ঢাকা : বিদেশ থেকে জামায়াত-বিএনপির অন্তত ৭শ নেতা বাংলাদেশে নাশকতা কাজে অর্থের জোগান দিচ্ছে। শুধু নাশকতা নয়, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সরকারবিরোধী গুজব ও নানা কর্মকাণ্ডে এ অর্থে পরিচালিত হয়। দেশে জামায়াত সমর্থিত কিছু এনজিওর মাধ্যমে আসে এ অর্থ। পরে এ অর্থ বিতরণ করা হয় নাশকতাসহ দেশবিরোধী কাজে। গোয়েন্দাদের কাছে এমন তথ্য আসায় বাড়ানো হয়েছে নজরদারি।
কর্মকর্তারা বলছেন, ইউরোপ ও আমেরিকায় বসবাস করছে এসব জামায়াত বিএনপির নেতারা।
গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তারা বলছেন, দেশের বাইরে বসবাসরত অন্তত ৭ শ প্রবাসী এ কাজে জড়িত। জামায়াতের পরিচালিত কিছু এনজিওতে তারা বিদেশ থেকে টাকা পাঠান। তাদেরকে চিহ্নিত করা হয়েছে। আগামী নির্বাচনকে ঘিরে বড় ধরনের নাশকতায় তারা অর্থায়ন করতে যাচ্ছে এ ধরনের গোপন তথ্যে পাওয়াতে ইতোমধ্যে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।
মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম-কমিশনার হারুনুর রশিদ সাংবাদিকদের বলেন, জামায়াত পরিচালিত শতাধিক এনজিওতে ওই সব প্রবাসীরা টাকা পাঠান। আর এ টাকায় দেশে নাশকতাসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব ছড়ানোর কাজে ব্যবহার করা হয়। আমরা ইতমধ্যে নজরদারি বাড়িয়েছি।
সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, ২০০১ সালে জামায়ত-বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালীন সময়ে বিপুল সংখ্যক শিবির কর্মীদের বিভিন্ন কাজে দেশের বাইরে পাঠানো হয়।
বর্তমানে তারা সেখানে ব্যবসা-বাণিজ্য, চাকরি করে অবস্থান তৈরি করেছেন। ২০০৮ সালে ক্ষমতার পালাবদলের পর আরো কিছু বিএনপি ও জামায়াতের নেতারা দেশ থেকে পালিয়ে যায়। এরপর থেকে তারা দেশে নানা ইস্যু তৈরি করে নাশকতা চালানোয় অর্থ দিয়ে আসছেন। আর এ অর্থ আসছে জামায়াত কেন্দ্রিক বিভিন্ন এনজিওর মাধ্যমে।
সূত্র বলছে, সরকারবিরোধী আন্দোলনে হরতাল, গাড়ি পোড়ানোসহ নানা নাশকতায় এ অর্থ ব্যয় হয়ে আসছে। সর্বশেষ গত মার্চে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফরকে ঘিরে হেফাজতের ব্যানারে দেশব্যাপী ব্যাপক তাণ্ডব চালানো হয়।
রাজধানী ঢাকাসহ চট্টগ্রাম, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কিশোরগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, ফেনী, কুমিল্লা, মুন্সীগঞ্জসহ বেশকিছু জেলায় নজিরবিহীন তাণ্ডব চালানো হয়। এতে প্রায় অর্ধশতাধিক মানুষ হতাহত হন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বিজিবি মোতায়েন করে সরকার।
সূত্র বলছে, ওই নাশকতায় বিপুল পরিমাণ টাকা ব্যয় করা হয়। হেফাজতের আড়ালে জামায়াত-শিবির ও জামায়াত-শিবির সমর্থক একশ্রেণির জঙ্গিরা এ নাশকতায় জড়িত বলে গোয়েন্দারা প্রমাণ পান।
গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বলছেন, নাশকতায় দেশের বাইরে টাকা পাঠানো এ ধরনের প্রায় ৭ শ ব্যক্তিকে চিহ্নিত করা হয়েছে। তারা যে সব এনজিওতে টাকা পাঠান সেগুলোকে নজরদারির আওতায় আনা হয়েছে।
কর্মকর্তারা বলছেন, আগামী নির্বাচনকেন্দ্রিক এ গোষ্ঠীটি বিপুল অঙ্কের অর্থ ব্যয় করে দেশে অরাজকতা সৃষ্টি করতে চায়। সে লক্ষ্যে তারা প্রস্তুতি নিচ্ছে। তারা যেন এ ধরনের পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে না পারে সে ব্যাপারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও প্রস্তুতি নিয়েছে।
মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম-কমিশনার হারুনুর রশিদ সাংবাদিকদের বলেন, সম্প্রতি রাজধানীর ভাটারা এলাকা থেকে জামায়াতের কেন্দ্রীয় সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরোয়ারসহ যে ৯ জনকে আটক করা হয়েছিল তাদের দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদ, তাদের নিকট থেকে উদ্ধার হওয়া নথিপত্র ও একটি ল্যাপটপ থেকে চাঞ্চল্যকর এসব তথ্য পাওয়া যায়।
তিনি আরো বলেন, তাদের নিকট থেকে পাওয়া তথ্যে সাবেক অন্তত ৭শ শিবিরকর্মী যারা দেশের বাইরে থাকেন। আর এরাই বিভিন্ন এনজিওতে টাকা পাঠায়। আর এদের অর্থেই চলে নাশকতা।
গোয়েন্দা পুলিশের এই যুগ্ম-কমিশনার বলেন, আমরা প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। নাশকতার পরিকল্পনাকারী থেকে শুরু করে যারা নাশকতায় করবে তাদের কঠোরভাবে দমন করা হবে।
জানা যায়, গত ৬ সেপ্টেম্বর রাজধানীর ভাটারা এলাকা থেকে গোপন বৈঠককালে জামায়াতের ৯ নেতাকর্মীকে আটক করা হয়।
আটককৃতরা হলেন-জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার, অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আজাদ, রফিকুল ইসলাম খান, নির্বাহী পরিষদের সদস্য ইজ্জত উল্লাহ, মোবারক হোসেন, আব্দুর রফ, ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি ইয়াসিন আরাফাত ও জামায়াত কর্মী মনিরুল ইসলাম ও আবুল কালাম। গ্রেপ্তারের সময়ে তাদের কাছে রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্রের পরিকল্পনার বৈঠকের আলামত হিসেবে কিছু বই, ল্যাপটপ ও ব্যানার জব্দ করা হয়।
জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীরা একত্রিত হয়ে জননিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব বিপন্ন করা, ব্যক্তিসত্তা বা প্রজাতন্ত্রের সম্পত্তির ক্ষতিসাধনসহ শেখ হাসিনা সরকারকে অবৈধভাবে উৎখাত করার উদ্দেশ্যে গোপন ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে এমন খবর পায় পুলিশ। আর সেই গোপন খবরের ভিত্তিতে তাদের আটক করে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা করা হয়।
জানা যায়, সন্ত্রাসবিরোধী এ মামলায় দু-দফা রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করে গোয়েন্দারা। পাশাপাশি জব্দ করা ল্যাপটপটি পরীক্ষা নিরীক্ষা করে গোয়েন্দারা। আর সেখান থেকে মেলে চাঞ্চল্যকর তথ্য।
গোয়েন্দারা জানান, ২০১৮ থেকে ২০৪৮ এই ৩০ বছরের মাস্টারপ্ল্যান বানিয়েছে জামায়াত। এর মধ্যে সরকারের ২৫ সেক্টরে জামায়াতের প্রায় ২ লাখ কর্মী নিয়োগ করবে। কৃষক শ্রমিককে দলে ভেড়াতে ট্রেড ইউনিয়ন চালু, এক্ষেত্রে তরুণদের টার্গেট করা হয়েছে। জামায়াতের পরিচালিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কলবর বৃদ্ধি করা করা।
গোয়েন্দরা জানান, সারা দেশে বিভিন্ন নামে অন্তত ৪ শ ট্রেড ইউনিয়ন চালু করেছে। আর এ ট্রেড ইউনিয়নের মাধ্যমে দলকে সংগঠিত করার কাজ করছে।
জানা যায়, একাত্তরে যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত দল জামায়াত ইসলামীর ২০১৩ সালে একটি রিটে রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধন বাতিল করে হাইকোর্ট। এরপর ২০১৮ সালে এটি গ্যাজেট আকারে প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন। বিগত নির্বাচনে বিএনপির সঙ্গে জোটবদ্ধ দলটি ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করে। কিন্তু বর্তমানে টানাপোড়নের কারণে নিজস্ব স্বকীয়তায় রাজনীতিতে ফেরার চেষ্টা করছে দলটি।
সরকারবিরোধী আন্দোলনে জামায়াত-শিবির সারা দেশে ব্যাপক তাণ্ডব চালায়। পেট্রোল বোমা, বাসে আগুন দিয়ে সাধারণ নিরীহ মানুষ হত্যার মতো অভিযোগ উঠে দলটির বিরুদ্ধে। এছাড়াও জামায়াত নির্বাচনকালীন সময়ে ভোট কেন্দ্র পুড়িয়ে দেওয়া, প্রিজাইডিং অফিসারকে হত্যা করার মতো কাজ করতেও দ্বিধাবোধ করেনি। সূত্র : বাংলাদেশের খবর
সোনালীনিউজ/এমটিআই
আপনার মতামত লিখুন :