৮ বছর পর নাফ নদীতে মাছ ধরার অনুমতি, জেলেদের মাঝে স্বস্তি 

  • কক্সবাজার প্রতিনিধি | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০২৫, ০৯:৩১ পিএম
৮ বছর পর নাফ নদীতে মাছ ধরার অনুমতি, জেলেদের মাঝে স্বস্তি 

কক্সবাজার: বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত ঘেঁষা টেকনাফের নাফ নদীতে দীর্ঘ ৮ বছর যাবত মাছ শিকার বন্ধ ছিল। অবশেষে সেই নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়ে নদীতে মাছ শিকার করার জন্য জেলেদের অনুমতি দিয়েছে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন।

খবরটি স্থানীয় স্যোশাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ার সাথে সাথে নাফনদীর উপকুল ঘেঁষা জেলে পরিবারের মাঝে বিরাজ করছে আনন্দ।

তথ্য সূত্রে জানা গেছে, গত কয়েক দিন আগে নাফ নদীতে মাছ শিকারে অনুমতি দেওয়ার জন্য নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। তারই ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবার (১৩ ফেব্রুয়ারী) কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবরে নির্দেশনা বাস্তবায়ন করার জন্য একটি চিঠি প্রেরণ করা হয়েছে। এর সত্যতা নিশ্চিত করেছেন টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ এহসান উদ্দিন।

চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগ কর্তৃক জারিকৃত রুলে টেকনাফের নাফনদীতে জেলে কর্তৃক বৈধভাবে মাছ ধরা কার্যক্রম চালু করতে কক্সবাজার জেলা প্রশাসককে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে নির্দেশনা প্রদান করা হয় এবং পিটিশনার কর্তৃক এই কার্যালয়ে ১৫ আগস্ট ২০২৪ তারিখে দাখিলকৃত আবেদন যথাযথভাবে নিষ্পত্তি করতে বলা হয়। তারই ধারাবাহিকতায় নিম্নোক্ত শর্তসাপেক্ষে নাফ নদীতে মাছ ধরার অনুমতি প্রদান করেন জেলা প্রশাসক।

চিঠিতে জারি করা শর্ত গুলো হচ্ছে-
১. প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত নাফ নদীর বাংলাদেশ জলসীমায় শাহপরীর দ্বীপ হতে টেকনাফ জেটিঘাট পর্যন্ত মাছ ধরতে পারবে।

২. জেলেরা মাছ ধরতে যাওয়ার সময় বিজিবি'র ৫টি নির্ধারিত পোস্টে টোকেন/পরিচয়পত্র দেখাতে হবে, পাশাপাশি মাছ শিকার শেষে ফেরত আসার পর বিজিবির চেকপোস্টে তল্লাশী করার ব্যাপারে বিজিবি সদস্যকে সর্বাত্মক সহায়তা প্রদান করতে হবে। চেকপোস্টে অবিহিত না করে কোন জেলে উক্ত নদীতে মাছ শিকার করতে পারবে না। 

৩. বাংলাদেশের জলসীমা অতিক্রম করা থেকে জেলেদের সজাগ থাকতে হবে।

৪. মৎস্য অধিদপ্তরের হালনাগাদকৃত নিবন্ধিত জেলেদের তালিকাটি সীমান্ত প্রহরী বিজিবি, কোস্ট গার্ড ও সংশ্লিষ্ট আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে প্রদান করার পাশাপাশি নিবন্ধিত জেলে ব্যতীত অন্য কেউ যেন নাফ নদীতে মাছ শিকার করতে না পারে। 

৫. এই অনুমতি তিন মাস পর সীমান্তের পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে ফের নবায়ন করার জন্য উক্ত বিষয়ে পূণরায় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।

এ বিষয়ে দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে নাফ নদীতে মাছ শিকার করে আসা জেলে মোঃ ফারুক বলেন, আগামী ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে নাফ নদীতে মাছ শিকারে অনুমতি দেওয়ায় আমাদের জেলে পরিবারের মাঝে আগাম ঈদের আনন্দ বিরাজ করছে।

নাফনদীত মাছ শিকারের অনুমতি পাওয়ার পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সংশ্লিষ্ট প্রশাসন, স্থানীয় রাজনৈতিক ও গণমাধ্যম কর্মীদের প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন জেলে ও তাদের পরিবারের সদস্যরা।

একইসঙ্গে উক্ত নদীপথ দিয়ে মাদক চোরাচালান ও অবৈধ কর্মকাণ্ডে লিপ্ত থাকা অপরাধীদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় নিয়ে আসার জন্য জোর দাবী জানান। পাশাপাশি গুটি কয়েক অপরাধীদের কারণে অসহায় জেলেরা যেন সংশ্লিষ্ট বাহিনীর হাতে হয়রানির শিকার না হয় সে বিষয়ে সকলের সহযোগিতা কামনা করেন তারা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে টেকনাফ উপজেলা নাফনদী জেলে সমাজ কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ আমান উল্লাহ বলেন, দীর্ঘ ৮ বছর পর সরকারের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাই। দীর্ঘ প্রতিক্ষার পর নাফনদে মাছ শিকারে অনুমতি পাওয়ায় অসহায় জেলেদের মাঝে খুশি আর আনন্দের জোয়ার বইছে। সরকারের নির্দেশনানুযায়ী সকল নিয়ম অনুসরণ করে জেলেরা মাছ শিকারে যাবে। কেউ যাতে আড়ালে অবৈধ কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হতে না পারে সেদিকে নজর দেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে কক্সবাজার জেলা বিএনপির অর্থ-সম্পাদক আলহাজ্ব মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ অভিমত প্রকাশ করে বলেন, বিগত সরকারের আমলে মাছ শিকার বন্ধ থাকা নাফ নদী, বন্ধ গরু করিডোর, টেকনাফ টু সেন্টমার্টিন পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচলসহ সকল বৈধ ব্যবসার দ্বার উন্মোচন করার জন্য স্থানীয় জনতা সাথে নিয়ে মানববন্ধনসহ বিভিন্ন সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলেছি। অবশেষে দীর্ঘ প্রতিক্ষার পর হলেও জেলেরা নাফনদীত মাছ শিকারের অনুমতি পেয়েছে। জেলেদের দীর্ঘ কয়েক বছরের দুঃখ-কষ্ট মুছে তাদের পরিবারের সদস্যদের নিয়ে আনন্দের সাথে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করতে পারবে। বর্তমান সরকারের সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন তিনি।

আইএ

Link copied!