ঢাকা : রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে গতকাল সোমবার পুরনো আলু বিক্রি হয়েছে ৭৫ থেকে ৮০ টাকা কেজিতে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নভেম্বর মাসে এমন চড়া দামের আলু বিক্রি হতে দেখা যায়নি।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মূলত সিন্ডিকেটের কারণেই এবার আলুর দামের এমন অবস্থা। বিপুল পরিমাণ আলু হিমাগারে মজুত থাকায় ও আমদানি জটিলতার কারণে এবার আলুর দাম ভোগাচ্ছে ক্রেতাদের। অবশ্য দাম নিয়ন্ত্রণে বা আলুর সরবরাহ স্বাভাবিক করতে নেই যথাযথ তদারকিও।
আলুর মতো নিয়ন্ত্রণে আসেনি পেঁয়াজের দাম। দীর্ঘদিন থেকে ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের হাতে জিম্মি থাকা পেঁয়াজের দামও আকাশছোঁয়া।
সোমবার (২৫ নভেম্বর) ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে ও বাজার ঘুরে দেখা যায়, আগের মতো চড়া দামে প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ৭৫ থেকে ৮০ টাকা দরে, যা কৃষকের থেকে কেনা দামের চেয়ে প্রায় ৯০ শতাংশ বেশি দামে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মজুতকারিরা কোনো কারণ ছাড়াই আলুর দাম বাড়িয়েছেন। কৃষক পর্যায় থেকে নামমাত্র মূল্যে আলু কিনে মজুত করে অতিরিক্ত মুনাফা লুটছে অসাধু ব্যবসায়ীরা। দীর্ঘদিন থেকে এসব ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা না নেওয়ায় এসব ঘটনা বারবার ঘটছে। এমন পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণের জন্য সরকারি সংস্থাগুলোকে আরও বেশি সজাগ ও সচেতন হতে হবে। পাশাপাশি উৎপাদন থেকে ভোক্তা পর্যায় পর্যন্ত সব ধরনের তথ্য উন্মুক্ত রাখতে হবে।
মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, আলুর উৎপাদনের শীর্ষে থাকা মুন্সীগঞ্জের আলুর বাজারেও নৈরাজ্যের সৃষ্টি হয়েছে। সিন্ডিকেটের কবজায় দেশের বৃহৎ আলু উৎপাদনকারী এ অঞ্চলে হুহু করে বাড়ছে দাম। ১৫ দিনের ব্যবধানে জেলাটিতে দাম বেড়ে প্রতি কেজি আলুর বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকায়।
কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহসভাপতি নাজের হোসাইন বলেন, সরকারের ভোগ্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণ করা নিয়ে আমরা কিছুটা সন্দিহান। কারণ হচ্ছে, সরকার বলেছিল তারা বিভিন্ন চাঁদা বন্ধের উদ্যোগ নিয়েছে, ব্যাংক ইন্টারেস্ট বাড়িয়েছে ও আমদানিতে শুল্ক ছাড় দিয়েছে। তবে সাধারণ জনগণ এর কোনো সুবিধা পাননি। উল্টো ব্যবসায়ীরা এর পুরো ফায়দা লুটেছে।
জেলা প্রতিনিধির পাঠানো তথ্যানুসারে চলতি বছর আলু উত্তোলন মৌসুমের শুরুতে কৃষক হাত থেকে পাইকারি দামে প্রতি কেজি আলু বিক্রি হতো ২৫ থেকে ২৮ টাকা। আর খুচরা বাজারে প্রতি কেজি বিক্রি হতো ৩০ থেকে ৩৫ টাকা। সেই আলুর দাম বাড়তে বাড়তে ১৫ দিন আগেও খুচরা বাজারে ৬০ টাকা কেজি দরে আলু বিক্রি হয়েছে। অথচ গতকাল খুচরা বাজারে ৮০ টাকা কেজি দরে আলু বিক্রি হয়েছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রমতে, জেলার হিমাগারগুলোতে এখনো ৩৬ হাজার টনের বেশি আলু মজুত রয়েছে। হাতেগোনা বড় ব্যবসায়ীর হাতেই আলু মজুত রয়েছে। আর ওই সিন্ডিকেটই আলুর দাম নিয়ন্ত্রণ করছে। এতে পর্যাপ্ত মজুত থাকার পরও চড়া দামেই আলু কিনতে হচ্ছে ভোক্তাদের। এজন্য সিন্ডিকেট ভাঙতে না পারাকেই দোষারোপ করেছেন পাইকাররা। একই সঙ্গে ঢিলেঢালা বাজার তদারকিকেও দায়ী করেছেন তারা। জেলার শহরের প্রধান বাজারে সবজি বিক্রেতারা মূল্য তালিকায় আলুর কেজি ৭০ টাকা উল্লেখ করলেও বিক্রি করছেন ৭৫ থেকে ৮০ টাকায়।
সোমবার (২৫ নভেম্বর) সকালে এ বাজারের ক্রেতা মঈনউদ্দিন আহমেদ জানান, তিনি এক কেজি কিনেছেন ৭৫ টাকায়। আবার একই বাজারের অন্য ক্রেতা জসিম মিয়া জানান, তিনি কেজিতে ৮০ টাকা দরে দুই কেজি আলু কিনেছেন। শহরের দেওভোগ বাজারের ক্রেতা জাকির হোসেন জানান, একই দিন সকালে তিনি ওই বাজার থেকে কেজিপ্রতি ৮০ টাকা দরে আলু কিনেছেন।
খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, পাইকারদের কাছ থেকেই তারা ৬৫ থেকে ৬৮ টাকা কেজিতে আলু কিনছেন। এর মধ্যে ভালো ও খারাপ দুই ধরনের আলু রয়েছে।
ক্রেতা যখন আলু নেন, তখন বেছে বেছে ভালো আলুই ব্যাগে ভরেন। এতে খারাপ আলুগুলো আর বিক্রি করা যায়নি। তাই ৭৫ থেকে ৮০ টাকা কেজিতে আলু বিক্রি না করলে লাভ হবে না।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক কল্যাণ কুমার সরকার জানান, জেলার ছয়টি উপজেলায় সচল ৫৮টি হিমাগারে ৮১ হাজার ৫৯ টন আলু মজুত রয়েছে। এর মধ্যে খাবারের জন্য মজুত রয়েছে ৩৬ হাজার ২১৩ টন আলু। বাকি ৪৪ হাজার ৮৪৬ টন রয়েছে বীজ আলু।
কৃষির অতিরিক্ত উপপরিচালক কল্যাণ কুমার সরকার বলেন, এ আলু নিয়েই অসাধু সিন্ডিকেট কারসাজি চালিয়ে যাচ্ছে। অসাধু ব্যবসায়ীদের কারণেই আলুর দাম বেড়েছে। তবে আমরা বাজার নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছি।
জেলা কৃষি বিপণন কর্মকর্তা মো. সামির হোসাইন সিয়াম বলেন, যারা আলু মজুত করেছেন, তারাই ফোনে ফোনে দাম নির্ধারণ করছেন। তাদের নির্ধারিত দামেই সারা দেশে বাজারে বিক্রি হচ্ছে। এতে বাজারে বেড়েছে দাম। সূত্র : দেশ রূপান্তর
এমটিআই
আপনার মতামত লিখুন :