ঢাকা: দেশের পুঁজিবাজার থেকে ৪০০ কোটি টাকা সংগ্রহের জন্য আবেদন করা বোরাক রিয়েল এস্টেট লিমিটেডের প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) আবেদন বাতিল করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।
আইপিওর আবেদনের সঙ্গে দেওয়া কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদনে নানা অসঙ্গতি পরিলক্ষিত হওয়ায় বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (পাবলিক ইস্যু) রুলস, ২০১৫ এর রুল ১৫(৫) এর ক্ষমতা বলে কমিশন কোম্পানির আইপিও আবেদন বাতিল করেছে।
সম্প্রতি বোরাক রিয়েল এস্টেট লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে (সিইও) এ সংক্রান্ত একটি চিঠি দেওয়া হয়েছে বলে বিএসইসি সত্রে জানা গেছে। একইসঙ্গে বিষয়টি কোম্পানির আইপিওর দায়িত্বে নিয়োজিত ইস্যু ম্যানেজার বিএমএসএল ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড ও স্বদেশ ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে।
বিভিন্ন সময়ে দেওয়া কোম্পানির আইপিও আবেদন, খসড়া প্রসপেক্টাস, তথ্য, সংবেদনশীল তথ্য, ডিএসইর পর্যবেক্ষণ এবং অন্যান্য প্রাসঙ্গিক নথি ও ব্যাখ্যা যাচাই করে বেশকিছু অসঙ্গতি পাওয়া গেছে বলে চিঠিতে জানিয়েছে বিএসইসি।
জানা গেছে, কোম্পানিটি আবাসনে তার বিনিয়োগের সম্পদের মূল্য জানিয়েছে ৭০০ কোটি ২০ লাখ টাকা। সেই সাথে ৩০ জুন ২০২৩ শেষে কর পরবর্তী মুনাফা হয়েছে ৬৫২ কোটি ৪৯ লাখ টাকা। কিন্তু ইন্টারন্যাশনাল অ্যাকাউন্টিং স্ট্যান্ডার্ড (আইএএস) অনুযায়ী, আবাসনে বিনিয়োগ করলে কাজ শেষ হওয়ার পর থেকে সেই বিনিয়োগের লাভ বা লোকসান হিসাব করতে হবে। তবে ৭০০ কোটি ২০ লাখ টাকায় যে মুনাফা দেখানো হয়েছে তা অবাস্তব প্রমাণ করে।
নিট সম্পদ মূল্যের বিষয়ে বলা হয়েছে, কোম্পানির সম্পদ মূল্য ২০২২ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত ছিল ৮১.৩৭ টাকা। যা ২০২৩ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৪৮,৫৪ টাকা। অথচ ন্যায্যমূল্য ও আসল মূল্যের লাভ বাদ দিলে সম্পদ মূল্য হতো ৮৫.২০ টাকা। তাই এ অতিমূল্যায়িত নিট সম্পদ মূল্যের বিষয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। সেই সাথে এই মূল্যে কোম্পানি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হলে বিনিয়োগকারী ক্ষতিগ্রস্ত হবেন এবং কোম্পানি তাদের আর্থিক অবস্থান ভুলভাবে উপস্থাপন করেছে।
লভ্যাংশের বিষয়ে বলা হয়েছে, কোম্পানিটি ২০২৩ সালের ৩০ জুন শেষে আনরিয়ালাইজড মুনাফা কৃত্রিমভাবে বাড়িয়ে দেখিয়েছে। ফলে গুরুত্বপূর্ণভাবে প্রকৃত নগদ অর্থ প্রবাহ না থাকায় লভ্যাংশ দিতে পারবে না। তাই লভ্যাংশ দিতে গেলে কোম্পানির এই অবাস্তব মুনাফা দেখানো ছাড়া কোনো উপায় থাকবে না। আয়ের বা ইপিএস অসঙ্গতির বিষয়ে বলা হয়েছে, ২০২২ সালের ৩০ জুন কোম্পানির শেয়ারপ্রতি মুনাফা (ইপিএস) ছিল ২.৯৯ টাকা। যা ২০২৩ সালের ৩০ জুন শেষে দেখানো হয়েছে ৬৫.২৫ টাকা। ৭০০ কোটি ২০ লাখ টাকা বাদ দিলে তা হবে মাত্র ৪.৬৪ টাকা। যা কোম্পানি অসত্য তথ্য প্রদান করেছে এবং তালিকাভুক্তির পর বিনিয়োগকারীদের ক্ষতি করবে।
এছাড়া কোম্পানি ২০২৩ সালের ৩০ জুন যে আর্থিক তথ্য প্রদান করেছে তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে এবং কোম্পানি অসত উদ্দেশ্যও থাকতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
এএইচ/এসএস
আপনার মতামত লিখুন :