আন্দোলনে ‘মৃত’ দেখিয়ে স্ত্রীর মামলা, থানায় হাজির জীবিত স্বামী

  • সাভার (ঢাকা) প্রতিনিধি | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: নভেম্বর ১৩, ২০২৪, ০৬:১২ পিএম
আন্দোলনে ‘মৃত’ দেখিয়ে স্ত্রীর মামলা, থানায় হাজির জীবিত স্বামী

স্ত্রীর মামলায় ‘মৃত’ বনে যাওয়া জীবিত আল আমিন। বুধবার আশুলিয়া থানায়। ছবি: সোনালীনিউজ

ঢাকা: জীবিত স্বামীকে গণঅভ্যুত্থানে ‘মৃত’ দেখিয়ে আদালতে মামলা দায়ের করেছিলেন কুলসুম নামের ঢাকার আশুলিয়ার এক গৃহবধূ।  পুলিশের গুলিতে তার স্বামী আল আমিন নিহত হয়েছেন বলে ওই মামলায় দাবি করেন তিনি। কিন্তু ঘটনার তিনমাস পর জীবিত অবস্থায় থানায় এসে আল আমিন জানান, তিনি বেঁচে আছেন। আর মামলার বিষয়টি তার অজান্তেই ঘটিয়েছেন স্ত্রী কুলসুম। 

বুধবার (১৩ নভেম্বর) দুপুরে আশুলিয়া থানা থেকে জীবিত আল আমিনকে জবানবন্দি দিতে আদালতে পাঠিয়েছে পুলিশ।

জানা যায়, গত ২৪ অক্টোবর কুলসুম বেগম (২১) নামের এক নারী ঢাকার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলায় তিনি উল্লেখ করেন, গত ৫ আগষ্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের দিনে বিকেল ৪টার দিকে আশুলিয়ার বাইপাইল এলাকায় বিজয় মিছিলে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসী বাহিনী নির্বিচারে গুলি করে।তখন আন্দোলরতরা বাইপাইল এমপি মার্কেটের সামনে অবস্থান নেন। পরে সেখানে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসী বাহিনী নির্বিচারে ছাত্র, সাধারণ মানুষ ও গার্মেন্টস শ্রমিকদের ওপরে অমানবিকভাবে গুলি চালায়। গুলিতে আল-আমিন মারা যান। পরে ৬ আগস্ট আশুলিয়ার নারী ও শিশু হাসপাতালে আল-আমিনের স্ত্রী কুলসুম জানতে পারেন, অনেক লাশ গোসল করিয়ে জানাজা পড়িয়ে আশুলিয়ার দরগাপাড় কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। সেখানে কুলসুম গিয়ে ডকুমেন্ট, ছবি এবং ভিডিও দেখে তার স্বামী আল-আমিনের মরদেহ দাফন করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেন। এর পরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কুলসুমকে বিভিন্ন কাগজপত্র প্রদান করে বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে। 

এই মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ১৩০ জনকে আসামি করা হয়। পরে আদালত মামলাটি আশুলিয়া থানাকে নথিভুক্ত করতে নির্দেশ দিলে, গত  ৮ নভেম্বর আশুলিয়া থানায় মামলাটি এজাহারভুক্ত করা হয়। বিষয়টি জানতে পেরে জীবিত থেকেও মৃত বনে যাওয়া স্বামী আল আমিন সিলেটের গ্রামের বাড়ি থেকে ছুটে যান সিলেটের দক্ষিন সুরমা থানায়। দায়ের করেন একটি সাধারণ ডায়েরী। পরে দক্ষিন সুরমা থানা পুলিশ আল আমিনকে আশুলিয়া থানায় পাঠান। পরে আশুলিয়া থানা থেকে আল আমিনকে জবানবন্দি দিতে বুধবার দুপুরে পাঠানো হয় আদালতে।

আল আমিন জানান, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় তিনি স্ত্রীসহ হবিগঞ্জে অবস্থান করছিলেন। ৫ আগষ্টের পর স্ত্রী কুলসুম বেগমের সাথে ঝগড়া হলে কুলসুম বেগম বাবার বাড়ি চলে আসেন আর তিনি সিলেটে গ্রামের বাড়ি চলে যান হবিগঞ্জ থেকে। এরপর গত ৪/৫ দিন আগে তিনি জানতে পারেন তার স্ত্রী কুলসুম বেগম জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় তার (আল আমিনের) মৃত্যু হয়েছে দাবি করে আদালতের মাধ্যমে আশুলিয়া থানায় মামলা করেছেন। এরপর তিনি নিজ থেকেই পুলিশের সাথে যোগাযোগ করেছেন।

স্ত্রীর এমন কর্মকাণ্ডে হতবাক আল আমিন। ঘটনার জন্য চান স্ত্রীর শাস্তি। 

সাভার সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শাহীনুর কবির জানান, জীবিত স্বামীকে মৃত বলে মিথ্যা মামলা দায়েরের বাদী কুলসুম বেগমকে আইনের আওতায় আনা হবে এবং ইতিপূর্বে মিথ্যা মামলা বা আসামি করার দায়ে কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলেও জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা। 

আই/এসএস

Link copied!