ঢাকা: বকেয়া বেতনের দাবিতে আজও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছেন গাজীপুরের টিএনজেড অ্যাপারেলস কারখানার শ্রমিকরা। কর্তৃপক্ষের আশ্বাসের পরও বেতন না পাওয়ায় টানা ৫০ ঘণ্টা ধরে মহাসড়ক অবরোধ অব্যাহত রেখেছেন তারা।
সোমবার (১১ নভেম্বর) বেলা ১১টার দিকে নগরীর মালেকের বাড়ি এলাকায় এই কর্মসূচি পালন করছেন শ্রমিকরা। নিরাপত্তার শঙ্কায় গাজীপুরের ৩০টি কারখানায় ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।
সকালে মোগরখাল এলাকায় গিয়ে শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রোববার পুলিশ ও প্রশাসনের লোকজন এসে তাদের বেতন পরিশোধ করার জন্য সাত দিনের সময় চেয়েছিল। কিন্তু তারা সেটা মানেননি। কারণ গত প্রায় এক মাস ধরে বিভিন্ন সময় অনেক তারিখ দিয়েও মালিক এবং প্রশাসন তাদের কথা রাখতে পারেনি। তাই তারা কোনো কথাতেই আশ্বস্ত হতে পারছেন না। তাদের বকেয়া বেতন পরিশোধ না করা পর্যন্ত অবরোধ কর্মসূচি চালিয়ে যাবেন বলেও জানিয়েছেন।
এদিকে শ্রমিকরা দ্বিতীয় রাতও মহাসড়কে কাটিয়েছেন। তারা পালাক্রমে মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে দাবি আদায়ের পক্ষে বিক্ষোভ করছেন। সড়কের পূর্ব পাশে একটি অটোরিকশায় মাইক লাগিয়ে শ্রমিকদের মহাসড়কে অবস্থান করতে বলা হচ্ছে। তিন দিন ধরে মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করলেও কোনো শ্রমিক যানবাহন ভাঙচুর বা ক্ষতিসাধন করেননি। তাদের দাবি, শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মাধ্যমে দাবি আদায় করে ঘরে ফিরবেন তারা।
অপরদিকে শ্রমিক অবরোধের কারণে তৃতীয় দিনের মতো গাজীপুর থেকে ঢাকা এবং ঢাকা থেকে গাজীপুর চৌরাস্তা পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার সড়কে সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। এতে এই মহাসড়ক দিয়ে চলাচলকারী হাজার হাজার গণপরিবহনের যাত্রী, শ্রমিক ও সাধারণ মানুষ চরম দুর্ভোগের মধ্যে পড়েছে। দেশের দূরদূরান্ত থেকে আশা সাধারণ মানুষ গাজীপুর চন্দনা চৌরাস্তায় নেমে হেঁটে অথবা বিকল্প পথ দিয়ে রাজধানী ঢাকায় প্রবেশ করছে। আর ঢাকা থেকে যে সকল মানুষ উত্তরবঙ্গের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছেন তারা বিকল্প পথ দিয়ে গাজীপুর চৌরাস্তা ও চন্দ্রা হয়ে গন্তব্যের দিকে যাচ্ছেন বলে জানা গেছে।
গাজীপুর ভোগরা বাইপাস দিয়ে এবং জয়দেবপুর থেকে বনমালা হয়ে টঙ্গী দিয়েও কিছু যানবাহন চলাচল করছে।
গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের অফিসিয়াল ফেসবুক পেইজে বিকল্প সড়ক ব্যবহারে অনুরোধে করে একটি ট্রাফিক আপডেট দেওয়া হয়েছে। ওই আপডেটে বলা হয়েছে- ‘ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক ও ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক ব্যবহারকারী যাত্রীবৃন্দের জ্ঞাতার্থে জানানো যাচ্ছে যে, বকেয়া বেতন-ভাতার দাবিতে গার্মেন্টসের শ্রমিক কর্তৃক ভোগড়া বাইপাস ও মালেকের বাড়ির মাঝামাঝি কলম্বিয়া গার্মেন্টসের সামনে (শনিবার) সকালে শুরু করা মহাসড়কে অবরোধ অব্যাহত আছে। বিধায়, সম্মানিত যাত্রীগণকে বিকল্প রাস্তা ব্যবহার করার জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে।’
গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) ইব্রাহিম খান বলেন, আমরা শনিবার আন্দোলনের শুরু থেকেই গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের ক্রাইম ডিভিশন, ট্রাফিক ডিভিশন, শিল্প পুলিশ ও যৌথ বাহিনী মিলে কলম্বিয়া গার্মেন্টসের সামনে টিএন্ডজেড’র শ্রমিকদের বারবার বলেছি রাস্তাটা ছেড়ে দিয়ে সরে যাওয়ার জন্য। কিন্তু তারা বেতন পাচ্ছে না, এটার দাবিতে তারা অবস্থান নিয়েছে। আমরা মালিক পক্ষের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেছি।
গাজীপুর শিল্পাঞ্চল পুলিশ-২ এর পুলিশ সুপার সারোয়ার আলম বলেন, শ্রমিকদের বকেয়া বেতন পরিশোধের বিষয়টি বিজিএমইএসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট উচ্চ পর্যায়ে আলোচনা করা হচ্ছে। আশা করছি খুব দ্রুতই এর সমাধান হবে।
এম
আপনার মতামত লিখুন :