সঞ্চয়পত্র থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন গ্রাহকরা!

  • নিজস্ব প্রতিবেদক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: জুন ৩০, ২০২৪, ১১:৪৯ এএম
সঞ্চয়পত্র থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন গ্রাহকরা!

ঢাকা : চলতি অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র থেকে ১৮ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে সরকার, যা সংশোধিত বাজেটে কমিয়ে ৭ হাজার ৩১০ কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়। তবে সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণগ্রহণের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও কোনো ঋণ পাচ্ছে না সরকার।

চলতি অর্থবছরের ১০ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) সঞ্চয়পত্রের পুরনো ঋণের সুদ ও আসল বাবদ উল্টো ১৪ হাজার ৬৪৮ কোটি টাকা পরিশোধ করেছে সরকার। সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ না পাওয়ায় ব্যাংকব্যবস্থা থেকে সরকারকে আরও ঋণ নিতে হবে।

এদিকে তারল্য-সংকটের কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে নিয়মিত ধার করে চলছে অনেক ব্যাংক। এমন অবস্থায় খোদ কেন্দ্রীয় ব্যাংকই সরকারকে ধার দিচ্ছে, যা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংকোচনমূলক মুদ্রানীতির সাংঘর্ষিক। সঞ্চয়পত্র ও কাঙ্ক্ষিত হারে বিদেশি ঋণ না পাওয়ায় চলতি মাসের ১৩ দিনে ব্যাংকব্যবস্থা থেকে ৩৫ হাজার কোটি টাকা ধার করেছে সরকার, যার মধ্যে ১৫ হাজার কোটি টাকা দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। অ্যাডভান্সড ও ওভারড্রাফট হিসেবে এই ঋণ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা যায়, চলতি বছরের এপ্রিলে সঞ্চয়পত্র বিক্রি করে যে ঋণ নিয়েছে সরকার, তার চেয়ে ২ হাজার ১০৩ কোটি টাকা বেশি ঋণের সুদ ও আসল বাবদ পরিশোধ করতে হয়েছে। এ নিয়ে চলতি অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) কোনো ঋণ নিতে পারেনি সরকার, বরং উল্টো ব্যাংক থেকে ধার নিয়ে ১৪ হাজার ৬৪৮ কোটি টাকা পরিশোধ করতে হয়েছে।

প্রতিবেদন বলছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাস (জুলাই-আগস্ট) সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রি ৫ হাজার ৫৬২ কোটি টাকা ইতিবাচক ছিল। তবে এরপর থেকে নিট বিক্রি ঋণাত্মক হতে থাকে। সেপ্টেম্বরে ঋণাত্মক হয় ১৪৭ কোটি, অক্টোবরে ১ হাজার ৪০ কোটি, নভেম্বরে ১ হাজার ৫৫৪ কোটি, ডিসেম্বরে ২ হাজার ২০৪ কোটি, জানুয়ারিতে ১ হাজার ২৮৭ কোটি, ফেব্রুয়ারিতে ১ হাজার ৫৪১ কোটি এবং মার্চে ঋণাত্মক ছিল ৩ হাজার ৬৫৩ কোটি টাকা।

মূলত কড়াকড়ি আরোপের কারণে সঞ্চয়পত্র থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন গ্রাহকরা। জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি), কর শনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন) ও পাঁচ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগে রিটার্ন দাখিলের বাধ্যবাধকতা আরোপরে পর থেকেই সঞ্চয়পত্র বিক্রিতে নেতিবাচক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। সঞ্চয়পত্রের সুদের বিপরীতে করারোপের পাশাপাশি সুদহার কমিয়ে আনে সরকার। এ ছাড়া উচ্চ মূল্যস্ফীতি ও ব্যাংক আমানতে সুদহার বৃদ্ধির কারণেও সঞ্চয়পত্র বিক্রি কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ।

২০১৯ সালের ১ জুলাই থেকে এনআইডি ও টিআইএন জমা দেওয়ার বাধ্যবাধকতা শুরু হয়। ফলে যারা আগে সঞ্চয়পত্র কিনেছিলেন, তাদের অনেকেই মেয়াদ শেষ হওয়ার পর নতুন করে আর এতে বিনিয়োগ করেননি। পাঁচ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগের ওপর অর্জিত সুদের বিপরীতে ১০ শতাংশ কর দিতে হয়। এ ছাড়া বিনিয়োগের পরিমাণের ওপর ভিত্তি করে ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর থেকে সঞ্চয়পত্রের সুদের হারের যে স্তর চালু করা হয়েছে, তাতে নতুন বিনিয়োগে বিমুখ হয়েছেন অনেকেই।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, সঞ্চয়পত্র বিক্রি করে সরকারের নেওয়া ঋণের পুঞ্জীভূত পরিমাণ ২০২৩ সালের এপ্রিলে ছিল ৩ লাখ ৬০ হাজার ৪৩০ কোটি টাকা, যা চলতি এপ্রিলে দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৫২ হাজার ৭৪৫ কোটি টাকা। ১ বছরে ৭ হাজার ৬৮৫ কোটি টাকার ঋণ কমেছে।

২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত সঞ্চয়পত্রকে সরকারের ব্যয়বহুল ঋণ হিসেবে মনে করা হতো। এ কারণে সরকারও সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণগ্রহণের লক্ষ্যমাত্রা ধারাবাহিকভাবে কমিয়ে আনে। চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র বিক্রি করে সরকারের নিট ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ১৮ হাজার কোটি টাকা, যা সংশোধিত বাজেটে ৭ হাজার ৩১০ কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়।

২০২২-২৩ অর্থবছরে এই লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩৫ হাজার কোটি টাকা, যা সংশোধিত বাজেটে কমিয়ে ৩২ হাজার কোটি টাকা করা হয়েছিল। ওই অর্থবছরের শেষে নিট বিক্রি ঋণাত্মক হয়ে দাঁড়ায় ৩ হাজার ২৯৫ কোটি টাকা। তবে আগামী অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণগ্রহণের লক্ষ্যমাত্রা বাড়িয়ে ১৫ হাজার ৪০০ কোটি টাকা নির্ধারণ করেছে সরকার।

এমটিআই

Link copied!