রিজার্ভে বইছে সুবাতাস

  • নিজস্ব প্রতিবেদক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: এপ্রিল ১, ২০২৩, ০৩:২০ পিএম
রিজার্ভে বইছে সুবাতাস

বৈদেশিক মুদ্রা। ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা : দেশের অর্থনীতিকে চাঙ্গা রাখতে এখন প্রধান নিয়ামক হিসেবে কাজ করছে রপ্তানি আয় ও রেমিট্যান্স। দেশের ডলারের অস্থির বাজারে স্বস্তিও আনছে খাত দুটি। সেই সঙ্গে তলানিতে নামা রিজার্ভেও স্বস্তি আসছে রপ্তানি আয় ও রেমিট্যান্সের কল্যাণে।

একদিকে তৈরি পোশাকের সর্ববৃহৎ বাজার ইউরোপে পোশাক রপ্তানির উচ্চ প্রবৃদ্ধি এবং রোজা ও সামনে ঈদ থাকায় রেমিট্যান্স আহরণেও বেশ ভালো উল্লম্ফন হয়েছে।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, রপ্তানি আয় ও রেমিট্যান্স আশা জাগাচ্ছে অর্থনীতিতে।

এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, রোজার মাস হওয়ায় মার্চে রেমিট্যান্স আহরণ ২ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে থাকা প্রবাসীরা এ উপলক্ষে দেশে পরিবারের কাছে বেশি অর্থ পাঠাচ্ছেন এখন। গড়ে প্রতিদিন এখন প্রবাসী আয় আসছে ৭১৩ কোটি টাকার বেশি। মার্চের ৩০ তারিখ পর্যন্ত বৈধ বা ব্যাংকিং চ্যানেলে প্রায় ২০০ কোটি মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ অর্থ দেশে এসেছে। এ হিসাবে দৈনিক গড়ে এসেছে ৬ কোটি ৬৬ লাখ ডলার। প্রতি ডলার ১০৭ টাকা হিসাবে প্রতিদিন এসেছে ৭১৩ কোটি ৩৩ লাখ টাকা।

অথচ গত মাসে দেশে রেমিট্যান্স এসেছিল ১৫৬ কোটি ১২ লাখ ৬০ হাজার মার্কিন ডলার। অর্থাৎ ফেব্রুয়ারি মাসের চেয়ে মার্চে রেমিট্যান্স বেশি এসেছে ৪৪ কোটি ডলার। গত বছরের মার্চে দৈনিক গড়ে রেমিট্যান্স এসেছিল ৬ কোটি ডলারের মতো।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক বলেন, আগের মাস ফেব্রুয়ারির চেয়ে মার্চে প্রবাসী আয়ে বেশ ভালো প্রবৃদ্ধি হয়েছে। ২৮ মার্চ পর্যন্ত রেমিট্যান্স এসেছে ১ দশমিক ৮৫ বিলিয়ন ডলার।

গত ২৯ ও ৩০ মার্চের হিসাব ধরলে এ মাসে রেমিট্যান্স ২ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে। এছাড়া এখন রিজার্ভ কিছুটা বেড়ে ৩১ দশমিক ০৬ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। এর মধ্যে এক্সপোর্ট ডেভেলপমেন্ট ফান্ডে রয়েছে ৫ বিলিয়ন ডলারের মতো। সুতরাং ধীরে ধীরে রিজার্ভ বাড়ছে, সংকটও কাটছে। সামনে ঈদ রয়েছে। সুতরাং এপ্রিলে রেমিট্যান্স আরও বাড়বে, যা অর্থনীতির জন্য আরও স্বস্তির বারতা নিয়ে আসবে।

তিনি আরও বলেন, রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয় বৃদ্ধি পাওয়ায় ব্যাংকগুলোতে ডলারের হোল্ডিং বাড়ছে। ব্যাংকগুলোতে এখন ডলারের হোল্ডিং ৩ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলার। ফলে ব্যাংকগুলোতে এলসি খোলা নিয়ে যে জটিলতা ছিল এখন সেটিও কমে আসছে। বলা যায়, ব্যাংকে এখন আর এলসি সংকটের হাহাকার আর নেই।

