ঢাকা: রাজধানীর কলাবাগানের সেন্ট্রাল রোডে শিশু গৃহকর্মী হেনা সাথী পারভীন ডলির বাচ্চার খাবার মাঝে মাঝে খেয়ে ফেলতো। আর এরজন্য নির্যাতনের করে শিশু গৃহকর্মী হেনাকে হত্যা করে পারভীন ডলি।
মারার পর মোবাইল ফোন রেখে নিজের বাচ্চা নিয়ে বেরিয়ে যান। এরপর রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে ঘুরাফেরা করতে থাকে। পরে একসময় যশোরে চলে যায় সাথী। সেখান থেকে শুক্রবার (৩১ আগস্ট) তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
রোববার (৩ সেপ্টেম্বর) বেলা সাড়ে ১২টায় ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানান ডিএমপির রমনা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার ডিসি মোহাম্মদ আশরাফ হোসেন।
তিনি বলেন, গত ২৬ আগস্ট সকালে রাজধানীর কলাবাগানের একটি বাসার দরজা ভেঙে বিছানায় একটি কাজের মেয়ে লাশ দেখতে পায়। পরে লাশটি শনাক্ত করে জানা যায় এটি একটি এতিম শিশু ও গৃহকর্মী মোছা. হেনা।
সে মোছা. সাথী পারভীন ডলির বাসায় কাজ করতো। ২০১৯ সাল থেকে সাথী ওই বাসায় থাকেন। ২০২০ সালে হেনাকে নিয়ে এসে কাজের মেয়ে হিসেবে রাখা হয়। তার শরীরে অনেক নতুন ও পুরোনো আঘাতের চিহ্ন, মুখে ফেনা, শরীর ফোলা দেখতে পায়।
বাসার সিসি ফুটেজ থেকে আমরা দেখতে পাই, এই শিশুটির গলায় পা দিয়ে গৃহকর্ত্রী হেনা তাকে নির্যাতন করছে। সাথী ঘটনার পরপর তার বাচ্চা নিয়ে বাসা থেকে বেরিয়েছে। বাসায় আমরা তিনটি মোবাইল ফোন যা সাথী ব্যবহার করতো সেগুলো বাসায় রেখে গেছে।
তিনি বলেন, পরে কলাবাগান থানা পুলিশ সহ পুলিশের বিভিন্ন ইউনিট এটা নিয়ে কাজ করেন। ঘটনার চারদিনের মাথায় আমরা আসামিকে গ্রেফতার করি। কলাবাগান থানা পুলিশ বিভিন্ন স্থানের ৪০০ সিসি ফুটেজ সংগ্রহ করে। কারণ আসামি তার মোবাইল ফোন রেখে গিয়েছিল। ফলে গতানুগতিক ধারায় আমাদের তদন্ত করতে হয়েছে।
সিসি ফুটেজে তাকে বিভিন্ন স্থানে পথচারী হিসেবে ঘুরতে দেখা যায়। কখনো মুদির দোকানে বা বিভিন্ন মানুষের ফোন থেকে তার আত্মীয়স্বজনকে ফোন করে। সে পালিয়ে থাকার চেষ্টা করে। এক পর্যায়ে আমরা সংবাদ পাই সে যশোরে আছে। পরে কলাবাগান থানা পুলিশ সেখান থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে।
জিজ্ঞাসাবাদ সূত্রের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, ডাল গুটনি, দা, বটি দিয়ে শিশুটিকে নির্যাতন করে। কখনো লাঠি দিয়ে নির্যাতন করেছে। অপরাধ হলো তার বাচ্চার জন্য রাখা খাবার খেয়ে ফেলা। তার বাচ্চার খেলার সাথী হিসেবে একজন আরেকজনকে মারে এমন ছোটখাটো বিষয়ে এই হত্যাকারী তাকে নির্যাতন করত। এই নির্যাতনের ফলে বাচ্চাটি মৃত্যুবরণ করে। বাচ্চাটি বিছানায় মল ত্যাগ পর্যন্ত করে ফেলে।
গৃহকর্মীদের এমন নানা ধরনের নির্যাতন যেন না করা হয় সেই অনুরোধ জানান তিনি। এ ধরনের অপরাধ করে কেউ পার পায় না সেই বিষয়টি উল্লেখ করেন এই উপ-পুলিশ কমিশনার।
নির্যাতনের কারণ বিষয়ে এক প্রশ্নের বিষয়ে তিনি বলেন, বাচ্চার উপর নির্যাতনের কারণ একটাই তার নিজের বাচ্চার খাবারটা গৃহকর্মী খেয়ে ফেলতো। এটাই তার অপরাধ। এর কারণে মেরে ফেলাটা যে যৌক্তিক হয়নি আসামি নিজেই এখন শিকার করছে।
আসামির বিষয়ে তিনি বলেন, এলজিইডি মন্ত্রণালয়ের সে একজন সার্ভেয়ার। তবে ২০০৩ সালে সে প্রথমে কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে যোগ দেয়। পরে ডিপ্লোমা করে ২০১১ সালে সার্ভেয়ার হিসেবে চাকরি পায়। ২০১৬ সালে বিএসসি করে নিজেকে ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে পরিচিত দেয়। তার রাজনৈতিক কী পরিচয় সেগুলো আমরা বিবেচনায় আনতে চাই না। আমরা তাকে শুধু একজন আসামি হিসেবেই দেখছি।
তিনি বলেন, তার দ্বিতীয় স্বামী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ডাক্তার ছিলেন। ২০২০ সালে তাদের মধ্যে ডিভোর্স হয়। আর তার প্রথম স্বামী ছিল একজন ড্রাইভার। এলজিইডিতে চাকরি করা অবস্থায় তার সঙ্গে বিয়ে হয়। পরে সার্ভেয়ার হিসেবে চাকরি হলে তাকে ডিভোর্স দেয়। ১২ বছর তার স্বামী ছিল না। ২০১৯ সালে এসে দ্বিতীয় স্বামীর সঙ্গে বিয়ে হয়। এসময় তাদের দুটি জমজ বাচ্চার জন্ম হয়। একটি বাচ্চা মারা যায় আরেকটি বাচ্চা জীবিত রয়েছে। সেই বাচ্চাকে লালনপালন করার জন্যই হেনাকে আনা হয়।
এআর
আপনার মতামত লিখুন :