শেয়ারবাজারে টানা দরপতন, হতাশায় বিনিয়োগকারীরা

  • নিজস্ব প্রতিবেদক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: জানুয়ারি ১২, ২০২৫, ০৭:০২ পিএম
শেয়ারবাজারে টানা দরপতন, হতাশায় বিনিয়োগকারীরা

ঢাকা: দেশের শেয়ারবাজারে টানা দরপতনে অতিষ্ঠ বিনিয়োগকারীরা। প্রায় প্রতিদিনই লেনদেনে অংশ নেওয়া বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমছে। ফলে বিনিয়োগকারীদের লোকসানের পাল্লা ভারী হচ্ছে। সেই সঙ্গে বাড়ছে হতাশাও।

রোববার (১২ জানুয়ারি) সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) যে কয়টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বেড়েছে তার চারগুণ প্রতিষ্ঠানের দাম কমেছে। ফলে কমেছে সবকটি মূল্যসূচক। তবে লেনদেনের পরিমাণ কিছুটা বেড়েছে।

চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই) দাম কমার তালিকায় স্থান হয়েছে বেশি প্রতিষ্ঠানের। ফলে এ বাজারেও মূল্যসূচকের পতন হয়েছে। সেই সঙ্গে কমেছে লেনদেনের পরিমাণও। এর মাধ্যমে চলতি বছরে লেনদেন হওয়া আট কার্যদিবসের মধ্যে পাঁচ কার্যদিবসেই শেয়ারবাজারে দরপতন হলো।

এর আগে ২০২৪ সালজুড়ে শেয়ারবাজারে বড় দরপতন হয়। এতে এক বছরে ডিএসইর বাজার মূলধন কমে ১ লাখ ১৮ হাজার ২৩০ কোটি টাকা। বাজার মূলধন কমার অর্থ তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর শেয়ার ও ইউনিটের দাম সম্মিলিতভাবে ওই পরিমাণ কমেছে। বাজার মূলধনের বড় পতনের পাশাপাশি মূল্য সূচকেরও বড় পতন হয় বছরটিতে। ২০২৪ সালে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক কমে ১ হাজার ৩০ পয়েন্ট।

এমন দরপতনের পর নতুন বছর ২০২৫ সালে শেয়ারবাজারে সুদিন দেখা যাবে এমন প্রত্যাশায় ছিলেন বিনিয়োগকারীরা। কিন্তু তাদের সেই প্রত্যাশা পূরণ হচ্ছে না। কারণ বছরের শুরুটা খুব একটা ভালো হয়নি। বরং সেই পুরো দরপতনের বৃত্তেই আটকে রয়েছে শেয়ারবাজার।

ডিএসইর এক কর্মকর্তা বলেন, শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারীদের আস্থা সংকট তলানীতে গিয়ে ঠেকেছে। যে কারণে কিছুটা ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখা গেলেই বাজারে বিক্রির চাপ বাড়ছে। আর বিক্রির চাপ বাড়ার কারণে দরপতন ঘটছে। বিক্রির চাপ না কমলে শেয়ারবাজারের দরপতন ঠেকানো সম্ভব না।

বিনিয়োগকারীরা বলছেন, শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করে বড় ধনের লোকসানের মধ্যে রয়েছি। প্রতিদিনিই ভাবি বাজার ঘুরে দাঁড়াবে। সকালের দিকে বাজারে একটু ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখা দিলেও শেষ পর্যন্ত বেশিরভাগ দিন দরপতনই ঘটে। এভাবে চলতে থাকলে বাজারের কোনো আস্থা থাকার কথা না। দিন যত যাচ্ছে আমার মতো সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হতাশা ততো বাড়ছে।

বাজার পর্যালোচনায় দেখা যায়, রোববার শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হয় বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বাড়ার মাধ্যমে। ফলে লেনদেনের শুরুতে সূচকের ঊর্ধ্বমুখিতার দেখা মিলে। কিন্তু লেনেদেনের শেষ দিকে এক শ্রেণির বিনিয়োগকারীরা শেয়ার বিক্রির চাপ বাড়ায়। ফলে দাম বাড়ার তারিকা বড় হওয়ার পাশাপাশি সবকটি মূল্যসূচক কমে দিনের লেনদেন শেষ হয়েছে।

দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইতে দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে ৬৯টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট। বিপরীতে দাম কমেছে ২৮২টির এবং ৪৮টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। এতে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ৩৮ পয়েন্ট কমে ৫ হাজার ১৫৬ পয়েন্টে নেমে গেছে। অন্য দুই সূচকের মধ্যে বাছাই করা ভালো ৩০টি কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক আগের দিনের তুলনায় ১৭ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৯০৭ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। আর ডিএসই শরিয়াহ্ সূচক আগের দিনের তুলনায় ৪ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ১৫৭ পয়েন্টে অবস্থান করছে।

সবকটি মূল্যসূচক কমলেও ডিএসইতে লেনদেনের পরিমাণ কিছুটা বেড়েছে। বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ৩৭১ কোটি টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ৩২৪ কোটি ৩ লাখ টাকা। সে হিসাবে আগের কার্যদিবসের তুলনায় লেনদেন বেড়েছে ৪৬ কোটি ৯৭ লাখ টাকা।

এই লেনদেনে সব থেকে বড় ভূমিকা রেখেছে ফাইন ফুডসের শেয়ার। টাকার অঙ্কে কোম্পানিটির ১৯ কোটি ৩৯ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা ওরিয়ন ইনফিউশনের ১৩ কোটি ৩ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। ১২ কোটি ৬৩ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে মিডল্যান্ড ব্যাংক।

এছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ ১০ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- আফতাব অটোমোবাইল, প্রাইম ফাইন্যান্স ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ড, ওয়াইম্যাক্স ইলেকট্রোড, এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজ, বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন, গ্রামীণফোন এবং রবি।

সিএসইর সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই কমেছে ১৯ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেনে অংশ নেওয়া ১৮৯টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৩৮টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১১৫টির এবং ৩৬টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। লেনদেন হয়েছে ৩ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ৭ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। 

এআর

Link copied!