লক্ষ্মীপুরে পদ নিয়ে পৌরসভার স্বাস্থ্য সহকারী ও নক্সাকারকের প্রতারণা

  • জামাল উদ্দিন বাবলু, লক্ষ্মীপুর | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১৫, ২০২৪, ০৯:১৯ পিএম
লক্ষ্মীপুরে পদ নিয়ে পৌরসভার স্বাস্থ্য সহকারী ও নক্সাকারকের প্রতারণা

মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ হিল হাকিম ও এবিএম আশ্রাফ উদ্দিন

লক্ষ্মীপুর: লক্ষ্মীপুর পৌরসভার স্বাস্থ্য সহকারী হয়ে আবদুল্লাহ হিল হাকিম ব্যবহার করে আসছেন স্যানেটারী ইন্সপেক্টর পদ (নিরাপদ খাদ্য পরিদর্শক)। প্রায় আড়াই বছর ধরে তিনি পদটি ব্যবহার করে আসছেন। দালিলিকভাবে এ পদে তিনি নিয়োগ পাননি। এখনো তিনি স্বাস্থ্য সহকারী হিসেবেই বেতন পাচ্ছেন। একই প্রতিষ্ঠানে মন্ত্রণালয় থেকে নিয়োগ না পেলে নক্সাকারক হিসেবে এবিএম আশরাফ চাকরি করে যাচ্ছেন। পদ নক্সাকারক হলেও তিনি পরিচয় দিয়ে বেড়াচ্ছেন উপ-সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে। এনিয়ে পৌর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে।

অভিযোগ উঠেছে, সাবেক মেয়র মোজাম্মেল হায়দার মাসুম ভূঁইয়া ক্ষমতার অপব্যবহার করে স্যানেটারী ইন্সপেক্টর ফজলে রাব্বানি জোরপূর্বক সরিয়ে দেন। পরে মেয়র তার অনুসারী হাকিমকে অবৈধভাবে পদটির দায়িত্ব দেন। এরপর থেকে হাকিম পদটি ব্যবহার করে আসছেন। এ পদ ব্যবহার করে তিনি বাজারে অভিযান চালাচ্ছেন, জন্মনিবন্ধনসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্রে স্বাক্ষর করছেন। তবে বেতন নিচ্ছেন সেই স্বাস্থ্য সহকারী হিসেবেই।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নক্সাকারক হিসেবে সাবেক মেয়র আবু তাহের তার দূর সম্পর্কের আত্মীয় এবিএম আশ্রাফ উদ্দিনকে ২০১৮ সালে মাষ্টাররুলে পৌরসভায় নিযুক্ত করেন। তবে তার চাকরি স্থায়ীকরণ হয়নি। এরপর নতুন মেয়রকে ম্যানেজ করে স্বপদে আশ্রাফ পৌরসভাতে রয়েছে। প্রকৌশল শাখায় কাজ করার সুবাধে তিনি পৌরসভার বিভিন্ন বাসাবাড়ি নির্মাণে তদন্তে যান। সেখানে তিনি রশিদের বাইরেও মানুষের কাছ থেকে টাকা আদায় করেন বলে অভিযোগ জানিয়েছেন পৌরসভায় চাকরিরত কয়েকজন কর্মচারী। তবে তার নাম প্রকাশ করতে রাজি হচ্ছেন না তারা কেউই। এছাড়া নক্সাকারক আশ্রাফ তার চেয়ারের পেছনে উপ-সহকারী প্রকৌশলীর স্টিকার লাগিয়ে রেখেছেন বলেও জানা গেছে। 

পৌরসভা কার্যালয় সূত্র জানায়, ২০২২ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি সাবেক মেয়র মাসুম ক্ষমতার অপব্যবহার করে স্যানেটারী ইন্সপেক্টর ফজলে রাব্বানিকে ওএসডি করে দেন। এরপর পদটি শূন্য দেখিয়ে তার অনুসারী হাকিমকে সেখানে বসান। ২০০১ সালে জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও লক্ষ্মীপুর পৌরসভার সাবেক মেয়র আবু তাহেরের আমলে হাকিম চাকরিতে যোগদান করেন। 

