আমদানি পণ্য আসায় ঝাল কমেছে কাঁচা মরিচের

  • নিজস্ব প্রতিবেদক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: জুলাই ৩, ২০২৩, ১২:৩৬ পিএম
আমদানি পণ্য আসায় ঝাল কমেছে কাঁচা মরিচের

ঢাকা : পবিত্র ঈদুল আজহাকে কেন্দ্র করে অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছিল কাঁচা মরিচের দাম। নিত্যপ্রয়োজনীয় এ পণ্যের দাম কিছু কিছু জায়গায় ঠেকেছিল ৭০০ টাকা। কোথাও ১২০০ টাকাও বিক্রি হয়েছে বলে শোনা গেছে। তবে রোববার (২ জুলাই) ভারত থেকে আমদানির পর দেশের বিভিন্ন স্থানে কমতে শুরু করেছে কাঁচা মরিচের দাম। 

জানা গেছে, সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দর দিয়ে পাঁচ দিন আমদানি-রপ্তানি বন্ধ থাকার পর রোববার ছয় ট্রাক ভারতীয় কাঁচা মরিচ দেশে ঢুকেছে। বেলা ১১টার দিকে মরিচভর্তি ট্রাকগুলো ভোমরা স্থলবন্দরে প্রবেশ করে।

ভোমরা সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মাকসুদ আলম খান জানান, পবিত্র ঈদুল আজহার কারণে ২৭ জুন থেকে ১ জুলাই পর্যন্ত পাঁচ দিন ছুটি ছিল ভোমরা স্থলবন্দরে। ফলে টানা পাঁচ দিন ভোমরা স্থলবন্দরে কোনো আমদানি ও রপ্তানি হয়নি। তেমনি ভারতের ঘোজাডাঙ্গা বন্দর থেকে কোনো পণ্য আসেনি। রবিবার পণ্যবোঝাই ট্রাক-লরি প্রবেশের পর থেকে ফের স্বাভাবিক আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম শুরু হয় বন্দরে। দুপুর ১২টা পর্যন্ত ২১টি পাথরবোঝাই ট্রাক ও কাঁচা মরিচবোঝাই ছয়টি ভারতীয় ট্রাক বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। আগামী কয়েক দিন আরও ট্রাক প্রবেশ করবে।

ভোমরা স্থলবন্দরের উপপরিচালক মামুন কবির তরফদার জানান, ২৭ থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত সরকারি ছুটি এবং ১ জুলাই ভারত ও বাংলাদেশের সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা ঈদ উপলক্ষে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেন। ফলে পাঁচ দিন বন্ধ থাকার পর আজ থেকে আগের নিয়মে আমদানি-রপ্তানি শুরু হয়েছে।

ভোমরা স্থলবন্দরের মা ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী আমির হামজা বলেন, ৪৬০ ডলার এলসি মূল্যে আমার ছয় ট্রাক আমদানি করা কাঁচা মরিচের চালান প্রবেশ করেছে। সেগুলো আনলোড চলছে। আশা করি, কাঁচা মরিচের দাম কমে যাবে।

এদিকে ভারত থেকে আমদানির খবরে বগুড়ায় পাইকারি ও খুচরা বাজারগুলোতে কাঁচা মরিচের দাম কমতে শুরু করেছে। বগুড়ায় সবজির সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার মহাস্থান হাটে এক দিনের ব্যবধানে কাঁচা মরিচের দাম কেজিতে ১৫০ টাকা কমে রবিবার ৩০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। বগুড়া শহরের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার রাজাবাজারেও একই অবস্থা।

এক দিনের ব্যবধানে ২০০ টাকা কমে সেখানে প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ ৩৬০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। খুচরা বাজারেও কাঁচা মরিচের ঝাল কমতে শুরু করেছে। শহরের বিভিন্ন বাজারে রোববার ৩৮০ থেকে ৪০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছে। অথচ শনিবারও খুচরা বাজারে প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ বিক্রি হয়েছে ৫০০ টাকায়।

মহাস্থান হাটের সবজির আড়ত ‘সফুরা ভান্ডার’-এর স্বত্বাধিকারী শফিকুল ইসলাম জানান, ভারত থেকে কাঁচা মরিচ আমদানির খবর ছড়িয়ে পড়ায় রবিবার সকাল থেকেই দাম কমতে শুরু করে। শনিবার ওই হাটে প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ ৪৫০ টাকা দামে কেনার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আজ ৩০০ টাকা দরে কিনেছি। বাজারের যে পরিস্থিতি তাতে সোমবার হয়তো কাঁচা মরিচের দাম ২০০ টাকায় নেমে আসবে।’