এদিকে বিজিএমইএ সূত্রে জানা গেছে, ২০২১ সালের তুলনায় ২০২২ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়নে (ইইউ) বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি ৩৫ দশমিক ৬৯ শতাংশ বেড়েছে, যা বিশ্বের যেকোনো দেশের চেয়ে সর্বোচ্চ প্রবৃদ্ধি। এ সময়ে বাংলাদেশ সেখানে ২২ দশমিক ৮৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে এবং দ্বিতীয় বৃহত্তম রপ্তানিকারক হিসেবে নিজেদের অবস্থান বজায় রেখেছে।

ইউরোস্ট্যাটের পরিসংখ্যান অনুসারে ২০২২ সালে সারা পৃথিবী থেকে ইইউর পোশাক আমদানি বেড়েছে ২০ দশমিক ৯৭ শতাংশ। প্রধানতম রপ্তানিকারক দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ সেখানে সর্বোচ্চ রপ্তানি প্রবৃদ্ধি অর্জনে সক্ষম হয়েছে। ইউরোস্ট্যাটের পরিসংখ্যান অনুসারে শীর্ষ পোশাক রপ্তানিকারক দেশ চীন থেকে ইউরোপীয় ইউনিয়নে রপ্তানি বেড়েছে ১৭.১ শতাংশ।

২০২২ সালে চীন থেকে ইইউর আমদানি ছিল ৩০ দশমিক ১৪ বিলিয়ন ডলার। ইইউর তৃতীয় বৃহত্তম পোশাক আমদানির উৎস তুরস্ক থেকে পোশাক আমদানি ১০.০৯ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে এবং আমদানি ১১ দশমিক ৯৮ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। ভারত ও ভিয়েতনাম থেকে ইইউর আমদানি যথাক্রমে ২১.০২ এবং ৩৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। শুধু তাই নয়, ইউরোপে পোশাক রপ্তানির পরিমাণে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২১ দশমিক ২০ শতাংশ এবং ইউনিট প্রাইস বৃদ্ধিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১১ দশমিক ৯৫ শতাংশ।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, সামগ্রিকভাবে ২০২২ সালে ইইউতে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি বেশ ভালো ছিল। কিন্তু ওই বছরের প্রথম ৬ মাস (জানুয়ারি-জুন) যেভাবে উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জন করা গেছে, পরবর্তী ৬ মাসে তা অনেকটাই কমে এসেছে। এর মূল কারণ প্রথম ৬ মাস ছিল কোভিড-১৯ পরবর্তী সময়। ফলে ক্রেতারা বেশি করে তখন পোশাক কিনেছে। এছাড়া চীনে লকডাউন থাকায় তখন আমরা ভালো করেছি।

তিনি বলেন, পরবর্তী ৬ মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব এবং ইউরোপে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ায় পোশাকের চাহিদা কমতে শুরু করে। এর প্রভাব আমাদের রপ্তানিতেও পড়েছে। এ ছাড়া উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় উদ্যোক্তারা এখন ইইউতে রপ্তানি প্রবৃদ্ধি ধরে রাখা নিয়ে শঙ্কার মধ্যে রয়েছে বলে জানান তিনি।

এ বিষয়ে অর্থনীতিবিদ ও পলিসি রিসার্স ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘রপ্তানি আয় ও রেমিট্যান্সে ভালো প্রবৃদ্ধি দেশের অর্থনীতির জন্য স্বস্তির খবর। তবে এ ধারা অব্যাহত রাখতে রপ্তানি বাণিজ্য যাতে বাধাগ্রস্ত না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। আর রেমিট্যান্স প্রবাহ আরও বাড়ানোর জন্য হুন্ডি প্রতিরোধে আরও কার্যকর ভূমিকা নিতে হবে। তা হলে প্রবাসীরা বৈধ চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠাতে বাধ্য হবেন।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Link copied!