ঢাকা : ভোজ্যতেল সয়াবিনের দাম দফায় দফায় বেড়েই চলেছে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে আরেক দফা বেড়েছে এই নিত্যপণ্যটির দাম। বোতলজাত ও খোলা সয়াবিনের পাশাপাশি বেড়েছে পামঅয়েলের দামও।
ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাবে গত এক সপ্তাহে খোলা সয়াবিনের দাম দুই দশমিক ১৯ শতাংশ এবং খোলা পামঅয়েলের দাম বেড়েছে এক দশমিক ২ শতাংশ। এছাড়া, বোতলজাত পাঁচ লিটার সয়াবিনের দাম এক দশমিক ৬৮ শতাংশ বেড়েছে।
এমন পরিস্থিতিতে পাইকারি ব্যবসায়ীরা আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্যতেলের দাম স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত সব ধরনের ভ্যাট তুলে দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। ভোজ্যতেল আমদানিকারকদের দাবি, বিশ্ববাজারের বর্তমানে সয়াবিন ও পামঅয়েলের দাম স্বাভাবিকের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, বিদায়ী বছরের জুলাই মাসে ৯০ শতাংশ আমদানিনির্ভর পণ্যটির দাম ছিল প্রতিটন ৭০০ ডলার। সেটি বর্তমানে ১১০০ ডলার ছাড়িয়েছে।
একারণে বর্তমানে প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিনের দাম ১৪০ টাকা পর্যন্ত উঠেছে। এছাড়া, আগে বোতলজাত এবং খোলা তেলের দামের মধ্যে লিটার প্রতি ১৫ থেকে ২০ টাকা পার্থক্য থাকলেও বর্তমানে উভয় প্রকার তেলই বিক্রি হচ্ছে প্রায় সমান দামে। এ অবস্থায় ভোক্তাদের কথা বিবেচনায় নিয়ে অন্তত ২-৩ মাসের জন্য ভ্যাট প্রত্যাহার করা হলে সুবিধা পাবেন সাধারণ মানুষ।
এ প্রসঙ্গে, মৌলভীবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও বাংলাদেশ পাইকারি ভোজ্যতেল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ গোলাম মাওলা বলেন, ‘ভোজ্যতেল আমদানিতে বিভিন্ন ধাপে যে ভ্যাট নেওয়া হয় সেটি আপাতত স্থগিত করতে পারে সরকার। এছাড়া, এই মুহূর্তে ভোজ্যতেলের দাম কমানোর আর কোনো বিকল্প নেই।’
তিনি বলেন, ‘ভোজ্যতেল আমদানিকারকদের দাবি অনুযায়ী প্রতি লিটার তেল আমদানি থেকে শুরু বাজারজাত করা পর্যন্ত বিভিন্ন ধাপে ২৪ টাকা ভ্যাট দিতে হয়। এই ২৪ টাকা যদি না নেওয়া হয় তাহলে দামটা ভোক্তাদের জন্য কিছুটা সহনীয় হবে।’ গোলাম মাওলা জানান, আগামী মার্চের মধ্যে উৎপাদন মৌসুমে আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম অনেকটাই কমে আসবে।
এদিকে, মৌলভীবাজারে খোলা সয়াবিন প্রতিলিটার ১০৯ টাকা দরে বিক্রির কথা জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। কিন্তু খুচরা পর্যায়ে সেটি বিক্রি হচ্ছে লিটার প্রতি ১২৫ থেকে ১৩০ টাকা পর্যন্ত। পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ের দামে বিশাল ব্যবধান রয়েছে সেদিকে নজর দেওয়া হচ্ছে না। এ অবস্থায় বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারের কঠোর নজরদারির দাবি জানিয়েছেন ভোক্তারা।
