যান চলাচল বন্ধের সুযোগ নিয়েছে ভাসমান দোকান, পুলিশের নাম ভাঙিয়ে চাঁদাবাজির অভিযোগ 

  • কুমিল্লা প্রতিনিধি  | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: মার্চ ২৮, ২০২৫, ১০:০৯ পিএম
যান চলাচল বন্ধের সুযোগ নিয়েছে ভাসমান দোকান, পুলিশের নাম ভাঙিয়ে চাঁদাবাজির অভিযোগ 

কুমিল্লা: নগরীর কান্দিরপাড়ে ঈদকে কেন্দ্র করে বেড়েছে মানুষের ভিড়। কেনাকাটা করতে আসা ক্রেতাদের নির্বিঘ্ন চলাচল নিশ্চিত করতে নিউমার্কেট ও লিবার্টি মোড় এলাকায় সকল ধরনের যান চলাচল নিষিদ্ধ করেছে জেলা পুলিশ। জেলা ট্রাফিক বিভাগ ও কোতোয়ালি মডেল থানার যৌথ উদ্যোগে এই কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে বলে পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে।

যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকায় পায়ে হেঁটে চলাফেরা করতে হচ্ছে জনসাধারণকে। তবে এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে কিছু ভাসমান দোকান ভ্যানগাড়ি বা ঝুঁড়ি নিয়ে রাস্তার মাঝখানে বসে পড়েছে। ফুটপাত ও প্রধান সড়কের একাংশ দখল করে তারা বিভিন্ন পণ্য বিক্রি করছে, যা ক্রেতাদের চলাচলে বিঘ্ন ঘটাচ্ছে।

প্রথম দেখায় মনে হলেও, এসব দোকান একেবারে ভাসমান নয়। অনুসন্ধানে জানা গেছে, দোকানিদের নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকা দিয়ে এখানে বসতে হচ্ছে। অভিযোগ উঠেছে, নির্দিষ্ট কিছু লোককে চাঁদা দিয়ে এসব দোকান বসছে এবং প্রতিদিনই তাদের কাছ থেকে পুলিশের নাম নিয়ে চাঁদা আদায় করা হচ্ছে। পুলিশের উচ্ছেদ অভিযানের ভয় দেখিয়ে এমন চাঁদা তোলা হয় বলে জানিয়েছে বেশ কয়েকজন দোকানি।

সরেজমিনে বেশ কয়েকজন ভাসমান দোকানদারকে জিজ্ঞেস করে জানা গিয়েছে, নির্দিষ্ট কয়েকজন লোক প্রতিদিন এমন চাঁদা আদায় করছেন প্রতিদিনই। অনুসন্ধানে জানা যায়, নগরীর টাউনহল গেইটের সামনে থেকে মনোহরপুর ও নিউমার্কেটের সামনে পর্যন্ত প্রায় দুই শতাধিক ভাসমান দোকান বসেছে। এই দোকানগুলোতে পুলিশের পরিচয় দিয়ে বড় দোকানগুলো থেকে প্রতি দোকান দুই'শ টাকা ও ছোট দোকানগুলো থেকে এক'শ টাকা করে চাঁদা আদায় করা হয়। 
 
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বিক্রেতা বলেন, আমাদের কাছ থেকে প্রতিদিনই টাকা আদায় করা হয়। আমি ২০০ টাকা করে দিই প্রতিদিন। পুলিশের নাম দিয়ে এমন টাকা নেওয়া হয়। পুলিশও টাকা নিতো প্রথমে আমাদের কাছ থেকে। তবে এখন পুলিশের পরিচয় দিয়ে বা তাদের নাম ভাঙিয়ে নিয়ে যায় টাকা।

এদিকে, সম্প্রতি কান্দিরপাড় এলাকার ভাসমান দোকানগুলো থেকে চাঁদা নেওয়ার অভিযোগে এক পুলিশ সদস্যকে অন্যত্র বদলী করা হয় বলে পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক দোকানি বলেন, আমরা এখানে বিনা অনুমতিতে বসিনি। পুলিশের লোকজনকেই টাকা দিয়ে এখানে বসতে হয়েছে। পুলিশের নাম নিয়ে প্রতিদিন নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা দিতে হয়, না দিলে উঠে যেতে বলে। প্রতিদিন ইফতারের পর এসে আমাদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে যাওয়া হয়।

এদিকে, যানবাহন বন্ধ থাকায় কান্দিরপাড়ে জনস্রোত তৈরি হয়েছে। কিন্তু রাস্তার মাঝখানে বসা দোকানগুলোর কারণে হাঁটাও কঠিন হয়ে পড়েছে। কেনাকাটা করতে আসা ফারজানা আক্তার নামে এক ক্রেতা বলেন, প্রতিবছরই ঈদের বাজার করতে আসি, কিন্তু এবার মানুষের চলাচল এতটাই কষ্টকর হয়ে গেছে যে হাঁটতেই পারছি না। রাস্তার মাঝখানেই দোকান বসিয়ে রেখেছে, তাতে ভিড় আরও বেড়ে গেছে।

একই অভিযোগ করেন আরেক ক্রেতা রাজীব হাসান। তিনি বলেন, পুলিশ যদি যান চলাচল বন্ধ করে, তবে তারা রাস্তা দখল করেও দোকান বসাতে দিচ্ছে কেন? আমাদের চলাচল স্বাভাবিক রাখার জন্য যা করেছে, সেটাই আবার ব্যাহত হচ্ছে। এটাতো দ্বৈতনীতি!

স্থানীয়রা বলছেন, যান চলাচল বন্ধের উদ্যোগ ভালো, কিন্তু সেটার সুফল পেতে হলে ফুটপাত ও রাস্তাগুলো খালি রাখা দরকার। যেসব দোকান অবৈধভাবে বসছে, সেগুলোর বিরুদ্ধে প্রশাসনের ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। একইসঙ্গে চাঁদাবাজির অভিযোগও খতিয়ে দেখা প্রয়োজন, যাতে জনগণ কোনো ধরনের ভোগান্তিতে না পড়ে।

এদিকে পুলিশের নাম ভাঙ্গিয়ে চাঁদাবাজির এমন অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মহিনুল ইসলাম বলেন, পুলিশ কখনো এমন কাজে সম্পৃক্ত হয় না। কেউ যদি হয়ও আমরা অভিযোগ পেলে সাথে সাথে এর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিচ্ছি। সম্প্রতি এমন অভিযোগে একজনকে বদলীও করা হয়েছে। আরো কেউ যদি এমন কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত হয় আমরা সাথে সাথে এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। আর কেউ যদি পুলিশের নাম ভাঙ্গিয়ে চাঁদা আদায় করে, তাকে ধরতে পারলে কঠোরভাবে আইনের আওতায় আনা হবে।

এ বিষয়ে জেলা পুলিশ সুপার নাজির আহমেদ খান বলেন, পুলিশের নাম ভাঙ্গিয়ে চাঁদাবাজি করতে পারবে না কেউ। আমরা এর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।

এআর

Link copied!