শীতের আগমনে স্বস্তিতে কুমিল্লার সবজির বাজার, বেড়েছে আলুর দাম

  • মঈন নাসের খাঁন (রাফি), কুমিল্লা | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: নভেম্বর ৮, ২০২৪, ০৬:২৯ পিএম
শীতের আগমনে স্বস্তিতে কুমিল্লার সবজির বাজার, বেড়েছে আলুর দাম

কুমিল্লা: টানা দুই মাসের অস্থিরতা কাটিয়ে শীতের আগমনের সাথে সাথে স্বস্তির বার্তা নিয়ে এসেছে সবজির বাজার। শীতকালীন শাক-সবজির আসতে শুরু হওয়ায় কুমিল্লা নগরীর কাঁচাবাজারে সব ধরনের সবজির দাম কমতে শুরু করেছে। এতে ক্রেতাদের মধ্যে স্বস্তি ফিরতে শুরু করেছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাজারে পর্যাপ্ত সবজি আসতে শুরু করায় এরই মধ্যে বেশির ভাগ সবজির দাম কমেছে। তবে পুরাতন আলুর দাম অব্যাহতভাবে বেড়েই চলেছে। নতুন আলু না আসা পর্যন্ত আলুর দাম এমন বাড়তি থাকবে বলে জানান ব্যবসায়ীরা। 

এছাড়াও, নগরীতে মাছ, মাংস, ডিম, মুরগির বাজার গত কয়েক সপ্তাহ ঊর্ধ্বমুখী থাকার পর চলতি সপ্তাহে দাম না বাড়লেও তা উচ্চ মূল্যে স্থির হয়ে আছে।

শুক্রবার (৮ নভেম্বর) সকালে কুমিল্লা নগরীর রাজগঞ্জ, টমসমব্রীজ, রাণীর বাজার ও বাদশাহ মিয়ার বাজার ঘুরে এবং বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে দেখা গেছে এমন চিত্র। 

রাজগঞ্জ বাজারের সবজি বিক্রেতা হানিফ মিয়া বলেন, ‘শীতকালীন শাক-সবজির আসতে শুরু করায় বাজারে বেশিরভাগ শাক-সবজির দাম কমেছে। আগামী সপ্তাহে আরও কমতে পারে। কারণ শীতকালীন সবজি আসা শুরু হয়েছে মাত্র। শীতকালীন শাক-সবজির ভরা মৌসুমে এখনও শুরু হয়নি।’

আরেক সবজি বিক্রেতা করিম হোসেন বলেন, ‘সবজির দাম গত সপ্তাহের চেয়ে কিছুটা কমেছে। তবে গাজর, টমেটো, কাঁচা মরিচসহ কয়েকটি সবজির দাম আগের মতোই আছে। আর আলুর দাম নতুন আলু না আসা পর্যন্ত কিছুটা বাড়তি থাকবে।’

শুক্রবার কুমিল্লা নগরীর বাজারে কাঁচা মরিচ ১৬০ টাকা, বেগুন ৬০ টাকা, বরবটি ৮০ টাকা, লাউ প্রতি পিস ৬০-৭০ টাকা, আলু প্রতি কেজিতে ৫-৭ টা বৃদ্ধি পেয়ে ৭০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। গত সপ্তাহের চেয়ে এ সপ্তাহে প্রতি কেজি দরে ১০-২০ টাকা কমতে শুরু করেছে। 

এছাড়াও, ধনিয়া পাতা ২০০-২৫০ টাকা, ফুলকপি ও বাঁধাকপি (মাঝারি আকারের) ৫০ টাকা, করলা ৮০ টাকা, গোল বেগুন (কালো) ৫০ টাকা, লম্বা বেগুন ৫০ টাকা, শিম ৮০-১০০ টাকা, কচুর মুখী ৬০ টাকা, কচুর লতি ৭০ টাকা, কাঁকরোল ৬০ টাকা, পটল ও ঢেঁড়স ৫০-৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হতে দেখা যায়। 

