চলছে গণগ্রেপ্তার, আদালতে স্বজনদের ভিড়

  • আদালত প্রতিবেদক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: জুলাই ২৫, ২০২৪, ১০:০০ এএম
চলছে গণগ্রেপ্তার, আদালতে স্বজনদের ভিড়

ঢাকা : রাজধানীর পুরান ঢাকায় অবস্থিত ঢাকা মহানগর দায়রা আদালত প্রাঙ্গণে একেকটি প্রিজন ভ্যান আসছে আর অমনি মানুষ হুমড়ি খেয়ে পড়ছে আপনজনের সন্ধানে। কারো ভাই, কারো সন্তান, কারো স্বামী। গেলো কয়েক দিনের ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’র পর পুলিশ ও ডিবি পুলিশ গ্রেপ্তার করে নিয়ে এসেছে তাদের।

বুধবার (২৪ জুলাই)  ঢাকার সিএমএম আদালত প্রাঙ্গণ ঘুরে লক্ষ্য করা গেছে হৃদয়বিদারক চিত্র, কেউ বুক চাপড়িয়ে বিলাপ করছেন। কেউ হু হু করে কাঁদছেন অঝোরে। কেউবা সন্তানকে কারাগারে নিয়ে যাওয়ার সময় ছুটছেন প্রিজন ভ্যানের পিছু পিছু।

জানা গেছে, রাজধানীর অন্তত ৫৩টি থানা থেকে গ্রেপ্তারকৃতদের কোর্টে চালান করা হয়েছে। ১৫-২০ মিনিট পর আদালতের গারদে এসে ভিড়ছে একেকটি প্রিজন ভ্যান। গাদাগাদি করে ভ্যানে ঢোকানো ‘আসামি’দের গারদে পোরা হচ্ছে। হাতকড়া ও দড়ি দিয়ে বেঁধে তাদের তোলা হচ্ছে কাঠগড়ায়। আইনজীবীরা গ্রেপ্তারকৃতদের পক্ষে জামিন চাইছেন। কিন্তু পুলিশ বাদী হয়ে করা প্রায় সব মামলায়ই রয়েছে সন্ত্রাসবিরোধী আইনের ধারা। ফলে ম্যাজিস্ট্রেট আদালত জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে পাঠিয়ে দিচ্ছেন কারাগারে। কারাগারগুলো এখন নতুন ‘আসামি’তে পূর্ণ।

এদিকে রাজধানীসহ সারাদেশেই চলছে গণগ্রেপ্তার। বিশেষত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ চলাকালে যে নজিরবিহীন ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে, সেই ঘটনায় সংশ্লিষ্টদের কাউকে আর ছাড় না দেয়ার প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার পর শুরু হয় ব্যাপক গণগ্রেফতার। এই গণগ্রেপ্তারে পুলিশের বিরুদ্ধে ‘গ্রেপ্তার বাণিজ্য’র অভিযোগও রয়েছে।

গ্রেপ্তার আতঙ্কে সাধারণ মানুষও ঘরে থাকতে পারছে না। বিশেষত নিম্ন আয়ের শ্রমজীবী, মেহনতি মানুষের পারিবারিক জীবনে নেমে এসেছে বিপর্যয়। উপার্জনক্ষম একমাত্র পুরুষ ব্যক্তির গ্রেফতারে তাদের জীবনে নেমে এসেছে দুর্বিষহ অবস্থা।

এ চিত্র শুধু রাজধানীই নয়। বন্দর নগরী চট্টগ্রাম, রাজশাহী, রংপুর, সিলেট, বগুড়া, দিনাজপুর, বরিশাল, খুলনা, কুমিল্লাসহ বিভিন্ন বিভাগীয় শহর ও জেলা শহরের চিত্র প্রায় অভিন্ন। ইতিমধ্যেই গ্রেফতার করা হয়েছে অন্তত কয়েক হাজার মানুষকে।

আন্দোলনের সময় ভয়ের মধ্যে থাকলেও গেলো কয়েকদিন ধরে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে পুলিশ। মোড়ে মোড়ে চালাচ্ছে তল্লাশি। শরীর, পকেট হাতাচ্ছে। মোবাইল ফোন হাতিয়ে নিয়ে চেক করছে। আন্দোলনের কোনো ছবি কিংবা ভিডিও ফুটেজ থাকলেই কোনো কথা নেই। হাতকড়া পরিয়ে তুলে নিচ্ছে ভ্যানে। যদিও সেনাবাহিনীর টহল চলছে। এর ফাঁকে ফাঁকে চলছে পুলিশী তল্লাশি।

যে সব এলাকায় বিক্ষোভ, অগ্নিসংযোগ, ভাংচুর ও সংঘাত সংঘর্ষ বেশি সংঘটিত হয়েছে সেসব এলাকার বাসা-বাড়ি ও মেসবাড়িতে আইন-শৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা অভিযান চালাচ্ছে। সন্দেহজনক কাউকে পেলেই ধরে নিয়ে যাচ্ছে। পুলিশের নয়া গ্রেফতার আতঙ্কে মানুষের ঘুম রীতিমতো হারাম হয়ে গেছে।

ঢাকা বারের সিনিয়র আইনজীবী মাহবুবুর রহমান বলেন, অনেক আন্দোলন দেখেছি। আন্দোলনের পর গণগ্রেপ্তারও দেখেছি। কিন্তু এবারের মতো এতো অধিক সংখ্যক গ্রেপ্তার কখনো দেখিনি।

তিনি বলেন, এলাকার রেফারেন্সে আসামির অভিভাবকরা যোগাযোগ করেন। কম বয়সী ছোট ছোট ছেলেদের ধরে নিয়ে আসা হচ্ছে। ফি’র কথা চিন্তা না করে মানবিক কারণে তাদের জামিনের জন্য কাজ করছি।

এমটিআই

Link copied!