এছাড়া হাকিমের বিরুদ্ধে জন্মনিবন্ধন করতে আসা মানুষজনের সঙ্গেও রুঢ় আচরণের অভিযোগ রয়েছে।  ইটেরপুল এলাকার সাথী আক্তার, বাঞ্চানগরের রাকিব হোসেন ও সমসেরাবাদের ইব্রাহিম হোসেনসহ কয়েকজন তার খারাপ আচরণ সম্পর্কে প্রতিবেদককে জানিয়েছেন। তাদের দাবি, জন্মনিবন্ধন করতে বিভিন্ন কাগজপত্র প্রয়োজন হয়। তা একবারের বেশি দু’বার জিজ্ঞেস করলে তিনি (হাকিম) তাদের সঙ্গে গরম হয়ে কথা বলে। 

চক বাজার এলাকার ৩ জন ব্যবসায়ী জানান, প্রায়ই হাকিম নিরাপদ খাদ্য পরিদর্শক হিসেবে বাজারে অভিযান চালায়। নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতে অভিযান জরুরী। কিন্তু স্বাস্থ্য সহকারী হয়ে উচ্চ পদ ব্যবহার করে অভিযান চালানো মেনে নেওয়া যায় না। এমনিতেই তার অসদাচারণের কারণে ব্যবসায়ীরা ক্ষিপ্ত হয়ে উঠছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পৌরসভার মধ্য সারির ৫ জন কর্মচারী জানান, হাকিম স্বাস্থ্য সহকারীর হিসেবে পৌরসভায় নিয়োগ পান। এখনো ওই পদেই বেতন নিচ্ছেন। তবে এখন তিনি স্যানিটারী ইন্সপেক্টর হিসেবে সকল কাজ করছেন। যা আইন সিদ্ধ নয়। অতিরিক্ত বা ভারপ্রাপ্ত হিসেবে দায়িত্ব পেলে তা পদের সঙ্গে উল্লেখ করতে হয়। কিন্তু তিনি তাও করছেন না। সাবেক মেয়র মাসুম ক্ষমতার অপব্যবহার করে তাকে স্যানেটারী ইন্সপেক্টরের চেয়ারে বসিয়েছেন। 

নক্সাকারক এবিএম আশ্রাফ উদ্দিন বলেন, ২০২১ সাল থেকে আমাকে উপ-সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। নক্সাকারক হিসেবেই বেতন নিচ্ছি। নক্সাকারককে উপ-সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া যায়। রশিদের বাহিরে টাকা নেওয়ার অভিযোগ সত্য নয়। 

মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ হিল হাকিম বলেন, স্যানেটারী ইন্সপেক্টর পদ ব্যবহারে আমার কাছে প্রয়োজনীয় নথিপত্র রয়েছে। তবে এখনো কেন স্বাস্থ্য সহকারী পদের বেতন নিচ্ছেন, এমন প্রশ্নের সদুত্তর দিতে পারেননি তিনি। 

এই বিষয়ে লক্ষ্মীপুর পৌরসভার নির্বাহী কর্মকর্তা খান মোহাম্মদ ফারাবি বলেন, স্যানিটারী ইন্সপেক্টরের পদ একটি। কিন্তু পরিচয় দিচ্ছেন দুইজন। হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা জানিয়েছেন হাকিম এখনো স্বাস্থ্য সহকারী পদের বেতন নিচ্ছেন। তার স্যানেটারী ইন্সপেক্টর পদ ব্যবহার নিয়ে পৌর প্রশাসকের সঙ্গে কথা হয়েছে। নথিপত্র যাচাই করে এ ঘটনায় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আশ্রাফের বিষয়টি জানা নেই। নথিপত্র যাচাই করে সে বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

এসএস

Link copied!