নেত্রকোণা: বাড়ির পাশে বাঁশ ঝাড় ও অনাবাদি জমি। মাঝে মধ্যে যেখানে খানিকটা আলো পড়ে। দিনের বেশীর ভাগ সময় ছায়া থাকে জায়গাটিতে। এমন জায়গায় কোনো কিছু চাষ করা যাবে তা একসময় কেউ ভাবতে পারতো না। কিন্তু ইউটিউবের কল্যাণে দেখলেন অনাবাদি জমিতে কীভাবে আদা চাষ করা যায়। বলতে গেলে সেখান থেকেই অনুপ্রেরণা শুরু।
বলছি নেত্রকোণা জেলার পূর্বধলা উপজেলার আগিয়া ইউনিয়নের হাটধলা গ্রামের দুই ভাই শান্ত চন্দ্র দাস ও রাখাল চন্দ্র দাসের কথা। শান্ত শেরপুর পলিটেকনিক্যাল ইনস্টিটিউটে ডিপ্লোমা ইন সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং এ পড়াশোনা করছেন এবং তার বড় ভাই রাখাল চন্দ্র সিরাজগঞ্জের মেডিকেল এসিস্ট্যান্ট ট্রেনিং স্কুল (ম্যাটস) থেকে ডিএমএফ সম্পন্ন করেন। বর্তমানে তিনি সিরাজগঞ্জ সদর হাসপাতালে ইন্টার্নী করছেন। লেখাপড়ার পাশাপাশি আদা চাষে তাদের সফলতার কাহিনী এখন এলাকার মানুষের মুখে মুখে।
চাকরির পেছনে না ঘুরে কৃষিপণ্য উৎপাদন ও বিপণনে স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন দেখেন তারা। মাত্র এক বছর আগে বাড়ির পাশে অনাবাদি জায়গাগুলোতে ২৪০ বস্তায় আদা চাষ শুরু করেছিলেন। সেখান থেকে ভালো ফলন হওয়ায় কিছু আদা বিক্রি করে এইবার ১৪০০ বস্তায় আদা চাষ করেন। এতে তারা প্রচুর লাভবান হবে বলে আশা করছেন।
তরুন উদ্যোক্তা শান্ত চন্দ্র দাস বলেন, বড় ভাইয়ের পরামর্শে প্রথম অবস্থায় ১০ কেজি আদা ২৪০ বস্তায় রোপন করেছিলাম। আমরা দুই ভাই এর পরিচর্যা করতাম। রোপনের এক বছর পর প্রতি বস্তায় ৭০০-৮০০ গ্রাম আদা সংগ্রহ করি। প্রথম অবস্থায় এমন ফলন পেয়ে আবারো আমরা ১৪০০ বস্তায় আদা রোপন করি। কৃষি অফিস থেকে আমাদের এ বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছিল। আশা করি এবারও ভালো ফলন পাবো।
বড় ভাই রাখাল চন্দ্র জানান, ইউটিউব দেখে প্রথমে বস্তায় আদা চাষ শুরু করি। মাটি, সার আর বীজ মিলে প্রতি বস্তায় খরচ হয়েছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা। প্রথমবারের মতো তারা আদা চাষে এই পদ্ধতি ব্যবহার করে সফল হওয়ায় এবারও স্বপ্ন লাভবান হওয়ার। আমাদের কাজ দেখে এলাকার অনেকে পরিত্যক্ত জমিতে বস্তায় আদা চাষ করতে শুরু করেছেন।
এ ব্যাপারে পূর্বধলা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. আলমগীর কবির জানান, গত বছর প্রদর্শনীর মাধ্যমে এ উপজেলায় ৭০০ বস্তায় আদা চাষ করা হয়েছিল। এ বছর তা বৃদ্ধি পেয়ে ৫২ হাজার ২০০ বস্তায় চাষ হয়েছে। এটি একটি লাভজনক ফসল। কেননা বাড়ির পাশে অনাবাদি জমিতেও এর চাষ করা যায়। অনেক তরুণ উদ্যোক্তাগণ ও কৃষকেরা আদা চাষে মনযোগী হচ্ছেন। কেননা প্রতি বস্তায় ৪০-৫০ টাকা খরচের বিপরীতে প্রায় ২০০ টাকার আদা বিক্রি সম্ভব। বস্তায় আদা চাষের পরিমাণ কীভাবে এক লাখের অধিক করা যায় সে বিষয়ে কৃষি অধিদপ্তর কাজ করছে। ইতোমধ্যে তাদেরকে আদা চাষে প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়েছে, যাতে তারা বস্তায় আদার চাষ করে পরিবারের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি বাড়তি আয়ও করতে পারেন।
এসএস
আপনার মতামত লিখুন :