এইদিন ঝিঙ্গা, চিচিঙ্গা, ধুন্দল ৫০ থেকে ৬০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৪৫ টাকা, পেঁপে ৪০ টাকা, জালি কুমড়া (প্রতি পিস) ৪০-৫০ টাকা, এ ছাড়া প্রতি আঁটি লাউশাক, ২৪-৩০, পুঁইশাক এবং মুলা শাক, লাল শাক ১৫-২০ টাকা আঁটি দরে বিক্রি হতে দেখা যায়। লেবু (মাঝারি আকারের) ২০-২৫ টাকা হালি বিক্রি হতে দেখা যায়।

এদিকে, বাজারে পেঁয়াজ ১১০-১১৫ টাকা, রসুন ২২০-২৪০ টাকা, আদা ২০০-২২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে।

ক্রেতারা বলছেন, ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন অজুহাতে অতিরিক্ত টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারের কথা বিবেচনা করে হলেও বাজার মনিটরিং দরকার। ক্রেতাদের অভিযোগ, সিন্ডিকেটের দোহাই দিয়ে ইচ্ছামতো দাম নিচ্ছেন বিক্রেতারা।

নগরীর রাজগঞ্জ বাজারে বাজার করতে আসা আকবর হোসেন বলেন, সবজির দাম কিছুটা কমতে শুরু করেছে। এটা স্বস্তির খবর। তবে, ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেটের দোহাই দিয়ে বিভিন্ন অযুহাতে টাকা বাড়িয়ে রাখছে বলে মনে হচ্ছে। নিয়মিত মনিটরিংয়ে এমন অস্বস্তি থাকবে না আশা করি। 

ইবরাহীম মোল্লা নামের আরেক ক্রেতা বলেন, সবজির দাম কমতে শুরু করলেও মাছ মাংসের দাম তো কমে নি। পেঁয়াজ, আলুর দামও বেশী। একটা কমলে আরেকটা বেড়ে যায়। এগুলো সিন্ডিকেটের কারসাজি। আমরা ক্রেতারা আর শান্তি পেলাম না। কবে সিন্ডিকেট বন্ধ হবে আর আমরাও স্বস্তিতে ব্যাগ ভরে বাজার নিয়ে যেতে পারবো। 

এদিকে, ব্যবসায়ীরা বলছেন ‘প্রতিকেজি সবজিতে আমরা মাত্র ২-৫ টাকা লাভ করি। কারা দাম বাড়ায়-কমায় আপনারা খোঁজ নেন। দামের বাড়ানো বা কমানোর ওপর আমাদের হাত নেই।’

এছাড়াও, ব্রয়লার মুরগি ও ডিমের দাম গত সপ্তাহের মতোই আছে। বাজারে ফার্মের বাদামী রঙের ডিম ডজন প্রতি ১৫০-১৫৫ টাকা, ফার্মের মুরগির সাদা ডিম ১৪৫-১৫০ টাকা, হাঁসের ডিম ৮০ টাকা হালি, কোয়েল পাখির ডিম ৫০ টাকা ডজন দরে বিক্রি হতে দেখা যায়। আবার, ব্রয়লার ১৯০-২০০ টাকা কেজি, সোনালি জাতের মুরগির দাম ৩১০-৩২০ টাকা কেজি এবং লেয়ার মুরগি ৩১০-৩২০ কেজি দরে দরে বিক্রি করছি। তবে, বাজারভেদে সব ধরনের শাক-সবজি, মাছ, মাংস, ব্রয়লার মুরগির দাম ১০-২০ টাকা পর্যন্ত কম বেশি হতে পারে।

জেলা ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা আসাদুল ইসলাম বলেন, ভোক্তাদের স্বার্থে আমরা মনিটরিং কার্যক্রম নিয়মিত পরিচালনা করছি। কেউ দাম বেশী রাখলেই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এসএস

Link copied!