লালমনিরহাট: লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার ডাকবাংলো এলাকার চা দোকানি প্রতিবন্ধী আব্দুর রহমান (৪০)। ১৭ বছর আগে এক দুর্ঘটনায় তার বাম পা টি হারান তিনি। আর তখন থেকেই ক্রাচে ভর দিয়ে সহধর্মীণি স্ত্রীকে নিয়ে চায়ের দোকান দিয়ে নিজের ও পরিবারের রোজগারের জোগান তিনি।
অদম্য ইচ্ছাশক্তি নিয়ে আব্দুর রহমানের পাশে ছায়ার মতো সারাক্ষণ জীবন যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছেন স্ত্রী আনোয়ারা বেগম। আধুনিক যুগের তথাকথিত প্রেম ভালোবাসাকে হার মানিয়ে দীর্ঘ দিন ধরে স্বামীর সেবা, সন্তান লালন পালন সহ ছোট্ট দোকানের কার্যক্রমেও সার্বক্ষণিক লেগে আছেন তিনি। বর্তমান এই সময়ে চুন থেকে পান খসলেই সংসারে ডিভোর্স কিংবা অবিশ্বাসের নানান ঘটনা চারিদিকে নজরে আসে। সেখানে দীর্ঘ সময়েও অচল স্বামীর পাশে স্ত্রীর এমন সহযোগিতার সত্যিই প্রশংসনীয়। এ নিয়ে এলাকাজুড়েও রয়েছে এই জীবন যোদ্ধা দম্পতির ভূয়সী প্রশংসা। আর্থিক সাহায্য ও কৃত্রিম পা লাগানোর ব্যবস্থা করা হলে নিজেকে আরও বেশি কর্মক্ষম ও ব্যবসার পরিধি বাড়াতে পারবেন বলে ধারণা এই দম্পতির।
প্রতিবন্ধী আব্দুর রহমান দুই কন্যা সন্তানের জনক। মেয়েদের লেখাপড়ার খরচ মেটাতেও কোনো অংশে কম রাখেন নি তিনি। নিজে চলতে না পারলেও তার মেয়েরা যেনো লেখাপড়া করে ভালো চাকরি করতে পারে সেই আশায় দিন গুনছেন আব্দুর রহমান৷ সেজন্য নিজের ও সংসার চালাতে ভিক্ষাবৃত্তি কিংবা অন্যের দাড়স্ত না হয়ে নিজেই কর্মের পথ বেছে নেন। ধার দেনা করে রাস্তার পাশে মাত্র ২০ হাজার টাকার পুঁজি দিয়ে শুরু করেন ছোট্ট একটি চায়ের দোকান। স্ত্রীর সার্বক্ষণিক সহযোগিতায় চায়ের পাশাপাশি অন্যান্য মালামাল বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করছে তার পরিবার। সুস্বাদু চায়ের সাথে অসাধারণ দাম্পত্যের গল্প শুনে অনেকেই ছুটে আসেন তার দোকানে। অবসর সময়ে চায়ের আড্ডায় মাতেন স্থানীয়রাও। তবে কৃত্রিম পা লাগিয়ে আরও বেশি গতিশীল করতে বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহ্বান এলাকাবাসীর।
সোনালীনিউজকে চা দোকানি প্রতিবন্ধী আব্দুর রহমান বলেন, ১৭ বছর আগে একটা সড়ক দূর্ঘটনায় আমার বাম পা টি হারিয়ে যায়। তখন থেকেই আমি নানা দুশ্চিন্তায় দিন কাটছিলাম। তখন মাথায় চিন্তা ছিল আর যাই করি না কেনো কখনো ভিক্ষাবৃত্তি করবো না। সেই ইচ্ছা থেকে তখন পরিবারের কাছ থেকে অল্প কিছু পুঁজি নিয়ে রাস্তার পাশে ছোট্ট একটা চায়ের দোকান দেই৷ আর তখন থেকে এখন পর্যন্ত এই দোকানের মাধ্যমেই আমার পরিবার নিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছি। আর এসব কিছুর মধ্যে বিশেষ ভাবে অবদান আমার স্ত্রীর। সে আমার এই খারাপ সময়েও আমার সাথে ছায়ার মতো পাশে দাঁড়িয়ে আছে। এখনো কোথাও যেতে হলে সে নিজেই আমাকে নিয়ে যায়।
স্ত্রী আনোয়ারা বেগম জানান, আমার স্বামী একটা পা নেই। এই দু:সময়ে যদি আমি তাকে ছেড়ে চলে যাই তাহলে তার আর পথ খোলা থাকবে না। সে অনেক সবসময় অনেক অসুস্থ থাকে। সে জন্য আমি সবসময় তার সাথে থাকি কাজে সহোযোগিতা করি। ইনশাল্লাহ আল্লাহ রহমতে স্বামী সংসার নিয়ে ভালো আছি। প্রত্যেকটা বিবাহিত নারী যদি তার স্বামীর পাশে দাঁড়ায় তাহলে আমি মনে করবো সেই সংসারে কোনো কিছুর কমতি থাকবে না৷ আপনারা আমাদের জন্য দোয়া করবেন।
এলাকাবাসী রাহেবুল ইসলাম টিটুল জানান, আব্দুর রহমান খুবই ভালো মানুষ। সে অনেক কষ্ট করে এই পর্যন্ত এসেছে। তার স্ত্রীও সর্বক্ষণিক তার পাশে সাহায্য সহোযোগিতা করে। এক কথায় তাকে কখনই চোখের আড়াল হতে দেয় না। সরকারের পক্ষ থেকে যদি তার একটি কৃত্তিম পা এর ব্যবস্থা করা যেতো তাহলে তার কর্মজীবনের গতি আরও মজবুত হতো।
এ বিষয়ে কথা হলে উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা সুকান্ত সরকার জানান, আব্দুর রহমানের একটা পা না থাকা সত্ত্বেও তিনি ছোট্ট একটা চায়ের দোকান দিয়ে আয় করছেন। আসলে এটা প্রশংসনীয়। প্রতিবন্ধী হওয়া সত্ত্বেও ভিক্ষাবৃত্তি না করে কর্ম দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে তিনি নিজের ও সন্তানদের ভরণ পোষণ করছেন। সমাজসেবা দপ্তর থেকে সবসময় তাকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা থাকবে। ইতোমধ্যে তার একটা কৃত্রিম পায়ের ব্যবস্থা করার জন্য তাকে উপজেলা সমাজসেবা অফিস বরাবর একটি আবেদন করতে বলা হয়েছে। আবেদন করলে আমরা তার কৃত্রিম পায়ের ব্যবস্থা করে দিবো।
এসএস
আপনার মতামত লিখুন :