রাজশাহী: রাজশাহী নগরীর ব্যস্ততম সিএন্ডবি মোড়ে বসে শাকের হাট। এই শাকের হাটে বিভিন্ন ধরনের টাটকা শাক কেটে বিক্রি করেন নারীরা। প্রতিদিন বিকেল থেকে শুরু করে রাত ১২ টা অবধি চলে শাক বিক্রি। শীত মৌসুমে রাজশাহী নগরীর সিএন্ডবি মোড়ের ফুটপাতের ওপর এই শাক বিক্রি করে এখন বহু নারীর কর্মসংস্থান গড়ে তুলেছেন। শীত মৌসুমের তিনমাসে এই শাক বিক্রি করে তাদের পুরো বছরের আয় ঘরে তুলেন। যা দিয়ে চলে এসব নারীদের সংসার। জমজমাট এই শাক বিক্রিকে ঘিরে এখন এই মোড়ের নাম হয়েছে শাকের হাট।
কর্মজীবী নারী পুরুষ থেকে শুরু করে সকলের পছন্দের বাজার এখন রাজশাহীর সিএন্ডবি মোড়ের শাকের হাট। প্রতিদিন এখন সেখানে জমজমাট শাক বিক্রি চলছে। উৎসব মুখর পরিবেশে বিক্রি হচ্ছে শাক। এই শাকের হাটের রয়েছে আলাদা বিশেষত্ব। কারণ এখানে শাক কেটে বিক্রি করা হয়। যা অন্য বাজারে পাওয়া যায় না। এখান থেকে শাক কিনে সরাসরি রান্না করা যায়। আলাদা ভাবে কাটা বাছাইয়ের প্রয়োজন হয় না। তাই রাজশাহী নগরীর সিএন্ডবি মোড়ের শাকের হাট প্রতিদিন বেশ জমজমাট শাক বেচাকেনা হয়।
এখানে কেটে-ধুয়ে রাখা হয় হরেক রকমের শাক। রাজশাহী পদ্মা নদীর বাঁধ ঘেঁষা সিঅ্যান্ডবি মোড়ে শীতের বিকেলে ফুটপাতজুড়ে বসে এই হাট। লোকসমাগম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে জমে ওঠে শাক কাটাকুটির এক ব্যতিক্রমী প্রতিযোগিতা।
সড়কের একাধারে পলিথিন বিছিয়ে ধারালো হাসুয়া নিয়ে পাশের ঝুড়িতে রাখা পদ্মার জেগে ওঠা চর থেকে নিয়ে আসা, মাসকালাই, খেসারি, বথুয়া, সাঞ্ছি, বুট, শর্ষেসহ নানান পদের শীতকালীন তরতাজা শাক ক্রেতাদের সামনেই কেটে ধুয়ে রান্নার উপযোগী করে বিক্রি করেন নারীরা।
আর এই শাক কমবেশি সবারই খুব প্রিয়। তাইতো একটু বাড়তি দাম দিয়ে হলেও কিনছেন ইচ্ছেমত। এখানে প্রকারভেদে প্রতি কেজি শাক বিক্রি হয় ৬০ থেকে ১২০ টাকা কেজি দরে। কুঁচি করে কেটে পরিবেশনের জন্য মজুরি বাবদ ২০ টাকা বাড়তি রেখে সর্বোচ্চ মূল্য ধরা হয় ৮০ থেকে ১৪০ টাকা।
এদিকে, ইট-পাথরের যান্ত্রিক জীবনের মানুষরা একটু সময় কাটানোর জন্য আসছেন সিঅ্যান্ডবিতে, বাড়ি ফেরার সময় হাতে করে নিয়ে যাচ্ছেন কেঁটে ধুয়ে রাখা এসব শাক। আর এই শীতের সতেজ শাকসবজির স্বাদই অন্য রকম। দৈনন্দিন খাদ্যতালিকায় শাকপাতা শরীরের জন্য খুবই উপকারী ও পুষ্টিকর।
এখানে শাক কিনতে আসা এক কর্মজীবী নারী বলেন, শাক রান্নার চেয়ে কাটা-বাছাই বেশি কষ্টকর। তাই মন চাইলেও শাক কিনতে পারিনা। তবে এখানে টাটকা শাক কেটে বিক্রি করা হচ্ছে, এরজন্য নিলাম। এগুলো এখন বাড়িতে নিয়ে গিয়ে কেবল তেল, মসলা দিয়ে রান্না করলেই হয়ে যাবে।
শাক বিক্রেতা মলি বেগম তার শাক বিক্রির গল্প শোনাতে গিয়ে বলেন, শাক কমবেশি সকলেরই পছন্দের খাবার। কিন্তু কাটা-বাছার কারণে অনেকেই তা কিনতে চান না। তাদের কথা চিন্তাকরেই মূলত কেটে-বেছে এইভাবে শাক বিক্রী শুরু করি। প্রথম দিকে তুলে এনে বিক্রি করতাম। এরপর স্থানীয় কয়েকজনের পরামর্শে গতবছর থেকে শাক এনে তা বেছে-ধুয়ে-কেটে বিক্রি শুরু করি। আমারটা দেখে এখানে শতাধিক নারী এখন এই পেশায় জড়িয়ে পড়েছে। বেচাকেনা ভালো হচ্ছে। আমার খুবই ভালো লাগছে।
রাজশাহী শহরের দক্ষিণ দিয়ে বাহিত পদ্মা নদীর চর থেকে নিয়ে আশা এসব শাক বিক্রি করেই তারা হচ্ছেন সাবলম্বী। ছোট্ট ব্যবসার লাভের অংশই তাদের নিত্যদিনের সংসারে সামান্য শাক-ভাতের জন্য যথেষ্ট। আর এভাবেই এগিয়ে যাচ্ছে চরের পিছিয়ে পড়া নারীরা। সংসারের হাল ধরছেন। ছেলে মেয়ের লেখা পড়ার খরচ মেটাচ্ছেন তারা। পরিবারে আসছে শান্তির বার্তা।
এসএস
আপনার মতামত লিখুন :