ঢাকা: দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সদস্য ব্রোকারেজ হাউসের মালিকদের সংগঠন ‘ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ’র (ডিবিএ) প্রেসিডেন্ট শরীফ আনোয়ার হোসেন। দীর্ঘ ৩৬ বছরের শেয়ার ব্যবসায় জড়িত এই উদ্যোক্তা ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সাবেক পরিচালক এবং শহীদুল্লাহ সিকিউরিটিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক।
সম্প্রতি সোনালীনিউজের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় ডিবিএ প্রেসিডেন্ট শেয়ারবাজারের সমসাময়িক বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেছেন। স্টাফ রিপোর্টার আনোয়ার হোসাইন সোহেলের নেয়া সাক্ষাতকারটি তুলে ধরা হলো।
সোনালীনিউজ : করোনা পরবর্তী সময়ে মার্কেটকে কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?
শরীফ আনোয়ার হোসেন : বৈশ্বিক করোনা মহামারির ভয়াবহ অবস্থা পরে এখন দেশের শেয়ারবাজার ঘুরে দাঁড়িয়েছে। বর্তমানে যেসব কোম্পানির যেমন দাম থাকা দরকার মোটামুটি ভাবে বলা যায় সেই অবস্থানেই আসছে। কারণ এপ্রিল-মে দুই মাস বাজার বন্ধ ছিল, জুন-জুলাই মাসে বাজার চালু হলেও ট্রেড তেমনটি হয়নি। তবে আগস্ট মাস থেকে শেয়ারবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) বলিষ্ঠ ভূমিকার কারণে বাজার তার আগের অবস্থান ফিরে এসেছে। এখন তো করোনার ভ্যাকসিন আসতে শুরু করেছে। তাই বাজার আরো ভালো চলবে বলে আমার প্রত্যাশা।
সোনালীনিউজ : গ্রামাঞ্চল ও বহিঃর্বিশ্বে ব্রোকারেজ হাউসগুলোর বুথ খোলার অনুমতিকে কীভাবে দেখবেন?
শরীফ আনোয়ার হোসেন : সম্প্রতি শেয়ারবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা নিয়ন্ত্রক সংস্থা ব্রাঞ্চ (শাখা) অফিস খোলার বদলে বুথ খেলার অনুমোদন দিয়ে, ব্যবসায়ীদের দীর্ঘদিনের একটা দাবিপূরণ করেছে। এতে আমাদের অনেকে ব্রাঞ্চ খুলেও বিএসইসির নির্দেশনা না থাকায় অফিস চালাতে পারছিলেন না। এখন গ্রামাঞ্চলে ব্রোকারেজ হাউজের বুথ স্থাপনের অনুমোদন দেয়ার মাধ্যমে শেয়ারবাজারের নেটওয়ার্ক পুরো বাংলাদেশে ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে। এর ফলে প্রান্তিক পর্যায়ে থাকা সাধারণ বিনিয়োগকারী, অন্যদিকে প্রবাসিরাও বাংলাদেশের শেয়ারবাজারে অংশীদার হতে পারবেন।
ঢাকায় না এসে নিজের এলাকায় (সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদ সদর দফতর) থেকেও ডিজিটাল বুথের মাধ্যমে ব্রোকারেজ হাউজের ব্যবসা সম্প্রসারণের পাশাপাশি বিনিয়োগকারীদের সেবাপ্রাপ্তিও অনেক সহজ হবে। মূল্যবান সময় ও যানজটের ভোগান্তি থেকে রক্ষা পাবেন বিনিয়োগকারীরা।
সোনালীনিউজ : ডিএসইকে আরো আধুনিক ও আন্তর্জাতিক মানের করতে কী কী পদক্ষেপ নেয়া যেতে পারে?
