গাজীপুরে ৩৪ চেয়ারম্যান আত্মগোপনে, ইউপি সেবা পেতে জনগণের ভোগান্তি 

  • গাজীপুর প্রতিনিধি | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: অক্টোবর ১৯, ২০২৪, ০৫:৩৩ পিএম
গাজীপুরে ৩৪ চেয়ারম্যান আত্মগোপনে, ইউপি সেবা পেতে জনগণের ভোগান্তি 

গাজীপুর: দেশের অন্যতম শিল্পসমৃদ্ধ জেলা গাজীপুরের ৫ উপজেলার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানসহ জনপ্রতিনিধিরা ৫ আগষ্টের পর থেকেই আত্মগোপনে চলে গেছেন।

এতে করে স্থানীয় সরকার বিভাগের ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও জনপ্রতিনিধিদের অনুপস্থিতিতে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের নাগরিক সেবা পেতে ইউনিয়ন বাসিন্দারা হয়রানি ও ভোগান্তিতে পড়েছেন। 

জানা যায়, গাজীপুরের রাজনীতি মূলত আওয়ামী লীগ ঘরোনার। এজন্য এ জেলায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের দাপট একটু অন্যরকম প্রভাব বিস্তার করেছে। 

তবে গত ৫ আগষ্ট আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকেই আওয়ামী লীগের টিকিট পেয়ে যেসমস্ত নেতারা স্থানীয় সরকার নির্বাচনে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হয়ে ছিলেন। 

সেসমস্ত চেয়ারম্যানরা সবাই আত্মগোপনে চলে গেছেন। এতে করে ইউপি সেবা প্রার্থী নাগরিকদের বিভিন্ন ধরনের কাজ করতে পোহাতে হচ্ছে নানা ধরনের হয়রানি ও ভোগান্তি। 

জেলার স্থানীয় সরকার বিভাগের এক তথ্য সূত্রে জানা গেছে, জেলার ৫ উপজেলার আওতাধীন ৩৯টি ইউনিয়নের মধ্যে সাতজন চেয়ারম্যান নিয়মিত অফিস করলেও বাকি ৩৪ জন চেয়ারম্যান তাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব পালন না করে তারা সকলেই জনরোষের হাত থেকে রক্ষাপেতে আত্মগোপনে চলে গেছেন। 

জেলার স্থানীয় সরকার বিভাগের তথ্য মতে, গাজীপুরে মোট পাঁচটি উপজেলায় ৩৯টি ইউনিয়ন পরিষদ রয়েছে। এর মধ্যে গাজীপুর সদর উপজেলায় ৪টি,কালিয়াকৈর উপজেলায় ৯টি, শ্রীপুর উপজেলায় ৮টি,কাপাসিয়া উপজেলায় ১১টি ও কালীগঞ্জ উপজেলায় ৭টি ইউনিয়ন রয়েছে। এর মধ্যে জেলার ৩৯টি ইউনিয়ন পরিষদের ৩৪ জন চেয়ারম্যানই ইউনিয়ন পরিষদে না গিয়ে ৫ আগষ্টের পর থেকেই তারা আত্মগোপনে চলে গেছেন। 

এদিকে জেলা প্রশাসন অফিস সূত্রে জানা গেছে, গাজীপুর জেলার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপজেলা কাপাসিয়ার১১টি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানরা অনুপস্থিত থাকায় তাদের স্থানে সরকারি অফিসের বিভিন্ন দফতরের কর্মকর্তাদের সেবা দেওয়ার দায়িত্ব দেওয়ায় জনমনে কিছুটা ভোগান্তি কমে এসেছে। তবে জেলার অন্যসব উপজেলায় চলমান রয়েছে ইউপি সেবা প্রার্থী নাগরিকদের দুর্ভোগ। 

সরেজমিনে গাজীপুরের মধ্যপাড়া ইউনিয়ন পরিষদ ঘোরে দেখাগেছে,পরিষদের বারান্দায় অসংখ্য জনসাধারণ ঘোরাঘুরি করেছেন। এসব লোকজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কেউ এসেছেন ট্রেডলাইসেসেন্স নিতে কেউবা আবার জাতীয় সনদ, জন্মনিবন্ধন, মৃত্যু সনদ, ওয়ারিশ সনদ, প্রত্যয়পত্র, নাগরিকত্ব সনদসহ বিভিন্ন সনদের জন্য ইউনিয়ন পরিষদের আসছেন। এসব ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান না থাকায় হতাশ হয়ে সকলেই ফিরে যাচ্ছেন। 

রফিকুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি বলেন, তিনি এখানে জন্মনিবন্ধন করাতে এসেছেন কিন্তু চেয়ারম্যান না থাকায় দুই দিন যাবত ঘোরে যাচ্ছেন। এছাড়াও জেলার সদর উপজেলার বাড়িয়া,মির্জাপুর ও ভাওয়াল গড় ইউনিয়ন পরিষদ, কালিয়াকৈর উপজেলার মৌচাক ইউনিয়ন পরিষদ, মধ্যপাড়া, চাপাইর, ফুলবাড়িয়া, শ্রীফলতলী ইউনিয়নের একই চিত্র দেখা যায়। 

অপরদিকে গাজীপুরের বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদের বাসিন্দারা জানিয়েছেন, আওয়ামী লীগের টিকিট পেয়ে যেসমস্ত নেতারা চেয়ারম্যান হয়ে ছিলেন। তারা সকলেই জুলাই ছাত্র আন্দোলনের সময় বিভিন্ন কৌশলে ছাত্র জনতা উপর আক্রমণ ও দমন-পীড়নের সহযোগী হয়ে কাজ করেছেন। এসব চেয়ারম্যানরা ইতিমধ্যে অনেক  মামলার আসামি হয়েছেন। এজন্য তারা আত্মগোপনে রয়েছেন। তাদের এ আত্মগোপনে থাকার ফলে জনগণের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। 

গাজীপুরের স্থানীয় সরকারের উপ-পরিচালক (উপ-সচিব) মো.ওয়াহিদ হোসেন বলেন, নাগরিকদের অসুবিধার কথা চিন্তা করেই বর্তমান অন্তবর্তী সরকার কাপাসিয়ার ১১টি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের সরিয়ে সরকারি কর্মকর্তাদের কাছে দায়িত্ব দিয়েছে। এছাড়াও গাজীপুরের আরও যেসব বাকী ইউনিয়ন পরিষদে চেয়ারম্যান অনুপস্থিত রয়েছে সেসব পরিষদের তথ্য সংগ্রহ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। 

এআর

Link copied!