রেলওয়ের জায়গায় গড়া সাবেক মন্ত্রীপুত্রের ‌‘ব্যক্তিগত পার্ক’ উচ্ছেদ

  • লালমনিরহাট প্রতিনিধি | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: নভেম্বর ১৮, ২০২৪, ০৭:৩৮ পিএম
রেলওয়ের জায়গায় গড়া সাবেক মন্ত্রীপুত্রের ‌‘ব্যক্তিগত পার্ক’ উচ্ছেদ

লালমনিরহাট: সাবেক সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদের ছেলে রাকিবুজ্জামান আহমেদ জেলা পরিষদ, উপজেলা পরিষদ ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার দপ্তর থেকে ভিন্ন নামে ২০টি প্রকল্পের মাধ্যমে দেড় কোটি টাকা তুলেছিলেন। সেই টাকায় লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার তুষভাণ্ডার রেলওয়ে স্টেশনের পাশে ভূমিহীন মানুষদের সরিয়ে প্রায় ৭০ শতাংশ জায়গা দখল করে গড়ে তুলেছিলেন ‘ব্যক্তিগত পার্ক’। এ ছাড়াও নিজের জন্য করেছেন আওয়ামী লীগ অফিস।  গত বছর অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের জন্য বিভাগীয় ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তারা ওই জায়গায় দুইবার অভিযানে গেলে সাবেক মন্ত্রীর রাজনৈতিক প্রভাব ওই উচ্ছেদ অভিযানে বাধা হয়ে দাঁড়ায়।

অবশেষে সোমবার (১৮ নভেম্বর) সকালে রেলওয়ের বিভাগীয় সহকারী ভূসম্পত্তি কর্মকর্তা (ডিইও) আব্দুর রাজ্জাকের নেতৃত্বে অভিযান পরিচালনা করে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করেছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।

জানা যায়, ক্ষমতায় থাকাকালীন সময়ে সাবেক সমাজকল্যাণ মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ পুত্র, লালমনিরহাট জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও কালীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান রাকিবুজ্জামান আহমেদ দলীয় প্রভাব খাটিয়ে অবৈধভাবে প্রায় ৭০ শতাংশ জায়গা দখল করে দৃষ্টিনন্দন বিনোদন পার্ক তৈরি করেন।

শুধু তাই নয় রেলওয়ের জায়গার ওপর অবৈধভাবে এ স্থাপনাটি গড়ে তুলতে রাকিবুজ্জামান জেলা পরিষদ, উপজেলা পরিষদ ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার দপ্তর থেকে ভিন্ন নামে ২০টি প্রকল্পের মাধ্যমে প্রায় দেড় কোটি টাকাও তুলেছেন। সরকারি টাকায় তিনি ওই ব্যক্তিগত পার্ক তৈরী করেছেন নিজের বিনোদনের জন্য। যেখানে জনসাধারণের প্রবেশ করা নিষেধ ছিলো।

গত ৫ আগষ্ট তীব্র গণআন্দোলনের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর নুরুজ্জামান আহমেদ ও রাকিবুজ্জামান পলাতক আছেন। তাদের দুজনের বিরুদ্ধেই বিভিন্ন জায়গায় পৃথক হত্যা মামলা হয়েছে।

স্থানীয়রা বলছেন, ২০২২ সালের এপ্রিল পর্যন্ত তুষভান্ডার রেলওয়ে স্টেশনের পার্শ্ববর্তী জায়গাটিতে এলাকার দরিদ্র লোকজন বসবাস করতো। পাশে অস্থায়ী দোকান বসিয়ে বিভিন্ন পণ্যের ব্যবসা করতেন। সাবেক সমাজকল্যাণ মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ পুত্র রাকিবুজ্জামান আহমেদ দলীয় ক্ষমতা দেখিয়ে ঘরবাড়ি ও দোকানপাট উঠিয়ে দিয়ে জায়গাটি দখলে নিয়ে প্রথমে টিন দিয়ে ঘিরে ফেলেন। পরে জায়গাটির চারদিকে ইটের প্রাচীর দেওয়া হয়। মূল ফটকের ওপর বসান কংক্রিটের নৌকা। পাশে অবৈধভাবে তৈরি করেন আওয়ামী লীগ অফিস। এছাড়া ভেতরের অংশে একটি বড় পুকুর কেটে এর চারপাশ ঘিরে তৈরি করা হয় সড়ক। বসানো হয় চেয়ার-টেবিল। রাকিবুজ্জামান সেখানে মাঝেমধ্যে বন্ধুদের নিয়ে আড্ডা দিতেন।

রেলওয়ের লালমনিরহাট বিভাগীয় ভূ-সম্পত্তি কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, রেলওয়ের জায়গা দখল করে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণের শুরুতেই সাবেক মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদকে চিঠি দিয়ে কাজ বন্ধ রাখতে বলা হয়েছিল। কিন্তু তিনি এর তোয়াক্কা করেননি।

নুরুজ্জামান আহমেদ ২০১৬ সালে সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী এবং ২০১৯ সালে সমাজকল্যাণমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। ২০২৪ সালের তিনি মন্ত্রীসভা থেকে বাদ পড়েন। তিনি ২০১৪ সাল থেকে লালমনিরহাট-২ (কালীগঞ্জ-আদিতমারী) আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন।

এ বিষয়ে রেলওয়ের বিভাগীয় সহকারী ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তা (ডিইও) আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘রেলওয়ের জায়গার ওপর গড়ে তোলা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হচ্ছে। এছাড়াএ পাশের গোডাউন, আওয়ামী লীগ অফিস উচ্ছেদ করা হয়। এ উচ্ছেদ অভিযান অব্যহত থাকবে।’

এসএস

Link copied!