ঢাকা : ব্যবসায়ী কবির হোসেন তাপসের ব্যাংক হিসাবে লেনদেন হয়েছে ১৩৪ কোটি টাকা। তবে জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশত্যাগ করার পর পরই এসব আমানতের মধ্যে ১২০ কোটি টাকা উত্তোলন করা হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মতে, স্থগিত হিসাবে এখন আছে মাত্র ১৪ কোটি টাকা। ব্যবসায়ী কবির হোসেনের ব্যাংক হিসেব হলেও এই লেনদেনের সঙ্গে মুন্নী সাহার নাম উঠে এসেছে। কারণ, এই ব্যাংক হিসেবের নমিনি মুন্নী সাহা। তার স্বামী কবির হোসেন তাপসের ভাষ্য, এই ব্যাংক অ্যাকাউন্ট আমার নামে। এর নমিনি মুন্নী সাহা। মুন্নী সাহার এর সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা নেই।
এদিকে, লেনদেনের হিসেব করলে দেখা যায়, ১৭টি ব্যাংকের মাধ্যমে এসব এ লেনদেন হয়েছে। সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে বেসরকারি ওয়ান ব্যাংকের মাধ্যমে। বিধিবহির্ভূত লেনদেনের অভিযোগে মুন্নী সাহার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ইতোমধ্যে জব্দ করেছে বাংলাদেশের আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিট (বিএফআইইউ)।
বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, ওয়ান ব্যাংকের কারওয়ান বাজার শাখায় মুন্নী সাহার স্বামী কবির হোসেন তাপসের মালিকানাধীন এমএস প্রমোশনের নামে ২০১৭ সালের ২ মে একটি হিসাব খোলা হয়, যেখানে নমিনি হিসেবে নাম রয়েছে মুন্নী সাহার।
অন্যদিকে ব্যাংকটির চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ শাখায় জনৈক মাহফুজুল হকের মালিকানায় প্রাইম ট্রেডার্সের নামে ২০০৪ সালের ২১ জুলাই একটি হিসাব খোলা হয়। দুটি প্রতিষ্ঠানের নামে ব্যাংকটি থেকে ৫১ কোটি ৫০ লাখ টাকার ঋণ নেওয়া হয়। ঋণ পরিশোধ না করে বারবার সুদ মওকুফ ও নবায়ন করেছে ব্যাংকটি। এর মধ্যে কেবল ২০১৭ সালেই সুদ মওকুফ করা হয় ২৫ কোটি ৭৮ লাখ টাকার। যদিও প্রতিষ্ঠান দুটির মধ্যে পারস্পারিক ব্যবসায়িক কোনো সম্পর্ক নেই। অথচ বিভিন্ন তারিখে হিসাব দু’টির মধ্যে বিপুল অংকের অর্থ লেনদেন হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুসন্ধানে ২০১৯ সালের ২৯ সেপ্টেম্বরের একটি উদাহরণ তুলে ধরে বলা হয়েছে– ওই দিন আলাদা তিনটি চেকের মাধ্যমে এমএস প্রমোশনের হিসাব থেকে প্রাইম ট্রেডার্সের হিসাবে ৫৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা স্থানান্তর করা হয়, যা সন্দেহজনক। এই অর্থ পাচার হয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখছে বিএফআইইউ। তবে অস্বাভাবিক লেনদেনের কথা অস্বীকার করেছেন মুন্নী সাহার স্বামী তাপস।
গত ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর ৬ অক্টোবর বিএফআইইউ মুন্নী সাহার ব্যাংক হিসাব তলব করে। এদিকে, ব্যাংক হিসাবের বাইরে গুলশান-তেজগাঁও লিংক রোড এলাকায় শান্তিনিকেতনে ১৬৫, রোজাগ্রিনে তার একটি ডুপ্লেক্স বাড়ির সন্ধান মিলেছে।
এদিকে ওয়ান ব্যাংকের কারওয়ান বাজার শাখার অ্যাকাউন্ট নিয়ে জানতে চাইলে কবির হোসেন তাপস বলেন, ‘এই অ্যাকাউন্টটি আমার, নমিনি মুন্নী সাহা। অ্যাকাউন্টের বিষয়ে মুন্নী সাহা কিছুই জানেন না। আমি বিজ্ঞাপন সংস্থা ও ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। মূলত আমার ব্যবসায়িক কাজেই এই অ্যাকাউন্টে অর্থ লেনদেন হয়েছে। এছাড়াও অন্যান্য স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ব্যাংক হিসাবগুলোও আমার ব্যবসায়িক স্বার্থে ব্যবহৃত। এগুলোর সঙ্গে মুন্নী সাহার কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই।’
এখনও অ্যাকাউন্টে ১৪ কোটি টাকা আছে উল্লেখ করলে তিনি বলেন, ‘এখন অ্যাকাউন্টে কোনো টাকা নেই। এটা ভুল তথ্য। আর কিছুদিন আগে যে টাকা উত্তোলনের কথা বলা হয়েছে সেটাও ঠিক না। এত টাকা আমরা কীভাবে তুলব, কোথায় তুলেছি। ওয়ান ব্যাংকে গিয়ে খোঁজ নিলেই বিষয়টি জানা যাবে। তবে যাই হোক না কেন আমার ব্যবসার স্বার্থেই এসব লেনদেন হয়েছে। আর এগুলো একদিনের লেনদেন না, বহুদিনের।’
তাহলে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুসন্ধানে যা উঠে এসেছে সেটা কী ভুল এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘না ভুল নয়। তবে বিষয়টি এমনও নয়।’ বিষয়টি আইনিভাবে মোকাবিলা করবেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘না আমরা আইনি কোনো প্রক্রিয়ায় যাব না।’
এমটিআই
আপনার মতামত লিখুন :