ভালো থাকার আসায় প্রতারিত, জীবন গেলো যুবকের

  • নিজস্ব প্রতিবেদক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: আগস্ট ১৯, ২০২৩, ০৫:৩৩ পিএম
ভালো থাকার আসায় প্রতারিত, জীবন গেলো যুবকের

ঢাকা: বিদেশে ভালো চাকরির প্রলোভনে পা দিয়ে নিজের জীবন হারালেন জহিরুল ইসলাম (৩৮) নামের নারায়ণগঞ্জের এক যুবক। তিনি মায়ানমারের বন্দিদশায় অপহরণকারীদের নির্মম নির্যাতনে মারা গেছেন। এই ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। 

গ্রেপ্তারকৃতরা হলো- আন্তর্জাতিক মানবপাচার চক্রের মূলহোতা মো. ইসমাইল (৪৫), তার সহযোগী মো. জসিম (৩৫) এবং মো. এলাহী (৫০)। তারা মানব পাচার চক্রের বিষয়ে বিভিন্ন তথ্য দিয়েছে বলেও জানিয়েছে বাহিনীটি। 

শনিবার (১৯ আগস্ট) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজার র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে নিহত ও গ্রেপ্তারের বিষয়ে কথা বলেন র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন। 

তিনি বলেন, প্রতারকরা জহিরুলসহ ১৯ জনকে মায়ানমারে পাঠানো হয়। সেখানে জহিরুলসহ অন্যদের আটকে রেখে নির্যাতন করা হয়। পরিবারের কাছে টাকা দাবি করা হয়। জহিরুলের পরিবারের কাছে ছয় লাখ টাকা মুক্তিপন দাবি করা হয়।
 
জানা গেছে, হতবিহ্বল পরিবার অনেক কষ্টে চার লাখ ২০ হাজার টাকা ইসলামী ব্যাংকের একটি একাউন্টে পাঠান। এরপর বিকাশে আরও টাকা পাঠান। নগদ টাকা নিতে এসে চলতি বছরের এপ্রিলে চক্রের আবুল নামে এক সদস্য পুলিশ কর্তৃক গ্রেপ্তারের পর আড়াইহাজার থানায় একটি মানবপাচারের মামলা করেন বড় ভাই আবুল কালাম আজাদ। এই খবরে জহিরুলের উপর নেমে আসে অমানবিক নির্যাতন। জানানো হয়, জহিরুল আর জীবিত ফিরবে না।

পরবর্তীতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তদন্ত করতে গিয়ে জানতে পারে, শুধু জহিরুল নয়, মালয়েশিয়ায় উন্নত জীবনের প্রলোভন দেখিয়ে নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলা থেকে মোট ১৯ যুবককে মিয়ানমারে আটকে রাখা হয়েছে। তাদের জন্য মুক্তিপণ দাবি করা হয়। সেখানে বন্দীদশায় নির্যাতনের ফলে জহিরুল মৃত্যুবরণ করে। 

আন্তর্জাতিক মানব পাচার চক্রের মূলহোতা মো. ইসমাইলকে তার দুই সহযোগীসহ নারায়ণগঞ্জ ও নরসিংদী এলাকা থেকে গ্রেপ্তারের পর এ তথ্য দিয়েছে ভুক্তভোগী পরিবার ও র‌্যাব।

র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, চলতি বছরের ১৯ মার্চ নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার এলাকার ১৯ জন যুবক মানব পাচার চক্রের মাধ্যমে টেকনাফ থেকে নৌ-পথে মালয়েশিয়া যাওয়ার সময় মিয়ানমারের কোস্টগার্ডের হাতে আটক হয়। এঘটনায় গত ১৫ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার থানায় মানবপাচার আইনে মামলা দায়ের করেন ভুক্তভোগী পরিবার। 

কমান্ডার মঈন বলেন, চক্রের সদস্যরা বিভিন্ন এলাকার তরুণ ও যুবকদেরকে কোন প্রকার অর্থ ও পাসপোর্ট-ভিসা ছাড়াই সমুদ্রপথে মালয়েশিয়া পাঠানোর প্রস্তাব দিত।  মালয়েশিয়া পৌঁছে ৩ লাখ ২০ হাজার টাকা পরিশোধ করার চুক্তিতে পাঠানো হয়।

জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত তথ্যের বরাতে কমান্ডার মঈন বলেন, চক্রটি চলতি বছরের গত ১৯ মার্চ মোট ২২ জনকে ট্রলারে করে অবৈধভাবে মালয়েশিয়ায় পাচার করার সময় মায়ানমার উপকূলে পৌঁছলে মায়ানমার কোস্টাগার্ড ১৯ জনকে আটক করে। বাকি ৩ জনকে এই চক্রের সদস্য মায়ানমারের জামাল কৌশলে ছাড়িয়ে নিয়ে তার ক্যাম্পে নিয়ে মুক্তিপনের জন্য নির্যাতন করে। এদের মধ্যে ছিল জহিরুলও। তার পরিবারের কাছে ৬ লাখ টাকা মুক্তিপন দাবি করে চক্রের সদস্যরা। 
পরবর্তীতে জহিরুলের পরিবার গত ১০ মে ৪ লাখ ২০ হাজার টাকা মুক্তিপণ দেয় বাকি ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা মালয়েশিয়া যাওয়ার পর দিবে।

পরবর্তীতে জহিরুলকে গত মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে মিয়ানমার থেকে থাইল্যান্ডের সমুদ্র সীমা হয়ে সিঙ্গাপুরের পাশ দিয়ে মালয়েশিয়া পাঠানো হয়। নির্যাতনের কারণে সে অসুস্থ হয়ে পড়লে মালয়েশিয়া পুলিশের মাধ্যমে তিনি হাসপাতালে ভর্তি হন। পরবর্তীতে গত ২৪ মে সেখানে চিকিৎসারত অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। মৃত্যু সনদপত্রে তার মৃত্যুর কারণ হিসেবে তার শরীরে নির্যাতনের কথা উল্লেখ আছে।

সোনালীনিউজ/এলআই/আইএ

Link copied!