতে ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা বেড়ে যাচ্ছে। রপ্তানি বন্ধ হলেও হাত বদলের কারণে সাধারণ ক্রেতা ইলিশ কিনছেন ১ হাজার ৮০০ থেকে ২ হাজার টাকায়।
শনিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে এক কেজি সাইজের ইলিেশর মণ বিক্রি হয়েছে ৬৫ থেকে ৬৬ হাজার টাকায়, মাঝারি সাইজের ইলিেশর মণ ৫৪ থেকে ৫৫ হাজার টাকা এবং জাটকা ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা মণ দরে বিক্রি হয়েছে।
ইলিশ ক্রেতা রহিম বলেন, জাতীয় মাছের অভয়ারণ্য যে দেশে, সেখানে মাছটির দাম এত হবে কেন? বাজার থেকে ইলিশ কিনে খাওয়াটা একটা স্বপ্নের মত।১ কেজি ওজনের একটি ইলিশ যদি ২ হাজার টাকায় কিনতে হয় তাহলে মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত মানুষের কাছে সেটি স্বপ্ন।
ইলিশ বিক্রেতাদের সাথে কথা বললে তারা জানান, মৎস্য ঘাট থেকে আমাদের অনেক দামে ইলিশ কিনতে হয়। এখান থেকে ঢাকা অথবা অন্য কোনো জেলায় নিতে বরফ, প্যাকেটিং খরচ, পরিবহনসহ নানা খরচ রয়েছে।
ইলিশের দাম বৃদ্ধির কারন জানতে চাইলে এক ব্যবসায়ী জানান, এই বদলকারি মধ্যস্বত্বভোগীদের কারণেই নিয়ন্ত্রণে আসছে না ইলিশের দাম। এক কেজির একটি ইলিশ জেলেদের কাছ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকায় কিনে পাইকাররা বিক্রি করছেন ১ হাজার ৫৭৫ টাকায়। তারা আবার আরও ৭৫ টাকা বাড়িয়ে বিক্রি করছেন বিভিন্ন জেলা থেকে আসা ব্যবসায়ীর কাছে। এভাবে অন্তত ৪ থেকে ৫ হাত ঘুরে ইলিশ পৌঁছায় ক্রেতার হাতে।এই সকল ইলিশ দেখা যায় বিভিন্ন বাজারে ২ হাজার থেকে ২ হাজার ২০০ টাকা বিক্রি হয় ।
বেশি দামে ইলিশ বিক্রি কারণ জানতে চাইলে ট্রলার মালিকরা জানান, ৩ থেকে ৪ বছর আগে একটি ট্রলার সাগরে পাঠাতে গেলে আমাদের খরচ হতো এক লাখ ৮০ হাজার থেকে দু্ই লাখ টাকা। কিন্তু বর্তমান সময়ে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য সহ সকল দ্রব্যের দাম বৃদ্ধি থাকার কারণে এখন প্রায় খরচ হচ্ছে লাখের অধিক টাকা। এই সকল কারণে বেশি দামে ইলিশ বিক্রি করলেও লোকসান হচ্ছে অনেক ট্রলার মালিকের।
জেলা মৎস্যজীবী ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী জানান, যে পরিমাণ ইলিশের চাহিদা, তার থেকে অনেক কম ধরা পড়ছে। এ ছাড়া তেল, মাছ ধরার সরঞ্জামাদির মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। এসব কারণে দাম কমছে না।
অবতরণ কেন্দ্রের (বিএফডিসি) হিসাব অনুযায়ী, গত ২৪ জুলাই থেকে ১১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এ অবতরণ কেন্দ্রে ইলিশ কেনাবেচা হয়েছে ৪৪৩ দশমিক ৬৮ টন। গত বছরে একই সময়ে ইলিশ কেনাবেচা হয়েছে ৪৯৩ দশমিক ১৫ টন, যা গত বছরের তুলনায় ৪৯ দশমিক ৪৭ টন কম। একই সময়ে এ বছর অন্যান্য মাছ কেনাবেচা হয়েছে ১৭৩ দশমিক ৩৩ টন। ২০২৩ সালের একই সময়ে অন্যান্য মাছ কেনাবেচা হয়েছে ২৫৮ দশমিক ৬২ টন।
পাথরঘাটা বিএফডিসির সহকারী মার্কেটিং অফিসার বিপ্লব কুমার সরকার বলেন, ইলিশ দিয়ে মানুষ নানা উৎসব পালন করেন। ফলে সারাদেশেই ইলিশের চাহিদা রয়েছে। অন্যদিকে সাগর এবং নদীতে নিষিদ্ধ জাল ব্যবহার করে ইলিশ বড় হওয়ার আগেই নিধন করা হচ্ছে। বিভিন্ন সিন্ডিকেটের কারণে পাইকারি বাজারের চেয়ে খুচরা বাজারে বেশি দামে ক্রেতাদের কিনতে হচ্ছে। তাই রপ্তানি বন্ধ হলেও ইলিশের দাম কমার সম্ভাবনা খুবই কম।
এসএস
আপনার মতামত লিখুন :