শরীফ আনোয়ার হোসেন : আপনারা জানানে, প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলছে শেয়ারবাজার। একুশ শতকের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আমাদের দেশের শেয়ারবাজারেও নিত্যনতুন প্রযুক্তির ব্যবহার করা হচ্ছে। এ লক্ষ্যে বিশ্বের প্রথম সারির চীনের দুটি স্টক এক্সচেঞ্জ সেনজেন ও সাংহাই কৌশলগত বিনিয়োগকারী হিসেবে আমাদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে।তারা আমাদের প্রযুক্তিগত সহযোগিতা দিচ্ছে। এরফলে আমাদের স্টক এক্সচেঞ্জগুলোকে এখন আন্তর্জাতিক মানের বলে আমরা মনে করি। পাশাপাশি প্রযুক্তির উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে আমাদেরও তার যথপোযু্ক্ত ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।
সোনালীনিউজ : শেয়ারবাজারে ভালো কোম্পানি ও বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে কোন ধরনের উদ্যোগ জরুরি বলে আপনি মনে করছেন?
শরীফ আনোয়ার হোসেন : শেয়ারবাজারের একটি থিম হচ্ছে, ভালো কোম্পানি তালিকাভুক্ত হলে ভালো বিনিয়োগকারী বাড়বে, আর ভালো বিনিয়োগকারী আসলে ভালো ব্যবসা হবে। বাজারে দেশি-বিদেশি ভালো কোম্পানি আনতে সরকারকেই সবার আগেই এগিয়ে আসতে হবে। বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে দরকার সরকারের সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা এবং বিনিয়োগ বন্ধ পরিবেশ তৈরি করা। বিনিয়োগ বান্ধব পরিবেশ থাকলে সহজেই বিদেশি বিনিয়োগকারীরা ছুটে আসবেন।
সোনালীনিউজ : শেয়ার বাজারের তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণের বাধ্যবাধকতাকে আপনি কীভাবে দেখছেন?
শরীফ আনোয়ার হোসেন : শেয়ারবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি ২০১১ সালের নভেম্বরে শেয়ারবাজারের তালিকাভুক্ত কোম্পানির উদ্যোক্তা-পরিচালকদের জন্য ন্যূনতম শেয়ার ধারণ–সংক্রান্ত আইন পাশ করে। এ আইনে কোম্পানিগুলোর উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণের নির্দেশনা দেয়া হয়েছিল। বর্তমান কমিশন সেই সিদ্ধান্তের আলোকে চলতে বছর থেকে আইনটি প্রতিপালনের শুরু করেছে। ইতোমধ্যে ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারনে ব্যর্থ কয়েকটি কোম্পানির বোর্ড পুনর্গঠন প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এটা শেয়ারবাজারের জন্য একটি বড় ইতিবাচক দিক। এতে করে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের আস্থা আরো বৃদ্ধি পাবে। বিনিয়োগকারীরা জানতে পারবেন তারা কার সঙ্গে কাজ করছেন এবং তাদের কষ্টার্জিত অর্থ কাদের হাতে তুলে দিচ্ছেন। এতে আস্থার পাশাপাশি বিনিয়োগকারীরা লাভবান হবেন। অন্যদিকে উদ্যোক্তা ও পরিচালকরা জবাবদিহির আওতায় আসবেন।
সোনালীনিউজ : নতুন বছরে বাজার নিয়ে আপনার প্রত্যাশা কি?
শরীফ আনোয়ার হোসেন : নতুন বছর ২০২১ সালে শেয়ারবাজার নিয়ে প্রত্যাশা অনেক। তবে করোনা মহামরির মধ্যেও আমাদের শেয়ারবাজার ঘুরে দাঁড়িয়েছে। নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি এরই মধ্যে বেশকিছু যুগান্তকরী প্রদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। যাতে করে আগামীদিনে আমাদের শেয়ারবাজারের উদ্যোক্তা-পরিচালক এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীরা একটি ভালো বাজার ব্যবস্থাপনা দেখতে পাবেন। যেখানে সবাই খুশি হবে। তবে নতুন বছরে একটি প্রত্যাশা হলো করোনামহামারী থেকে মুক্তিপাক বিশ্বমানবতা। বিশ্বময় জীবিকার জন্য ছড়িয়ে পড়ুক মানুষ।
সোনালীনিউজ/এএস/এলএ
আপনার মতামত লিখুন :