বগুড়া শহরের রাজাবাজার আড়তদার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক পরিমল প্রসাদ রাজ জানান, মরিচের বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকার ব্যবসায়ীদের ভারত থেকে আমদানির অনুমতি দিয়েছে।

তিনি বলেন, রোববার দক্ষিণাঞ্চলের সাতক্ষীরা জেলার ভোমরা স্থলবন্দরে অল্প কিছু কাঁচা মরিচ আমদানি হয়েছে। সোমবার দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর দিয়ে মরিচ আমদানি হবে। তখন দাম আরও কমবে।

রোববারও রাজধানীতে বাজারভেদে কাঁচা মরিচ বিক্রি হয়েছে ৬০০ টাকা কেজি। সরেজমিনে রাজধানীর বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বেশিরভাগ দোকানেই নেই কাঁচা মরিচ। আবার দাম বেশি হওয়ায় ক্রেতাও কম। অনেকেই এসে দাম শুনে চলে যাচ্ছেন। মিরপুর-১১ নম্বর বাজারে ৩০০ টাকা দিয়ে আধা কেজি মরিচ কেনার সময় আরসাদ আলী বলেন, ছোট ভাইয়ের বিয়ে। সব ধরনের কেনাকাটা শেষ। শুধু মরিচই কেনা বাকি ছিল। কয়েক জায়গায় ঘুরে ৭০০ টাকার নিচে মরিচ পাইনি। এখানে আধা কেজি পরিমাণে পেলাম। এখন আরও ঘুরতে হবে।

রাজধানীর বিভিন্ন পাইকারি বাজারে গতকাল রোববার সকাল পর্যন্ত ৩২০ থেকে ৪০০ টাকা দরে প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ বিক্রি হয়। আর ঢাকার বিভিন্ন খুচরা বাজারে এই দাম ছিল ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা। কিছু বাজারে অবশ্য ৬০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হতেও দেখা গেছে।  রাজধানীর হাতিরপুলের খুচরা বিক্রেতা মো. মহসিন মুন্সি বলেন, ‘পাইকারি বাজারে আজ (গতকাল) পর্যন্ত উল্লেখযোগ্য দাম কমেনি। ফলে খুচরা বিক্রিতেও এর প্রভাব কম। আমরা যে দামে মরিচ কিনেছি, তার চেয়ে লোকসান দিয়ে তো আর বিক্রি করতে পারব না।’

কচুক্ষেত বাজারসংশ্লিষ্ট ইব্রাহিমপুরে একটি ভ্যানে বিভিন্ন সবজির মধ্যে দেখা গেল মরিচও। তবে পণ্যটির ক্রেতা নেই। বিক্রেতা ফরিদ উদ্দিন বলেন, দাম বেড়ে গেলে মানুষ কিনতে পারে না। আমাদেরও কোনো লাভ হয় না। ভ্যানে করে ঘুরে পণ্য বিক্রি করি। যত দ্রুত বিক্রি করতে পারি ততই ভালো। কিন্তু কিছু মরিচ কিনেছিলাম, এখন ফেঁসে গেছি।

তবে ক্রেতারা আফসোস করে জানিয়েছেন, বাজারে কোনো পণ্যই ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে নেই। কিছু দিন পরপরই ভিন্ন ভিন্ন পণ্য নিয়ে সিন্ডিকেট হচ্ছে। সাধারণ মানুষের পকেট কেটে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। সরকারের পক্ষ থেকে পদক্ষেপ না নেওয়ায় হতাশ তারা।

সিন্ডিকেট প্রতিরোধে কাঁচা মরিচ বর্জনের পরামর্শ দিয়েছেন কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান। তিনি বলেন, কাঁচা মরিচের দাম বেড়েছে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে। এখানে এই সিন্ডিকেট প্রতিরোধের দুটি পদ্ধতি রয়েছে। প্রথমত, দাম বেশি থাকা অবস্থায় পণ্যটি বর্জন করা অথবা খুবই কম খাওয়া। দ্বিতীয়ত, আমদানিতে না গিয়ে ছাদে কিংবা বারান্দায় মরিচের গাছ লাগানো। কারণ প্রতিবছরই অন্তত একবার মরিচের কারসাজি হচ্ছে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, এখন পর্যন্ত ৩৬ হাজার ৮৩০ টন কাঁচা মরিচ আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে দেশে এসেছে ৯৩ টন।

আমদানির খবরে এক দিনের ব্যবধানে এক লাফে দিনাজপুরের হাট-বাজারে কাঁচা মরিচের দাম কেজিতে কমেছে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা। শনিবার যে কাঁচা মরিচ কেজিতে বিক্রি হয়েছে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা, সেই কাঁচা মরিচ রোববার কমে বিক্রি হয়েছে ৩০০ থেকে ২৫০ টাকায়।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Link copied!