ছাতা আর চাদরের আড়ালে স্বর্ণের দোকান লুট, গ্রেপ্তার ৮

  • নিজস্ব প্রতিবেদক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: জুন ১৫, ২০২৩, ০৪:৪৬ পিএম
ছাতা আর চাদরের আড়ালে স্বর্ণের দোকান লুট, গ্রেপ্তার ৮

ঢাকা: রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন শহরে স্বর্ণের দোকান, ব্যাংকসহ বিভিন্ন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে অভিনব কৌশলে চুরি করে আসছিলো একটি চক্র। 

চক্রের টার্গেট হওয়া দোকান বা প্রতিষ্ঠানটি কিছু দিন পর্যবেক্ষণ করেন কখন বন্ধ কিংবা এর আশপাশে লোকজনের আনাগোনা কম থাকে। সবকিছু ঠিক হওয়ার পর দোকান চাদর দিয়ে আড়াল করে তারপর করেন চুরি।

এমনভাবে গত ১৪ এপ্রিল রাজধানীর ভাটারা থানার ১০০ ফিট রোডের মাদানী এভিনিউয়ের হাজী ম্যানশনের নীচতলার নূর জুয়েলার্সে করা চুরির ঘটনায় কুমিল্লা, ব্রাক্ষণবাড়ীয়া ও নারায়নগঞ্জ জেলাসহ ষাকার বিভিন্ন এলাকা থেকে চক্রের ৮ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
 
এসময় তাদের কাছ থেকে চুরি হওয়া ২ ভরি স্বর্ণ ,স্বর্ণ বিক্রির ১২ লক্ষ টাকা এবং তালা কাটার যন্ত্রপাতি, চুরির কাজে ব্যবহৃত তিনটি  ছাতা উদ্ধার করা হয়।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলো, মো. শরীফ ওরফে জামাই শরীফ, মো. আমির হোসেন ওরফে মোটা আমির, ইয়াছিন আরাফাত মোল্লা ওরফে কানা মোটা ইয়াছিন, মো. ফারুক,মো. নুরে আলম সুমন ওরফে ডিবি সুমন, মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন ওরফে আব্দুল্লাহ, মোকাররম হোসেন ওরফে রুবেল ওরফে মনির হোসেন ওরফে মনু, ও মো.পারভেজ।

বৃহস্পতিবার (১৫ জুন) দুপুরে ডিএমপি'র মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ(ডিবি) লালবাগ বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মশিউর রহমান।

তিনি বলেন,গত ১৪ এপ্রিল দুপুরে ভাটারা থানার ১০০ ফিট রোডের মাদানী এভিনিউস্থ হাজী ম্যানশনের নীচতলার নূর জুয়েলার্সের মালিক ও কর্মচারীগণ দোকানে তালা লাগিয়ে পার্শ্ববর্তী মসজিদে জুম্মার নামায আদায় করার জন্য যান। নামায শেষে জুয়েলার্সের দোকানে এসে দেখতে পান দোকানের কলাপসিবল গেইট ও সাটারে দেয়া তালাগুলো কাটা। 

পরে মালিকসহ দোকানের কর্মচারীরা ভিতরে প্রবেশ করে দেখতে পান স্বর্ণালংকারের বক্স গুলো এলোমেলো অবস্থায় পড়ে আছে এবং দোকানের ট্রেতে রাখা কোন স্বর্ণালংকার আর নেই। তারা হিসাব-নিকাশ করে দেখতে পান, প্রায় ১৮৬ ভরি স্বর্ণালংকার এবং ক্যাশে থাকা নগদ ৫০ হাজার টাকা তালা কেটে নিয়ে গেছে। এ ঘটনায় ভাটারা থানায় একটি মামলা ( নম্বর ৩৩) করেন।

মামলার তদন্তের বিষয়ে তিনি বলেন, গোয়েন্দা লালবাগ জোনাল টিম মামলাটি প্রায় ২ মাস তদন্ত করে ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষন, তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার এবং বিশ্বস্ত সোর্সের তথ্যের ভিত্তিতে ১৩ জন আসামীকে সনাক্ত করে।

No description available.

