ঢাকা : বিএনপির সমাবেশ ঘিরে গত ২৮ অক্টোবরের সংঘর্ষের দিন নাশতকার অভিযোগে পল্টন থানার মামলায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের আবেদন নাকচ করে দিয়েছে আদালত।
তার বদলে তাদের কারাফটকে জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুমতি দিয়েছেন ঢাকার মহানগর হাকিম রাজেশ চৌধুরী।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও পল্টন মডেল থানার এসআই সুমিত কুমার সাহা গত ১৪ ডিসেম্বর দুই বিএনপি নেতাকে এ মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে ১০ দিনের রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করেছিলেন।
সোমবার (১৮ ডিসেম্বর) দুপুরে সেই আবেদনের ওপর শুনানি হয়।
পুলিশের আবেদনে বলা হয়েছে, এজাহারনামীয় ও তাদের সহযোগী আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে বেআইনি জনতাবদ্ধে দাঙ্গা হাঙ্গামা করতে বাঁশের লাঠি নিয়ে সজ্জিত হয়ে পুলিশকে আক্রমণ, বলপ্রয়োগ ও ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে গুরুতর জখম করে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টিসহ ব্যক্তি ও সম্পত্তির ক্ষতি সাধন করে। উল্লেখিত আসামিরা বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা। তারা ঘটনার দিন নাশকতা ও অরাজক পরিবেশ সৃষ্টির জন্য প্রকাশ্যে বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের নির্দেশনা দেন। যার পরিপ্রেক্ষিতে এজাহারনামীয় ও পলাতক আসামিরা পল্টন মডেল থানার সামনে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র দিয়ে পুলিশের ওপর আক্রমণ এবং ককটেল বিস্ফোরণ করে পুলিশ সদস্যদের গুরুতর আহত করে।
সেখানে আরও বলা হয়, মামলার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে উল্লেখিত দুই আসামিকে (মির্জা ফখরুল ও আমীর খসরু) এ মামলায় গ্রেফতার দেখানোপূর্বক মামলার রহস্য উদঘাটন, পলাতক আসামিদের গ্রেপ্তার, ককটেল নিক্ষেপকারীদের শনাক্ত ও গ্রেফতার করতে জিজ্ঞাসাবাদ ও অভিযান পরিচালনার জন্য ১০ দিনের পুলিশ হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন।
অন্য মামলায় কারাগারে থাকা মির্জা ফখরুল ও আমীর খসরুকেও এদিন আদালতে হাজির করা হয়। শুনানি শেষে বিচারক রিমান্ড আবেদন নাকচ করে তাদের কারা ফটকে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেন।
জাতীয় নির্বাচনের আগে ‘সরকার পতনের’ এক দফা দাবিতে ২৮ অক্টোবর সমাবেশ ডেকেছিল বিএনপি। ২০ শর্তে তাদের সমাবেশের অনুমতি দেয় পুলিশ।
সেদিন দুপুরের আগে নয়াপল্টন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ শুরুর পর কাছেই কাকরাইল মোড়ে দলটির নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ শুরু হয়। পরে তা ছড়িয়ে পড়ে আশপাশের এলাকায়। শান্তিনগর, নয়াপল্টন, বিজয়নগর, ফকিরাপুল, আরামবাগ এবং দৈনিক বাংলা মোড় এলাকা রণক্ষেত্রে রূপ নেয়।
সংঘর্ষের মধ্যে পুলিশ বক্সে আগুন দেওয়া হয়। পুলিশ হাসপাতালে ঢুকে একটি অ্যাম্বুলেন্সে আগুন দেওয়া হয়, ভাঙচুর অগ্নিসংযোগ করা হয় আরো ডজনখানেক যানবাহন। হামলা করা হয় প্রধান বিচারপতির বাসভবনে।
দৈনিক বাংলা মোড়ে পুলিশ কনস্টেবল আমিরুল ইসলাম পারভেজকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়। সংঘাতে প্রাণ যায় যুবদলের মুগদা থানার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের নেতা শামীম মোল্লার।
সংঘর্ষের মধ্যে পণ্ড হওয়া সমাবেশ থেকেই পরদিন সারাদেশে হরতালের ডাক দেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ২৯ অক্টোবর সেই হরতালের সকালে গুলশানের বাসা থেকে ফখরুলকে গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা পুলিশ।
সেদিন রাতে প্রধান বিচারপতির বাসভবনে ভাঙচুরের ঘটনায় রমনা থানার মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে ফখরুলকে আদালতে তোলা হয়।
এরপর হাকিম ও জজ আদালতে জামিন চেয়েও পাননি ফখরুল। হাই কোর্টে তার জামিন প্রশ্নে একটি রুল শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে।
আর বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীকে ২ নভেম্বর রাত পৌনে ১টার দিকে গুলশানের একটি বাসা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। পুলিশ কনস্টেবল আমিরুল পারভেজকে হত্যার ঘটনায় পল্টন থানার মামলায় ৬ দিনের রিমান্ডে নিয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ।
রিমান্ড শেষে হাকিম আদালত খসরু জামিন নাকচ করে তাকে কারাগারে পাঠায়। পরে জজ আদালতও এই বিএনপি নেতার জামিন নামঞ্জুর করে।
এমটিআই
আপনার মতামত লিখুন :