অপহরণ নয়, প্রেমের টানেই মুসলিম প্রেমিকের সাথে ঘর ছেড়েছিলো হিন্দু কিশোরী

  • কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২০, ২০২৪, ০৭:০৩ পিএম
অপহরণ নয়, প্রেমের টানেই মুসলিম প্রেমিকের সাথে ঘর ছেড়েছিলো হিন্দু কিশোরী

কুড়িগ্রাম: কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার কাশিপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ অনন্তপুর গ্রামের হিন্দু ধর্মাবলম্বী এক কিশোরীকে অপহরণের অভিযোগ ওঠার পর প্রেমিকসহ কিশোরীকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার রাতে জেলার নাগেশ্বরী উপজেলা থেকে তাদের উদ্ধার করা হয়। ফুলবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নওয়াবুর রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

এদিকে উদ্ধারের পর ওই কিশোরী ও তার প্রেমিককে আদালতে সোপর্দ করেছে পুলিশ। শুক্রবার (২০ সেপ্টেম্বর) কুড়িগ্রাম সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ফারহানা খানের আদালতে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ২২ ধারায় জবানবন্দিও দিয়েছে ওই কিশোরী। জবানবন্দিতে সে অপহরণের শিকার হওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছে, চার বছরের প্রেমের সম্পর্ক। তাই, বাবা ও পরিবারের হাত থেকে মুসলিম প্রেমিকের জীবন বাঁচাতে স্বেচ্ছায় পালিয়ে বিয়ে করেছে সে।

এর আগে গত বুধবার বিকেলে দশম শ্রেণি পড়ুয়া ওই কিশোরীকে (১৭) ‘ঘোষণা দিয়ে অপহরণের’ অভিযোগ ওঠে একই গ্রামের বাসিন্দা আলিনুরের (৩৫) বিরুদ্ধে। পরদিন বৃহস্পতিবার ফুলবাড়ী থানায় নারী অভিযোগ দায়ের করেন কিশোরীর বাবা।

অভিযোগপত্র থেকে জানা যায়, ওই গ্রামের অর্জুন চন্দ্র সেনের মেয়ে (১৫) অনন্তপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী। বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) বিকাল ৫ টার দিকে কোচিং সেন্টারে যাওয়ার পথে একই গ্রামের মৃত আব্দুল হালিমের ছেলে আলিনুর রহমান (৩৫) ও তার সহযোগীরা মেয়েটিকে অপহরণ করে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যায়। এর আগে গত ২ অথবা ৩ সেপ্টেম্বর ওই গ্রামের রাস্তার একটি গাছে কে বা কাহারা হাতে লেখা একটি ছোট পোষ্টার টাঙ্গিয়ে দেয়। পোষ্টারে লেখা ছিল ‘এই বাড়ির মেয়েকে তুলে নিয়ে যাওয়া হবে এবং মুসলমান বানানো হবে।’ এ ঘটনায় গত ৪ সেপ্টেম্বর ওই এলাকার রনজিত চন্দ্র সেন ফুলবাড়ী থানায় একটি সাধারণ ডায়রি (জিডি) করেন।

এদিকে বাবা অপহরণের কথা বললেও, উদ্ধার হওয়া কিশোরী বলছেন ভিন্ন কথা। আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে কিশোরী দাবি করেছেন, চার বছর ধরে আলিনুরের সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্ক। বিষয়টি জানাজানি হলে গ্রাম্য সালিসে আলিনুরকে পিটিয়ে আহত করা হয়। পাঁচ হাজার টাকা জরিমানাও করা হয়। প্রেমিককে নির্যাতনের বিষয়টি মেনে নিতে পারেননি তিনি। এরপর পারিবারিকভাবে ওই যুবকের বিয়ে দেওয়া হয়। এরপর তার কথাতেই আলিনুর স্ত্রীকে তালাক দেন বলেও জবানবন্দিতে জানায় ওই কিশোরী।

তাঁর সঙ্গে প্রেমের ‘অপরাধে’ আলিনুরকে পিটিয়ে গ্রাম ছাড়া করার পরিকল্পনা করা হয়েছিল দাবি করে ওই কিশোরী জবানবন্দিতে বলেন, তার চাচা (বাবার মামাতো ভাই) সাম্প্রদায়িক ইস্যুতে আলিনুরকে ফাঁসানোর পরিকল্পনা করেছেন। মুকুলসহ অনেকে বলেছেন, এই অভিযোগ তুলে তারা আলিনুরকে পিটিয়ে গ্রামছাড়া করবে। বিষয়টি জানতে পেরে সে আলিনুরকে নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করে। 

কিশোরীর বয়স ১৮ পূর্ণ না হওয়ায় আলিনুর তাকে নিয়ে চলে যেতে অসম্মতি জানিয়েছিলেন বলে জবানবন্দিতে ওই কিশোরী উল্লেখ করেছে। ‘না হলে তোমাকে মারবে, চলো পালিয়ে যাই’, এই বলে সে আলিনুরকে বোঝানোর চেষ্টা করে। এরপর আলিনুরের সঙ্গে কুড়িগ্রাম শহরে গিয়ে অ্যাফিডেভিট করে স্বেচ্ছায় ধর্মান্তরিত হয়। এরপর মুন্সির (ইমাম) কাছে গিয়ে বিয়ে করে।
 
ফুলবাড়ী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) নওয়াবুর রহমান জানান, যেহেতু ভিকটিমের বয়স কম সেহেতু বিজ্ঞ আদালত তাকে তার পিতার জিম্মায় পাঠাতে চেয়েছেন। কিন্ত ভিকটিম পিতার জিম্মায় যেতে অস্বীকৃতি জানানোয় বিজ্ঞ আদালত তাকে রাজশাহী শিশু সংশোধনাগারে প্রেরণ করে প্রেমিক আলিনুরকে জেলহাজতে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন।

এদিকে একাধিক এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা যায়, আলিনুরের সাথে দীর্ঘদিন ধরে ওই মেয়ের সম্পর্ক চলছিল। এ বিষয়টি এলাকার সবাই জানেঅ এছাড়াও ওই ছেলের আগে থেকে মেয়ের বাড়িতে যাওয়া আসা ছিল।

এসএস

Link copied!