পেঁয়াজ আমদানির জন্য বিকল্প দেশ খুঁজছে সরকার

  • নিজস্ব প্রতিবেদক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১১, ২০২৩, ০২:৩৭ পিএম
পেঁয়াজ আমদানির জন্য বিকল্প দেশ খুঁজছে সরকার

ঢাকা : ভারত পেঁয়াজের রপ্তানি বন্ধের ঘোষণা দেওয়ার পর দেশের বাজারে বিরাজ করছে অস্থিরতা। পেঁয়াজের দাম কেজি প্রতি বেড়ে গেছে অন্তত ১০০ টাকা।

এ অবস্থায় বাজার নিয়ন্ত্রণে বিকল্প দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানিতে জোর দিচ্ছে সরকার।

এদিকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, ভারতের ঘোষণার পর হঠাৎ পেঁয়াজের মূল্য এত বেড়ে যাবে তা চিন্তায়ও ছিল না। ব্যবসায়ীরা কারসাজি করে এমনটি করেছেন। দাম নিয়ন্ত্রণে আনতে বিকল্প দেশ থেকে আমদানির ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, তিনি বলেন, ‘এখন আমরা বিকল্প দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানির বিষয়ে জোর দিচ্ছি। তবে এজন্য কিছুটা সময় লাগবে।’

পেঁয়াজ আমদানি করা হবে কোন কোন দেশ থেকে?

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘মিয়ানমার, পাকিস্তান, মিশর ও চীন থেকে পেঁয়াজ আমদানি করা হবে। যদিও মিয়ানমারে রাজনৈতিক অস্থিরতা চলছে। তাও চেষ্টা করা হবে, কারণ পরিবহনের ক্ষেত্রে মিয়ানমার থেকে পেঁয়াজ আনা সহজ হবে।’

ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘চীন ও পাকিস্তান থেকে কিছু পেঁয়াজ ইতোমধ্যে আমদানি হচ্ছে। এখন আরও বেশি আমদানির উদ্যোগ নেওয়া হবে। আমদানি ইস্যুতে ব্যবসায়ীরাও আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেছেন।’

মন্ত্রণালয়ের আরেক কর্মকর্তা বলেন, ‘পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণে সারা দেশে অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। এ অভিযান অব্যাহত থাকবে।’

জানা গেছে, রাজধানীর বাজারগুলোতে প্রতি কেজি ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১৯০ থেকে ২০০ টাকায়। আর দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ২২০ থেকে ২৩০ টাকায়।

যেখানে নিষেধাজ্ঞা ঘোষণার আগে বৃহস্পতিবার (৭ ডিসেম্বর) আমদানি করা পেঁয়াজের দাম ছিল ১০০ থেকে ১১০ টাকা আর দেশি পেঁয়াজের দাম ছিল ১২০ থেকে ১৩০ টাকা।এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য ও জনসংযোগ কর্মকর্তা হায়দার আলী ঢাকা পোস্টকে বলেন, নিষেধাজ্ঞার আগে বেসরকারিভাবে ৫২ হাজার মেট্রিক টন পেঁয়াজ আমদানির জন্য এলসি খোলা আছে। সেগুলো যাতে দ্রুত ছাড়া হয়, সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে ভারতে অবস্থিত বাংলাদেশের দূতাবাসকে চিঠি পাঠানো হয়েছে। মূলত পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে এ চিঠি পাঠানো হয়েছে।

এদিকে, মুড়িকাটা পেঁয়াজ বাজারে আসতে শুরু করেছে বলে জানিয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়।

রোববার মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, প্রতি বছর মুড়িকাটা পেয়াঁজ আবাদ হয় প্রায় ৫০ হাজার হেক্টর জমিতে এবং উৎপাদন হয় প্রায় ৮ লাখ টন। এই পেঁয়াজ বাজারে আসা শুরু করেছে এবং বাজারে থাকবে তিন থেকে সাড়ে তিন মাস। এরপর মূল পেয়াঁজ আসা শুরু হবে এবং উৎপাদন হতে পারে প্রায় ২৬ থেকে ২৮ লাখ টন।

রোববার (১০ ডিসেম্বর) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে রাজস্ব ভবনে এক অনুষ্ঠানে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ বলেন, ‘ভারত সরকার পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করল আর দেশে একদিনের ব্যবধানে পণ্যটির দাম হঠাৎ করে বেড়ে গেল। এটা ব্যবসায়ীদের দায়িত্বশীল আচরণ নয়।’

একদিনের ব্যবধানে দাম ৮০ টাকা বাড়ে কীভাবে– এমন প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, ‘যিনি একদিন আগে ১২০ টাকা কেজিতে পেঁয়াজ বিক্রি করলেন, পরদিন কীভাবে সেটার দাম ২০০ টাকা হয়ে গেল? দাম বাড়তে তো সময় লাগার কথা। ব্যবসায়ীরা বাড়তি লাভের আশায় নীতিহীন কাজ করলেন।’

তপন কান্তি ঘোষ বলেন, ‘নিত্যপণ্যের সংকট তৈরি হলেই অনেক ব্যবসায়ী এর সুযোগ নিয়ে থাকেন। গতকাল (শনিবার) হঠাৎ করে পেঁয়াজের দাম ৭০ থেকে ৮০ টাকা বেড়ে গেছে। এটা অবশ্যই দায়িত্বশীল আচরণ নয়। ব্যবসায়ীদের বুঝতে হবে দেশের জনগণের জন্যই ব্যবসা।’

তিনি আরও বলেন, ‘লাভ ছাড়া তো ব্যবসা করবেন না। কিন্তু যে পণ্যের মূল্য ১২০ টাকা, এক রাতের মধ্যে তা ২০০ টাকা কীভাবে হয়? ভারত রপ্তানি বন্ধের বিষয়ে মাত্রই ঘোষণা দিয়েছে। পরদিনই তো দাম বাড়তে পারে না।’

এমটিআই

Link copied!