ভাসমান এই চোরদেরকে গতকাল বুধবার (১৪ জুন) কুমিল্লা, ব্রাক্ষণবাড়ীয়া ও নারায়নগঞ্জ জেলাসহ ঢাকা রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে আট জনকে গ্রেফতার করা হয়। 

চক্রটির চুরির ঘটনার বিষয়ে মশিউর রহমান বলেন, তারা ইতোপূর্বে ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী ও সিলেট বিভাগের বিভিন্ন জেলা ও থানার মানি একচেঞ্জ, জুয়েলারি সপ, টায়ার টিউবের আড়ৎ, লাইট হাউজে বিশেষ কায়দায় তালা কেটে, শাটার ভেঙে নগদ টাকা ও স্বর্ণালংকার চুরি করেছে। তারা কোন একটা প্রতিষ্ঠানে চুরি করার আগে ওই এলাকায় কয়েকদিন অবস্থান করে।

পায়ে হেঁটে, রিক্সায় চড়ে এলাকা রেকি করে। প্রতিষ্ঠানের মালিক ও কর্মচারীরা কোথায় যায়, কখন কতক্ষণ অবস্থান করেন তাও পর্যবেক্ষণ করে। চুরির সময়ে প্রতিষ্ঠানের মালিক/ কর্মচারীরা বাইরে গেলেই চক্রের সদস্যরা বিভিন্ন জায়গাতে অবস্থান নিয়ে কখনো ছাতা, কখনো চাদর দিয়ে প্রতিষ্ঠানটির সামনে এক ধরনের আড়াল সৃষ্টি করে। পরে তালা কাটার যন্ত্র দিয়ে মুহূর্তেই কলাপসেবল ও সাটারের তালা কেটে একাধিকজনকে ভিতরে ঢুকিয়ে দিয়ে শাটার বন্ধ করে দেয়। ভিতর থেকে চুরি কর্ম শেষ হওয়া পর্যন্ত চক্রের সদস্যরা বিভিন্ন অবস্থানে সতর্ক থেকে ছাতা এবং চাদর দিয়ে আড়াল তৈরি অব্যাহত রাখে। নির্দিষ্ট কিছু দোকানদারের কাছে তারা চোরাই স্বর্ণালংকার কম দামে বিক্রি করে।

ডিসি মশিউর বলেন, ধরা পড়া এড়ানোর জন্য এই চক্রের সদস্যরা সব রকমের প্রযুক্তিগত সর্তকতা অবলম্বন করে থাকে বিধায় তাদেরকে সহসা ধরা যায় না। জুয়া খেলা, অবৈধ মাদক এবং অবৈধ যৌনতায় আসক্ত হওয়ায় চুরি থেকে প্রাপ্ত অর্থ তাদের কাছে বেশি সময় থাকে না। 

ডিবির এই কর্মকর্তা বলেন, চক্রটি চুরি করা স্বর্ণ ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকা ভরিতে অসাধু ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করেন। এসব চোরাই স্বর্ণ তারা রাজধানীর তাঁতিবাজার, নারায়ণগঞ্জ, কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া সহ বিভিন্ন এলাকায় বিক্রি কর। কোনো কিছু না দেখেই তাদের কাছ থেকে কম দামে কিনে নেয় অসাধু ব্যবসায়ীরা। 

চক্রের সঙ্গে ব্যবসায়িরা জড়িত রয়েছে কিনা এবং ইতোমধ্যে আরো কতগুলো অপরাধ সংগঠন করেছে, কারা কারা জড়িত ছিল, কোথায় চোরাই মাল বিক্রয় করে সে বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হবে বলেও জানান তিনি

সোনালীনিউজ/এআর

Link copied!