এদিকে, বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনষ্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনে ভোজ্যতেলে তিন স্তরের ভ্যাটের পরিবর্তে এক স্তরের ভ্যাট নির্ধারণের জন্য চিঠি দেয়। বিষয়টি বিবেচনার জন্য সুপারিশ করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) এ ব্যাপারে দুদফা চিঠি দিলেও এখনো এর কোনো সুরাহা হয়নি।
সবশেষ গত ২৪ জানুয়ারি দ্বিতীয় দফায় এনবিআরকে চিঠি দেওয়ার কথা জানিয়েছিলেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুন্সি। কিন্তু সেই চিঠির ফলাফল এখনো পাওয়া যায়নি। একইসঙ্গে, আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সমন্বয় করে ভোজ্যতেলের যৌক্তিক মূল্য নির্ধারণের কথাও বলেছিলেন মন্ত্রী। কিন্তু সেটিরও কোনো সুফল মেলেনি।
এদিকে, চালের দাম এখনো রয়েছে সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে। গরিবের মোটা চালের দাম এখনো ৪৬ টাকা থেকে ৫০ টাকা, মাঝারি মানের চালের দাম প্রতি কেজি ৫৫ থেকে ৫৮ টাকা। আর চিকন বা সরু চালের কেজি এখন ৬২ থেকে ৬৫ টাকা।
রাজধানীর বাজারগুলো ঘুরে দেখা গেছে, ডাল, ময়দা, মসলার মতো অন্য নিত্যপণ্য এবং সবজির দামও গত সপ্তাহের তুলনায় কিছুটা বেড়েছে। দাম বাড়ার তালিকায় রয়েছে আদা, রশুন, হলুদও। আমদানি করা আদা কেজিতে ২০ বেড়ে ১৩০ টাকা দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে। এছাড়া, রসুনের দাম কেজিতে ২০ টাকা বেড়ে বর্তমানে ১৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া, খোলা আটা কেজিপ্রতি বেড়েছে ২ টাকা। আর ১৩০ টাকার ধনে এখন ১৭০ টাকা।
ধীরে ধীরে বাড়ছে বিভিন্ন শাক-সবজির দামও। রাজধানীর বাড্ডা এলাকার ব্যবসায়ী আব্দুল আলিম জানান, শীত কমে আসার সাথে সাথে বাড়তে শুরু করে সব ধরনের সবজির দামই। এর বাইরে মসুর ডাল ও অ্যাংকর ডালের দামও কিছুটা বেড়েছে। শুধু তাই নয়, সবজির দাম ধীরে ধীরে বাড়তে শুরু করেছে। যদিও এখনো পর্যন্ত সবজির দাম অনেকটা হাতের নাগালেই রয়েছে বলে জানিয়েছেন ভোক্তারা। তবে অন্যান্য নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়া নিয়ে হতাশ ক্রেতারা।
রাজধানীর বাড্ডা এলাকার বাসিন্দা আব্দুর রাজ্জাক রাজ জানান, সীমিত আয়ের মানুষদের জন্য নিত্যপণ্য কেনা অনেকটা কঠিন হয়ে পড়েছে। আয়ের সাথে ব্যয়ের সামঞ্জস্য না থাকায় হিমশিম খেতে হচ্ছে। এছাড়া, যে জিনিসের দাম একবার বাড়ে সেটি আর কমার লক্ষণ থাকে না। এজন্য সরকারের বাজার মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদারের দাবি জানান।
তবে গত সপ্তাহের তুলনায় কেজিতে ১০ টাকা কমেছে পেঁয়াজের দাম। বর্তমানে কেজি প্রতি ৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে দেশি পেঁয়াজ। যা গত সপ্তাহে এক লাফে ৪০ টাকায় উঠেছিল। পেঁয়াজের পাশাপাশি কিছুটা কমেছে আলু ও ডিমের দামও। নতুন আলু ১৫ থেকে ১৮ টাকার মধ্যে খুচরা বিক্রি হতে দেখা গেছে।
গত সপ্তাহে ১০০ টাকার ডিম এ সপ্তাহে ৯০ থেকে ৯৫ টাকা ডজন বিক্রি হচ্ছে।
এছাড়া, টমেটো, শসা, মুলা, পেপে, বেগুন, ফুলকপি, বাঁধাকপির দাম যথারীতি পিস ও কেজিতে দাম কিছুটা ওঠানামা করলেও সেটিকে স্বাভাবিক হিসেবেই দেখছেন ক্রেতা ও বিক্রেতারা।
সোনালীনিউজ/এমটিআই
আপনার মতামত লিখুন :