সেই মাসুদ এখনো ভালো হননি!

  • নিউজ ডেস্ক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৫, ২০২৪, ১২:৫১ পিএম
সেই মাসুদ এখনো ভালো হননি!

ঢাকা : সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ‘মাসুদ তুমি ভালো হয়ে যাও’ ভাইরাল একটি বাক্য।  ২০১৭ সালের ১৮ জানুয়ারি সাবেক সেতুমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের  বিআরটিএর মিরপুর কার্যালয় পরিদর্শনে গিয়ে প্রতিষ্ঠানটির উপপরিচালক প্রকৌশলী মাসুদ আলমকে এমন কথা বলেছিলেন।

দুর্নীতি আর অনিয়মের আখড়া হিসেবে পরিচিত পেয়েছিল বিআরটিএর মিরপুর কার্যালয়। ওবায়দুল কাদের তাকে ভালো হওয়ার পরামর্শ দিলেও মাসুদ ওবায়দুল কাদেরের আস্থাভাজন ছিলেন বলে জনশ্রুতি আছে। ঢাকা থেকে তাকে প্রথমে খুলনায়, পরে চট্টগ্রামে বদলি করা হয়। চট্টগ্রামে চলতি বছরের ২৫ মার্চ তিনি বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) বিভাগীয় পরিচালকের (ইঞ্জিনিয়ারিং) দায়িত্ব পান।

প্রকৌশলী মাসুদ আলমকে সাবেক সেতুমন্ত্রী ভালো হওয়ার কথা বললেও তিনি আসলে কতটা ভালো হয়েছেন? এমন প্রশ্নের উত্তরের খোঁজ দিয়ে দেশের একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত হয়েছে প্রতিবেদন। তাতে দেখা গেছে, বাস্তবে সেই মাসুদের কার্যালয়ে এখনো চলছে ঘুষবাণিজ্য।

চট্টগ্রাম বিআরটিএ সরেজমিনে পরিদর্শনে দেখা গেছে, দালাল ছাড়া কোনো কাজই হচ্ছে না। বিআরটিএ গেটের বাম পাশে দেওয়াল ঘেঁষেই গড়ে উঠেছে মার্কেট। সেই মার্কেটে দালালরা নিয়মিত অফিস গেড়ে বসেছেন। শতাধিক দালাল মার্কেটে কাগজপত্র প্রস্তুত করে গ্রাহককে পাঠান সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার কাছে। সেখানে সব কাজ করতে অতিরিক্ত ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা গুনতে হয়।

বিআরটিএর সামনে উত্তর পাশে রয়েছে ২০ থেকে ৩০টি দোকান। দীর্ঘদিন বিআরটিএ কার্যালয়ে কাজ করছেন দালাল হিসেবে খ্যাত আবদুস ছামাদ, ফোরকান-১, ফোরকান-২, মোহাম্মদ ইছা ও খোরশেদ।

এ ছাড়া দোকানদার এমরান, শহিদ, দিদার, মিনার, আক্তার ও রাজা ফটোকপির মালিক রাজা দালাল হিসেবে কাজ করেন। তারা ফিটনেস, ট্যাক্স টোকেন, লাইসেন্স, রেজিস্ট্রেশন, নাম পরিবর্তনের কাজ করেন দোকানে বসেই।

জানা গেছে, গত আগস্টে সরকারের পটপরিবর্তনের পরও আগের মতো সব কাজই হচ্ছে টাকার বিনিময়ে। বিআরটিএ কার্যালয়ে দালাল নেই বলা হলেও কার্যালয়ের বাম ও ডান পাশের দোকানে দেখা যায় দালালরা গিজগিজ করছেন।

নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক একজন সেবাপ্রার্থী বলেন, বিআরটিএতে কর্মকর্তার সহকারী হিসেবে কাজ করেন ক্যাজুয়েল স্টাফরা। মূলত ওই স্টাফদের মাধ্যমে টাকা নেন কর্মকর্তারা। এখানে দালালের মাধ্যমে দ্রুত লাইসেন্সসহ সব কাজ করা যায়।

ফটিকছড়ি উপজেলা থেকে আসা মোহাম্মদ সাইমন নামে এক আবেদনকারী জানান, প্রায় ৮ মাস আগে আবেদন করেছি লাইসেন্সের জন্য। পরীক্ষায় দুই বার ফেল হয়েছি। পরে পরীক্ষায় পাস হয়েও লাইসেন্স পাচ্ছি না। অন্তত ৫-৬ বার এসেছি। এখনো হয়নি, পরে আসেন, সময় লাগবে, সার্ভার সমস্যা বলে এভাবে হয়রানি করছেন। অথচ হালাল ধরলে এতদিন লাগত না।

কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সহসভাপতি এস এম নাজের হোসাইন বলেন, বিআরটিএর চট্টগ্রামের প্রধান হিসেবে ওই অফিসে যা অনিয়ম-দুর্নীতি ও ঘুষবাণিজ্য হয়, তার সব দায় মাসুদ আলমের ওপর বর্তায়। সরকারের পটপরিবর্তন হয়েছে কিন্তু মাসুদ এখনো ভালো হলো না। তার অফিসে এখনো ঘুষ, অনিয়ম, দুর্নীতি অব্যাহত আছে, এটা খুবই দুঃখজনক।

আমরা অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে আশা করেছিলাম দেশের সব অনিয়ম দূর হবে। কিন্তু সব সেক্টর এক মাস ভালো থাকার পর আবার আগের মতো দুর্নীতি শুরু হয়েছে।

যানবাহনের কাগজপত্র, লাইসেন্স, ফিটনেস ঠিক করতে অবৈধ টাকা লেনদেন সব কিছুর দায়ে তাকে এ পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া উচিত। তিনি গত ১৫ বছর সরকারের সুবিধা ভোগ করেছেন। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের তাকে নিয়ে নানা মন্তব্য করলেও, তাকে ভালো জায়গাতে পোস্টিং দিয়েছেন। এখন সময় এসেছে সরকারের এসব দালালদের ওএসডি করার।

বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, উন্নত বিশ্বে যানবাহনের কাগজপত্র ঠিক করতে সংশ্লিষ্ট অফিসে যেতে হয় না। কিন্তু আমাদের দেশে অনলাইনের কথা বলা হলেও সেবা প্রার্থীদের বিআরটিএ অফিসে যেতে হয়। এখানেই দুর্নীতি, ঘুষ ও অনিয়ম করার সুযোগ থেকে যায়। সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে দালালের মাধ্যমে বিআরটিএ কর্মকর্তারা বাণিজ্য চালাচ্ছেন।

দালালসহ নানা অনিয়মের বিষয়ে কথা বললে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) চট্টগ্রামের পরিচালক প্রকৌশলী মাসুদ আলম বলেন, আমি চেষ্টা করছি চট্টগ্রাম বিআরটিএ কার্যালয়কে ভালো করতে।

কিন্তু আমার কার্যালয়ের বাইরের যদি দালালরা কাজ করে, তাহলে তো আমার কিছু করার থাকে না। বাইরে থেকে কাগজপত্র ঠিক করার নামে, লাইসেন্সের নামে কেউ টাকা দিয়ে এলেও আমি জিজ্ঞেস করার সময় স্বীকার করেন না।’

এমটিআই

Link copied!