পশ্চিমাঞ্চল রেলের ৭৫৩ গেট কিপারের বেতন অনিশ্চিত

  • রাজশাহী ব্যুরো | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১২, ২০২৪, ০১:২৫ পিএম
পশ্চিমাঞ্চল রেলের ৭৫৩ গেট কিপারের বেতন অনিশ্চিত

ফাইল ছবি

রাজশাহী: রাজশাহী পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের ৭৫৩ গেটরক্ষক (গেটম্যান) গত ছয় মাস ধরে কোনো বেতন ভাতা না পাওয়ায় দুর্দিন যাচ্ছে পরিবারে। রেল প্রকল্পে নিয়োগ পাওয়া এসব গেটরক্ষক দীর্ঘদিন ধরে দায়িত্ব পালন করছেন। কিন্তু প্রকল্পে টাকা না থাকায় গত ছয় মাসে কোনো বেতন ভাতা পাননি তারা। তারা পরিবার নিয়ে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন। কবে নাগাদ বেতন ভাতা ছাড় হবে তা নিয়েও অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। বেতন ভাতা বঞ্চিত এই বিপুল সংখ্যক গেটরক্ষক তবুও নিয়মিত দায়িত্ব পালন করছেন নিজ নিজ কর্মস্থলে।

পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের লেভেল ক্রসিং গেটসমূহের পুনর্বাসন ও মান উন্নয়ন নামে একটি প্রকল্প ২০১৫ সালের ১ জুলাই জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) অনুমোদন পায়। এই প্রকল্পের অধীন ২০১৬ সালে পশ্চিমাঞ্চল রেলে ৭৫৩ জন গেটরক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়। এই গেটরক্ষকদের চাকরি রাজস্বখাতে স্থানান্তরে ২০১৯ সালের আগস্টে রেলপথ মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠায় পশ্চিম রেল। প্রস্তাবটি রেল মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে যায় অর্থ বিভাগে।

২০২৪ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর অর্থ বিভাগ ফেরতপত্রে জানায়, ১৯৯৭ সালের জুলাই এবং তৎপরবর্তীতে শুরু হওয়া কোনো প্রকল্পের চাকরি এই মুহূর্তে রাজস্বখাতে স্থানান্তরের সুযোগ নেই। ফলে ২০১৬ সালে নিয়োগ পাওয়া এসব গেটরক্ষক অদ্যাবধি রাজস্বখাতে যেতে পারেনি। গত ছয় মাস ধরে খাতভুক্ত প্রকল্পে কোনো টাকা না থাকায় বেতন বঞ্চিত হচ্ছেন তারা।

পশ্চিম রেল সূত্রের মতে, লেভেল ক্রসিং গেটসমূহের পুনর্বাসন ও মান উন্নয়ন নামের প্রকল্পটির আওতায় ২০১৬ সালে মোট ৮৫১ জন গেটরক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়। এর মধ্যে বর্তমানে কর্মরত আছেন ৭৫৩ জন গেটরক্ষক। এই প্রকল্পের অধীনে গেটরক্ষণ ঘর নির্মাণ, রোড সারফেস মেরামত, গেটে প্রতিবন্ধক স্থাপন, চেক রেল, বেয়ারিং প্লেট, চেকবোল্ট, উডেন স্লিপার সংগ্রসসহ প্রয়োজনীয় সিগন্যালিং কাজ সম্পাদন এবং লোডিং আনলোডিংয়ের জন্য ৩২২টি রেলগেট তৈরির কথা ছিল। প্রকল্পটির অনুমোদিত ব্যয় ছিল ৪৭ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। প্রকল্পের অধিকাংশ কাজ সম্পন্ন হলেও শুধুমাত্র গেটরক্ষকদের বেতন রাজস্বখাতে স্থানান্তর না হওয়ায় আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকল্পটি এখনও শেষ হয়নি। এক্ষেত্রে প্রকল্পটির সময়সীমা দ্বিতীয় দফা বাড়িয়ে সংশোধিত ব্যয় বেড়ে হয়েছে ১১৫ কোটি ২৪ লাখ টাকা। দ্বিতীয় দফার বাজেটেও প্রকল্পের ব্যয় নির্বাহ সম্ভব না হওয়ায় তৃতীয় দফা সংশোধনীতে প্রকল্পের ব্যয় বাড়িয়ে ফের ১৩০ কোটি ৯৫ লাখ টাকার প্রস্তাবনা পাঠিয়েছে রেল মন্ত্রণালয়। কিন্তু সংশোধিত তৃতীয় দফার বর্ধিত প্রকল্প ব্যয় এখনো অনুমোদন না হওয়ায় ৭৫৩ জন গেটরক্ষকের বেতন ভাতা বন্ধ রয়েছে।

