ছবি : প্রতিনিধি
ঢাকা: সাবেক জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সাবেক প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু এবং রিহ্যাবের সাবেক সভাপতি ও আলফা ইসলামি লাইফ ইন্সুইরেন্সের চেয়ারম্যান আলমগীর শামসুল আলামিন (কাজল) পাচার করা অর্থে গড়েছেন মধ্যপ্রাচ্যে সাম্রাজ্য। পাচারের অর্থে বিলাসী জীবন গড়লেন দুই বন্ধু। শুধু বিলাসবহুল বাড়ি নয়, অবৈধভাবে নানা ব্যবসায় রয়েছে বিনিয়োগ।
বীমা খাত সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, কাজলের টাকা পাচারে আলফা ইসলামি লাইফের টাকাও রয়েছে কিনা তা নিয়ন্ত্রক সংস্থা বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রক কতৃপক্ষের (আইডিআরএ) বিশেষ অনুসন্ধান করলে বের করা সম্ভব। এতে করে গ্রাহকের টাকা নয়-ছয় করলে সঠিক তথ্য পাওয়া যাবে।
এদিকে দুবাইসহ বিভিন্ন দেশে বিলাসী জীবনের নেপথ্যে রয়েছে কমিশন বাণিজ্য এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে আত্মসাৎ করা অর্থ পাচার। আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে অর্থপাচারসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। এসব কর্মকাণ্ডের সঙ্গে অন্যতম মুখ্য ভূমিকায় সম্পৃক্ততার সমালোচনা রয়েছে এই দুই বন্ধুর বিরুদ্ধে। আওয়ামী লীগ আমলে দীর্ঘ ১১ বছর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন নসরুল হামিদ বিপু।
প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালনকালে বিপুর সব কমিশন বাণিজ্যের টাকা নিতেন কাজল। কমিশনের এই টাকার বড় অংশই বিদেশে পাচার করেন তিনি। একই সঙ্গে পিপলস লিজিংয়ের কয়েক শ কোটি টাকা শামসুল আলামিন গ্রুপের মালিক আলমগীর শামসুল আলামিন কাজল পাচার করেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।
এসব পাচারকৃত অর্থে দুবাইয়ে বিলাসবহুল বাড়ি ক্রয় ছাড়াও ব্যাংককের সুখুমভিট এলাকায় একটি হোটেলেও ২০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছেন কাজল। বিভিন্ন সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
প্রি-পেইড মিটার বাণিজ্যেও বিপু-কাজল:
বিদ্যুৎ খাতে সাড়ে চার কোটির বেশি গ্রাহককে প্রি-পেইড মিটার দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছিল গত আওয়ামী লীগ সরকার। একে একে ছয়টি বিতরণ সংস্থা মিটার আমদানি করতে থাকে। এ নিয়ে কয়েক হাজার কোটি টাকা বাণিজ্যের সুযোগ তৈরি হয়। আর এই বাণিজ্যের পুরোটার নিয়ন্ত্রণ নেয় সাবেক বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপুর ‘ভাই-বন্ধু’ চক্র। এই চক্রে বিপুর সঙ্গে সরাসরি যুক্ত ছিলেন শামসুল আলামিন কাজল। মিটার বাণিজ্যের নামে অর্থ পাচারেরও অভিযোগ আছে এই চক্রের বিরুদ্ধে।
ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজিউমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানি উপদেষ্টা এম শামসুল আলম বলেন, নিম্নমানের মিটার দিয়ে হাজার হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে। মিটার কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িত সচিব, ব্যবসায়ীসহ সবার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে, ক্ষতিপূরণ আদায় করতে হবে।
পিপলস লিজিংয়ের কয়েক শ কোটি টাকা কাজলের পকেটে:
পিপলস লিজিং লুটপাটের কারিগরদের মধ্যে একজন শামসুল আলামিন গ্রুপের মালিক শামসুল আলামিন কাজল। জানা গেছে, ক্যাপ্টেন মোয়াজ্জেম পিপলস লিজিংয়ের চেয়ারম্যান থাকা অবস্থায় সংঘটিত অনিয়মে প্রতিষ্ঠানটির আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ এক হাজার ৮৪০ কোটি টাকা।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, পরোক্ষভাবে এসব অর্থের সবচেয়ে বড় সুবিধাভোগী ছিলেন শামসুল আলামিন গ্রুপ।
হাইকোর্টে পাঠানো প্রতিবেদন অনুযায়ী, লুটপাট হওয়া দুই হাজার ১৭৫ কোটি টাকার মধ্যে পিপলস লিজিং থেকে ৩৩৫ কোটি টাকা ঋণ হিসেবে নিয়েছিল শামসুল আলামিন গ্রুপ। এর মধ্যে ১৯১ কোটি টাকা সরাসরি লোন ও বাকি ১৪৪ কোটি টাকা মার্জিন লোন। এসব ঋণের বেশির ভাগ অর্থ পরিশোধ করে দেওয়ার দাবি শামসুল আলামিনের।
সূত্র জানায়, মূল ঋণের বেশির ভাগ অর্থই পরিশোধ করা হয়নি। এ ছাড়া আইন অনুযায়ী, একই প্রতিষ্ঠানের বোর্ড সদস্যের সুদ মওকুফ করার কোনো সুযোগ নেই। আর সে সময় শামসুল আলামিন ছিলেন প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক।
হাইকোর্টের নির্দেশে একনাবিন চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টকে প্রতিষ্ঠানটি অডিট করার দায়িত্ব দেওয়া হয়। একনাবিনের অডিট রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০১৯ সালের ২১ জুলাই পর্যন্ত পিপলস লিজিংয়ের কাছে শামসুল আলামিন গ্রুপের দায় ছিল ৩৩৫ কোটি টাকা।
এসব অভিযোগের বিষয়ে শামসুল আলামিন কাজলের সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। জানা গেছে, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে তিনি আত্মগোপনে আছেন।
এসআই
আপনার মতামত লিখুন :