বরগুনা: বরগুনা পৌর শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত ভাড়ানি খালের অপরিকল্পিত খনন ও পাড়ের ভাঙন রোধে স্থায়ী গাইড ওয়াল নির্মাণ না করে রাস্তা নির্মাণের মাত্র তিন মাসের মধ্যেই পৌরসভার দুটি প্রধান সড়ক ভেঙে গিয়ে চলাচল অনুপযোগী হয়ে পড়ছে। এতে করে ঝুঁকিতে পড়েছে কয়েকটি সেতু। হেলে পড়েছে বসত বাড়ি। তবে ভাঙ্গন রোধে স্থায়ীভাবে ব্যবস্থা গ্রহণে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে একাধিকবার চিঠি দিলেও এখন পর্যন্ত কোন সুরহা মেলেনি বলে জানিয়েছেন পৌর কর্তৃপক্ষ।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বরগুনা পৌর শহরের প্রাণকেন্দ্রের ভাড়ানি খালের দুই পাড়ের অবৈধ স্থাপনা ২০১৯ সালে আদালতের নির্দেশে উচ্ছেদ করা হয়। এরপর ২০২১ সালে পানির প্রবাহ ঠিক রাখতে পানি উন্নয়ন বোর্ড খালটিকে খননের উদ্যোগ নেয়। ২০২০-২১ অর্থবছরে দুই কোটি ৮০ লাখ টাকা ব্যয়ে এই খালটি খনন করা হয়। খননের পরে দুই পাড় রক্ষায় নেওয়া হয়নি স্থায়ী কোনো ব্যবস্থা। এতে দুই পারেই দেখা দিয়েছে ভাঙ্গন। এতে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে ভাড়ানি খালটির ওপরে থাকা বিভিন্ন স্থানের গুরুত্বপূর্ণ তিনটি সেতু। তবে খালটির ভাঙ্গন রোধের চেষ্টায় সাময়িকভাবে বাঁশ ও জিও ব্যাগ ব্যবহার করা হলেও রোধ করা যাচ্ছেনা ভাঙ্গন। এছাড়া বিভিন্ন ব্যবসায়ীদের মালামাল পরিবহনে সৃষ্টি হচ্ছে ভোগান্তি।
স্থানীয়দের অভিযোগ, খালটি খননের সময় শুধুমাত্র মাটি বিক্রির জন্যে অতিরিক্ত গভীর করা হয় এবং খননের পরে দুই পাড় রক্ষায় নেওয়া হয়নি স্থায়ী কোনো ব্যবস্থা। এতে দুই পাড়ের সড়ক বারবার সংস্কার করলেও মাত্র কয়েক মাসের মধ্যেই তা ভেঙে গিয়ে আবারও সাধারণ মানুষের ভোগান্তির সৃষ্টি হয়।
ভাড়ানি খালের পাড়ের ব্যবসায়ী শাহেদ ওলি বলেন, খননের পরে স্থায়ী কোনো গাইড ওয়াল নির্মাণ না করায় নতুন রাস্তা তৈরি হলেও তা ভেঙে যাচ্ছে। বাঁশ দিয়ে যে বাঁধ দেয়া হচ্ছে তা অস্থায়ী, বর্ষা মৌসুম এলেই ভেঙে যায়। মাত্র তিন চারমাস পূর্বে রাস্তার সংস্কার করা হয়েছিল এখন আবারও তা ভেঙে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এভাবে অপরিকল্পিতভাবে বারবার সংস্কার করায় শুধু রাষ্ট্রের অর্থের অপচয় হচ্ছে, সাধারণ নাগরিকদের কোনো উপকারে আসছেনা।
মোঃ সিরাজুল ইসলাম নামের আরেক ব্যবসায়ী বলেন, পৌরসভার এই রাস্তার জন্যে আমাদের গুদামের মাল আনা নেয়ার এখানে ট্রাক আসতে পারে না তাই প্রতিদিন আমাদের লোকসান গুনতে হচ্ছে। স্থায়ীভাবে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে আমাদের দুর্ভোগ কমবে না।
বরগুনা পৌরশহরের বাসিন্দা শাহাবুদ্দিন সাওদাগার বলেন, পনি উন্নয়ন বোর্ড যদি এই খালটির সঠিক ভাবে খনন করতো তাহলে আর রাস্তা ভেঙে গিয়ে এ সমস্যার সৃষ্টি হতোনা। বিশেষ করে খালের পাড়ের সড়কটি গত তিন মাস আগে সংস্কার করলে আবারও ভেঙে গিয়ে আগের অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এ কাজটাকে আমরা রাষ্ট্রের সিস্টেম লসের একটি অংশ মনেকরি। এ ধরণের সিস্টেম লস উন্নয়ন আমরা চাইনা।
পৌর এলাকার অটোরিকশা চালক রফিক বলেন, কিছুদিন পূর্বে রাস্তার কাজ করা হলেও তা আবারও ভেঙে গেছে। এ রাস্তা দিয়ে চলাচল করতে এক পাশ বন্ধ রেখে আরেক পাশ দিয়ে গাড়ি চালাতে হয়।
পৌরসভার রাস্তা ভাঙ্গার বিষয়ে জানতে চাইলে বরগুনা পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ মাসুম বিল্লাহ সোনালীনিউজকে বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ড ভাড়ানি খালটিকে কিছুদিন পূর্বে খনন করেন। তবে খালের দুই পাড় সুরক্ষার যে ব্যবস্থা তা গ্রহণ করা হয়নি। ফলে খালের দুই পাড়েই ভাঙনের সৃষ্টি হয়ে রাস্তার ক্ষতি হচ্ছে। আমরা এ বিষয়টি জানিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে একাধিকবার চিঠি দিয়েছি। তবে তারা একটি প্রকল্পের মাধ্যমে সমস্যা সমাধান করতে আশ্বাস দিলেও এখনো তা বাস্তবায়ন করা হয়নি। নদীর পাড় রক্ষার কাজ ও এ বিষয়ক প্রকল্পগুলো পানি উন্নয়ন বোর্ডই করেন, এগুলো তাদেরই কাজ।
এ বিষয়ে বরগুনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ রাকিব বলেন, ভাড়ানি খালটির বর্তমান অবস্থা জানতে আমরা একটি সার্ভে করব। আমাদের যারা অভিজ্ঞ ডিজাইন সার্কেল রয়েছে তাদের পরামর্শে এবং পৌরসভার সঙ্গে সমন্বয় করে খালটির ভাঙন রোধে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
এসআই
আপনার মতামত লিখুন :