ঢাকা : বাজেট ঘাটতি অর্থায়নে সমাপ্ত অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে প্রায় ৯২ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে সরকার। এই ঋণের মধ্যে অভ্যন্তরীণ খাত থেকে নেওয়া হয়েছে ৪৫ হাজার ৩৯৬ কোটি টাকা। বিদেশি উৎস থেকে নেওয়া হয়েছে ৪৬ হাজার ৫৩০ কোটি টাকা।
গত ২০২১-২০২২ অর্থবছরের মূল বাজেটে সার্বিক ঘাটতির পরিমাণ ধরা হয়েছিল ২ লাখ ১৪ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা। সংশোধিত বাজেটে এটি কমিয়ে ২ লাখ ৪ হাজার ৫০০ কোটি টাকা প্রাক্কলন করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে মোট ঋণের পরিমাণ সংশোধিত বাজেটে ৪৫ শতাংশ। অর্থ বিভাগের সাম্প্রতিক এক পরিসংখ্যানে এ তথ্য জানা গেছে।
অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, বাজেট ঘাটতি মেটাতে ২০২১-২০২২ অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে (জুলাই ২০২১-মার্চ ২০২২) অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ৪৫ হাজার ৩৯৬ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে সরকার (এটি বাজেট ঘাটতি অর্থায়নের ৫০.৬২ শতাংশ)। এর মধ্যে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ঋণ নেওয়া হয়েছে ২৯ হাজার ৩৯৪ কোটি টাকা (এটি মোট অভ্যন্তরীণ ঋণের ৬৪.৭৫ শতাংশ) এবং ব্যাংক বহির্ভূত খাত বিশেষত সঞ্চয়পত্র খাত থেকে ১৬ হাজার ৫০৪ কোটি টাকা (এটি মোট অভ্যন্তরীণ ঋণের ৩৫.২৫ শতাংশ) ঋণ নেওয়া হয়েছে।
২০২১-২০২২ অর্থবছরের মূল বাজেটে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে সরকারের ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭৬ হাজার ৪৫২ কোটি টাকা। সংশোধিত বাজেটে এটি বাড়িয়ে ৮৭ হাজার ২৮৭ কোটি টাকা প্রাক্কলন করা হয়েছে। অন্যদিকে মূল বাজেটে সঞ্চয়পত্র খাত থেকে ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩২ হাজার কোটি টাকা। সংশোধিত বাজেটেও এটি অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে।
পরিসংখ্যানে দেখা যায়, আগের অর্থবছরের (২০২০-২০২১) একই সময়ের (জুলাই-মার্চ) তুলনায় সমাপ্ত ২০২১-২০২২ অর্থবছরে বাজেট ঘাটতি অর্থায়নে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে সরকারের নিট ঋণ নেওয়া বেড়েছে। ২০২০-২০২১ অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে সরকারের ঋণ নেওয়ার পরিমাণ ছিল ১৩ হাজার ৭৩৩ কোটি টাকা। সে হিসাবে সমাপ্ত অর্থবছরের একই সময়ে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে সরকারের ঋণ ১৫ হাজার ৬৬১ কোটি টাকা বেড়েছে।
অন্যদিকে ২০২০-২০২১ অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে সঞ্চয়পত্র খাত থেকে ঋণ নেওয়া হয়েছিল ৩৩ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকা। সে হিসাবে সমাপ্ত অর্থবছরের একই সময়ে সঞ্চয়পত্র খাত থেকে ঋণ নেওয়া কমেছে ১৭ হাজার ৪৮১ কোটি টাকা।
অর্থ বিভাগের হিসাব মতে, বাজেট ঘাটতি অর্থায়নে ২০২১-২০২২ অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে (জুলাই ২০২১-মার্চ ২০২২) বৈদেশিক উৎস থেকে ঋণ নেওয়া হয়েছে ৪৬ হাজার ৫৩০ কোটি টাকা। এটি বাজেট ঘাটতি অর্থায়নের ৪৯ দশমিক ৩৮ শতাংশ। বাজেট ঘাটতি অর্থায়নে দ্বিপক্ষীয় নমনীয় ঋণের ওপর জোর দিচ্ছে সরকার। গৃহীত বৈদেশিক ঋণের ৫৩ দশমিক ৮১ শতাংশ দ্বিপক্ষীয় এবং ৪৬ দশমিক ১৯ শতাংশ বহুপক্ষীয় ঋণ।
সমাপ্ত অর্থবছরের মূল বাজেটে বৈদেশিক উৎস থেকে নিট ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৯৭ হাজার ৭৩৮ কোটি টাকা। সংশোধিত বাজেটে এটি কমিয়ে ৮০ হাজার ২১২ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। বাজেট ঘাটতি অর্থায়নে বৈদেশিক উৎস থেকে সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রার ৫৮ শতাংশ ঋণ নেওয়া হয়েছে।
পরিসংখ্যান পর্যালোচনায় দেখা যায়, বাজেট ঘাটতি অর্থায়নে আগের অর্থবছরের (২০২০-২০২১) প্রথম ৯ মাসের (জুলাই-মার্চ) তুলনায় সমাপ্ত ২০২১-২০২২ অর্থবছরের একই সময়ে সরকারের বৈদেশিক ঋণ নেওয়া বেড়েছে। ২০২০-২০২১ অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে এ খাত থেকে সরকারের নিট ঋণ নেওয়ার পরিমাণ ছিল ১১ হাজার ১০৬ কোটি টাকা। সে হিসাবে সমাপ্ত অর্থবছরে এ খাতে সরকারের ঋণ বেড়েছে ২৫ হাজার ৪২৪ কোটি টাকা।
সোনালীনিউজ/এএইচ/এমএএইচ
আপনার মতামত লিখুন :