ঢাকা : একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাটের গাড়িবহরে হামলার ঘটনায় মামলার বাদী সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদারের শ্যালক মোহাম্মদ ইশতিয়াক মাহমুদকেও অভিযুক্ত করে নতুন করে অভিযোগ গঠন করেছে আদালত।
ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতের বিচারক নূরুল হুদা চৌধুরী রোববার (১৯ নভেম্বর) আসামিপক্ষের সময়ের আবেদন নাকচ করে অভিযোগ গঠন করেন। এ মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ শুরুর জন্য আগামী ৬ ডিসেম্বর দিন রেখেছেন তিনি।
পাঁচ বছর আগের এ মামলায় আসামি মোট নয়জন। তাদের মধ্যে আটজনের বিরুদ্ধে আগেই অভিযোগ গঠন হয়েছিল। তারপর ছয়জনের সাক্ষ্যও শুনেছিল আদালত।
কিন্তু সাক্ষীদের বক্তব্যে ইশতিয়াক মাহমুদের নাম আসায় মামলাটি পুনঃতদন্তে পাঠানো হয়। গোয়েন্দা পুলিশের সম্পূরক অভিযোগপত্রে আগের আসামিদের সঙ্গে ইশতিয়াককেও আসামি করা হয়। গত ৪ অক্টোবর গ্রেপ্তার হওয়ার পর জামিনে মুক্তি পান তিনি।
তার আইনজীবী এ এইচ ইমরুল কায়সার জানান, রোববার (১৯ নভেম্বর) অভিযোগ গঠনের শুনানিতে তারা সময়ের আবেদন করেছিলেন। কিন্তু বিচারক তা নাকচ করে অভিযোগ গঠনের শুনানি করেন।
শুনানিতে ইশতিয়াক মাহমুদের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল তিনি দোষী, নাকি নির্দোষ। তিনি নিজেকে নির্দোষ দাবি করে আদালতের কাছে সুবিচার চান। আদালত পরে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের আদেশ দেন।
এ মামলায় অভিযুক্ত বাকি আসামিরা হলেন- নাইমুল হাসান রাসেল, ফিরোজ মাহমুদ, মীর আমজাদ হোসেন, মো. সাজু ইসলাম, রাজিবুল ইসলাম রাজু, শহিদুল আলম খান কাজল, সিয়াম ও অলি আহমেদ ওরফে জনি।
তাদের মধ্যে নাইমুল হাসান রাসেল মোহাম্মদপুর থানা ছাত্রলীগের সভাপতি, বাকিরাও আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের কর্মী।
হামলা ও মামলার পূর্বাপর : মার্শা বার্নিকাটের গাড়িবহরে হামলার ঘটনায় ২০১৮ সালের ১০ অগাস্ট রাতে ড. বদিউল আলম মজুমদার বাদী হয়ে মোহাম্মদপুর থানায় মামলা দায়ের করেন।
ওই হামলার আড়াই বছরের মাথায় ২০২১ সালের ১৮ জানুয়ারি আদালতে ৯ জনের নামে অভিযোগপত্র দেন তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের পরিদর্শক মো. আব্দুর রউফ।
পরের বছর ২০২২ সালের ১ মার্চ তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের পর রাষ্ট্রপক্ষের বেশ কয়েকজনের সাক্ষ্য নেওয়া হয়।
সবশেষ গত বছরের ৪ ডিসেম্বর এ মামলায় ছয়জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়। সাক্ষী ড. বদিউল আলম মজুমদার, খুশি বেগম ও মাহবুবুল আলম মজুমদার তাদের জবানবন্দিতে ইশতিয়াক মাহমুদ নামের একজনের জড়িত থাকার কথা বলেন।
কিন্তু অভিযোগপত্রে তার নাম না থাকায় গত ২৭ ডিসেম্বর মামলাটির অধিকতর তদন্তের জন্য রাষ্ট্রপক্ষের তরফ থেকে আদালতের কাছে আবেদন করা হয়। শুনানি নিয়ে ১ জানুয়ারি অধিকতর তদন্তের আদেশ দেন বিচারক।
আগের অভিযোগপত্রে বলা হয়, ২০১৮ সালে ৪ আগস্ট রাতে ড. বদিউল আলম মজুমদারের ইকবাল রোডের বাসায় নৈশভোজের দাওয়াতে গিয়ে বার্নিকাট হামলার শিকার হন। ওই রাতে ‘নৈশভোজের নামে’ তিনি গণফোরামের সভাপতি কামাল হোসেনসহ আরও কয়েকজনের সঙ্গে ‘সরকারবিরোধী ষড়যন্ত্র করছিলেন বলে খবর পায়’ স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা।
আনুমানিক রাত ১১টায় ছাত্রলীগের নাইমুল হাসান ওরফে রাসেলের নেতৃত্বে স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীদের একটি দল ইটপাটকেল ছোড়ে। তারা বার্নিকাটের গাড়ি ধাওয়া করলে তিনি দ্রুত ঘটনাস্থল ছাড়েন।
অভিযোগপত্রে পুলিশ বলেছিল, সুজনের সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদারের বাড়িতেও সেই রাতে ঢিল ছোড়া হয়। জানালার কাচ ভাঙচুর করা ছাড়াও বদিউল, তার স্ত্রী ও ছেলে মাহবুব মজুমদারকে জীবননাশের হুমকি দেওয়া হয়। মাহবুবকে ধাক্কা দিয়ে আঘাত করেন আসামিরা। বাড়ির প্রধান গেট ধাক্কাধাক্কি করে ও ভয়ভীতি দেখিয়ে তারা চলে যান।
সেখানে অভিযোগে বলা হয়, ওই রাতে ৩০-৪০ জন দুর্বৃত্ত বার্নিকাটের গাড়িতে হামলা করে। তারা ড্রাইভার ও বদিউলের ছেলের ওপর আক্রমণ করে। বার্নিকাটের গাড়ির পেছনে ধাওয়া করে এবং ঢিল ছোড়ে। এ সময় পিস্তল ও লাঠিসোঁটা নিয়ে মার্কিন রাষ্ট্রদূতের গাড়িতে আগুন দেওয়ার উসকানি দেয় দুর্বৃত্তরা।
বার্নিকাটের গাড়ি দ্রুত বেগে স্থান ত্যাগ করার পর দুর্বৃত্তরা বাদী বদিউলের বাসায় হামলা চালায়। জানালার কাচ ভাঙচুর করে। বাসার গেট ভেঙে ভেতরে প্রবেশের চেষ্টা করে।
ঘটনার দিন বদিউলের বাসায় বার্নিকাট ছাড়াও কামাল হোসেন, তার স্ত্রী হামিদা হোসেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা হাফিজ উদ্দিন আহমেদসহ বেশ কয়েকজন উপস্থিত ছিলেন। রাজধানীসহ সারাদেশে নিরাপদ সড়ক আন্দোলন চলছিল সে সময়।
এমটিআই
আপনার মতামত লিখুন :