রাজশাহীর আড়ানী রেলসেতুর গেটরক্ষক তাহমিনা খাতুন বলেন, আমার বাড়ি কিশোরগঞ্জের ভৈরবে। মা ও ছেলেকে নিয়ে আড়ানীতে ভাড়া বাসায় থাকি। গত ছয় মাস বেতন ভাতা বন্ধ থাকায় সংসার চালাতে কষ্টের শেষ নেই। মাস শেষ হলেই শুনি এবার বেতন হবে কিন্তু আর হয় না।

বাসুদেবপুর রেলগেটের গেটরক্ষক লায়েব উদ্দিন বলেন, ছয় মাসে বেতন ভাতা ছাড়াই দিনরাত গেট পাহারা দিচ্ছি। কিন্তু মাস শেষে বেতনভাতা পাচ্ছি না। ধার-দেনা করে সংসার চালাতে চালাতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছি। আমরা দিনরাত গেট পাহারা দিয়ে ট্রেন ও যাত্রীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করি, কিন্তু আমাদের প্রতি কারও দয়া হয় না।

জানা গেছে, এসব গেটরক্ষকের সর্বসাকুল্যে বেতন ভাতা পান ২০ হাজার টাকারও কিছু কম। এই বেতনে বর্তমান বাজারমূল্যে সংসার চালানো কঠিন হলেও গেটরক্ষকরা চাকরি রাজস্বখাতের আশায় চাকরি করছেন।

পশ্চিম রেলওয়ের সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে, অন্তবর্তী সরকার সব প্রকল্পের ব্যয় সংকোচনের চেষ্টা করছেন। প্রকল্পটির অন্য সব কাজই শেষ হয়েছে কিন্তু এখন ৭৫৩ জন গেটরক্ষকের বেতনভাতার জন্যই প্রকল্পটির মেয়াদ তৃতীয় দফা বাড়াতে হচ্ছে। রেল কর্তৃপক্ষ সরকারকে বোঝানোর চেষ্টা করছে বিষয়টি অত্যন্ত মানবিক। কারণ রেল কর্তৃপক্ষ এসব গেট রক্ষককে বিধি-বিধান মেনে নিয়োগ দিয়েছেন। গত ছয় মাস ধরে তাদেরকে বেতনভাতা ছাড়াই গেটে গেটে দায়িত্ব পালন করানো হচ্ছে। টাকার অভাবে এসব গেটরক্ষককে এখন ছাটাই করলে একদিকে যেমন ট্রেন ও যাত্রীর নিরাপত্তা ঝুঁকি বাড়বে তেমনি কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে মামলাও হবে।      

এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক (পিডি) বীরবল মন্ডল বলেন, বর্তমানে প্রকল্পের তহবিলে কোনো টাকা নেই। এ কারণে ৭৫৩ জন গেটরক্ষকের বেতন ভাতা হচ্ছে না।

তিনি আরও জানান, ৭৫৩ গেটরক্ষকের চাকরি প্রকল্পখাত থেকে রাজস্বখাতে স্থানান্তরের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। অন্যদিকে সংশোধিত প্রকল্প প্রস্তাবনা একনেকে অনুমোদন হলে তবেই গেটরক্ষকরা বেতন ভাতা পাবেন।

এসআই

Link copied!