ঢাকা: দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ব্যবস্থাপনা পরিচালকের (এমডি) নিয়োগ ইস্যু সবসময়ই নতুন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়। কারণ দেশের শীর্ষস্থানীয় এ প্রতিষ্ঠানটিতে গত ২২ বছরে ১১ জন এমডি বদল হয়েছেন। এর মধ্যে কেবল তিনজন পূর্ণ মেয়াদে তাঁদের দায়িত্ব পালন করতে পেরেছেন। অন্যদের মেয়াদ পূর্তির আগেই হয় স্বেচ্ছায় কিংবা বাধ্য হয়ে বিদায় নিতে হয়েছে।
সবশেষে এ বছরের ৮ অক্টোবর ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে ডিএসইর বর্তমান এমডি কাজী ছানাউল হক পদত্যাগপত্র জমা দেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে এ বছরের ৪ নভেম্বর এমডি পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেয় ডিএসই। বিজ্ঞপ্তি দেয়ার পর এক্সচেঞ্জটির এমডি পদের জন্য ২১ জন প্রার্থী আবেদন করেন। তাদের মধ্য থেকে আগামী ৩ বছরের জন্য একজনকে এমডি হিসেবে নিয়োগ দেবে কর্তৃপক্ষ।
জানা গেছে, ডিমিউচুয়ালাইজড স্টক এক্সচেঞ্জের এমডি হওয়ার দৌড়ে এগিয়ে রয়েছেন লন্ডন স্টক এক্সচেঞ্জের নির্বাহী পরিচালক ড. মোহাম্মদ এনামুল হক সরকার এবং সিটি ব্যাংক এনএর চিফ কান্ট্রি কমপ্লায়েন্স অফিসার (সিসিসিও) ও চিফ অ্যান্টি মানি লন্ডারিং অফিসার (সিএএমএলও) এম আশিক রহমান।
ডিএসইর নমিনেশন অ্যান্ড রিমুনারেশন কমিটি (এনআরসি) তাদের সঙ্গে আলোচনা করে এক্সচেঞ্জটির পর্ষদের কাছে তাদের নাম প্রস্তাব করবে। এদের মধ্য থেকে সাতজন প্রার্থীকে বাছাই করে ১০ ডিসেম্বর জুমের মাধ্যমে সাক্ষাত্কার নেয় এনআরসি। সাক্ষাতকারের পর এনআরসির পছন্দের তালিকায় আলোচ্য দুই প্রার্থী রয়েছেন বলে জানিয়েছেন কমিটির একজন সদস্য। কমিটি তাদের সঙ্গে আনুষঙ্গিক বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করে ডিএসইর পর্ষদের কাছে এমডি পদে সম্ভাব্য প্রার্থীর নাম সুপারিশ করবে।
ডিএসইর এমডি পদের জন্য সাক্ষাত্কার দেয়া অন্য পাঁচ প্রার্থীর মধ্যে রয়েছেন এনসিসি ব্যাংকের সাবেক এমডি মোসলেহউদ্দীন আহমেদ, এনআরবি ব্যাংকের সাবেক এমডি মো. মেহমুদ হোসেন, ডিএসইর সাবেক সিটিও এএসএম খায়রুজ্জামান, ফ্রিল্যান্স পরামর্শক মোহাম্মদ তোফাজ্জল হোসেন এফসিএ, সিপিএ, সিপিএফএ ও মো. আব্দুর রহিম।
ডিএসইর পর্ষদ এমডি পদের জন্য একজনের নাম সুপারিশ করবে। সেটি অনুমোদনের জন্য শেয়ারবাজারের নিয়ন্ত্রক বিএসইসির কাছে পাঠাবে। বিএসইসির অনুমোদন পেলে এমডি নিয়োগ চূড়ান্ত হবে।
বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দীর্ঘমেয়াদি ও সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য না থাকা, যোগ্য নেতৃত্ব ও দক্ষ-পেশাদার কর্মীর অভাব, করপোরেট সুশাসনের ঘাটতি, রাজনৈতিক প্রভাব, নামমাত্র অটোমেশন, ডিমিউচুয়ালাইজেশনের পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নে ব্যর্থতা, ডিজাস্টার রিকভারি (ডিআর) সাইট না থাকাসহ নানা কারণে পুরোপুরি কার্যকর শেয়ারবাজারে পরিণত হতে পারেনি ডিএসই।
এমনকি ২০১৮ সালে চীনা কনসোর্টিয়ামের সঙ্গে চুক্তি থেকেও কোনো বাড়তি সুবিধা আদায় করতে পারেনি ষ্টক এক্সচেঞ্জটি।
২০১৮ সালের ৪ সেপ্টেম্বর শেনজেন স্টক এক্সচেঞ্জ ও সাংহাই স্টক এক্সচেঞ্জের সমন্বয়ে গঠিত চীনা কনসোর্টিয়ামের কাছে ডিএসইর ২৫ শতাংশ শেয়ার হস্তান্তর করা হয়। ক্রয় চুক্তি অনুসারে শেয়ারের ক্রয়মূল্যের পাশাপাশি অতিরিক্ত হিসেবে ১০ বছরের জন্য বিভিন্ন ধরনের প্রযুক্তিগত সুযোগ-সুবিধা দেয়ার কথা ছিল চীনা কনসোর্টিয়ামের।
উল্লেখ্য, চলতি বছরের ৯ ফেব্রুয়ারি ডিএসইর এমডি পদে সানাউল হককে ৩ বছরের জন্য চুক্তিতে নিয়োগ দেয় সরকার। এর আগে তিনি ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন অফ বাংলাদেশের (আইসিবি) ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্বে ছিলেন।
সোনালীনিউজ/এলএ/এমএইচ
আপনার মতামত লিখুন :