ঢাকা: অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানিকে দেওয়া কর সুবিধা আরও ২ বছর বাড়িয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এসব প্রতিষ্ঠান এক দশক ধরেই মিউচুয়াল ফান্ড ব্যবস্থাপনা ফি বাবদ অর্জিত আয়ের ওপর ১৫ শতাংশ হারে কর দিচ্ছে। ২০২৬-২৭ অর্থবছর পর্যন্ত এ সুবিধা বহাল থাকবে।
গত বৃহস্পতিবার (১৪ মার্চ) এ-সংক্রান্ত এসআরও বা সংবিধিবদ্ধ নিয়ন্ত্রণ আদেশ জারি করেছে এনবিআর।
এনবিআরের আদেশে বলা হয়েছে, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড আয়কর আইন, ২০২৩ (২০২৩ সালের ১২নং আইন)-এর ধারা ৭৬-এর উপ-ধারা (১) এ প্রদত্ত ক্ষমতাবলে অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানিগুলোর কেবল মিউচুয়াল ফান্ড ব্যবস্থাপনা ফি বাবদ অর্জিত আয়ের ওপর উদ্ভূত করের হার কমিয়ে ১৫ শতাংশ ধার্য করা হলো। এই প্রজ্ঞাপন অবিলম্বে কার্যকর হবে এবং ২০২৬-২৭ করবর্ষ পর্যন্ত বলবৎ থাকবে।
অ্যাসোসিয়েশন অফ অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানিজ অ্যান্ড মিউচুয়াল ফান্ডস (এএএমসিএমএফ) বৃহস্পতিবার জারি করা সংবিধিবদ্ধ নিয়ন্ত্রক আদেশ (এসআরও) এর মাধ্যমে এএমসিগুলিতে প্রদত্ত কর ছাড় বাড়ানোর জন্য এনবিআরকে ধন্যবাদ জানিয়েছে।
এএএমসিএমএফের পক্ষ থেকে জানায়, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান এবং কমিশনারদের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করেছেন যাতে তারা সম্পদ ব্যবস্থাপনা খাতের জন্য এই কর রেয়াত এর প্রয়োজনীয়তা অনুধাবন করতে পারেন। পুরো প্রক্রিয়া জুড়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ ব্যবস্থাপনা খাতকে সহযোগিতার মাধ্যমে বৃহত্তর পুঁজিবাজারকে সহযোগিতা করার দৃঢ় প্রতিশ্রুতি দেখিয়েছেন।
সংগঠনটি বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনকে (বিএসইসি) এই উদ্যোগকে সমর্থন করার জন্য ধন্যবাদ জানায়।
শান্তা অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট লিমিটেডের ভাইস চেয়ারম্যান আরিফ খান বলেন, “উন্নত দেশগুলিতে মিউচুয়াল ফান্ডগুলি বিনিয়োগের অন্যতম জনপ্রিয় হাতিয়ার।
তিনি বলেন, “কিন্তু মিউচুয়াল ফান্ড শিল্পের আকারের দিক থেকে বাংলাদেশ তার প্রতিবেশী দেশ যেমন ভারতের থেকে অনেক পিছিয়ে আছে। এখন, সরকার দেশের একটি নতুন এবং ক্রমবর্ধমান খাত হিসাবে মিউচুয়াল ফান্ড সেক্টরকে উত্সাহিত করার জন্য AMC-কে ছাড় দেয়।"
দেখা যায়, কর রেয়াত সুবিধা ব্যতিত এই খাতের কোম্পানিগুলো ২৭.৫ শতাংশ হারে কর দিতে হয়।
ফান্ড ম্যানেজারদের গত সপ্তাহে শেষ হওয়া মিউচুয়াল ফান্ডের নেট অ্যাসেট ভ্যালু (এনএভি) প্রতিবেদনে দেখা যায়, ৩৭টি মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে ৩০টি ডিসকাউন্টে লেনদেন করছে। ৩৭টি তহবিলের বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৩৫.৭ বিলিয়ন টাকা, যেখানে সেক্টরের ব্যবস্থাপনার অধীনে সম্পদ (AUM) দাঁড়িয়েছে ৫৪.২ বিলিয়ন টাকা।
যেখানে ১০ টি তহবিল সর্বোচ্চ বাজার শেয়ার ধারণ করে ৪৯.২ শতাংশ এবং একটি ব্যবস্থাপনার অধীনে সম্পদ ১৬.৭ বিলিয়ন টাকা।
বাংলাদেশের মিউচুয়াল ফান্ড সম্পদের সাথে এর মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) অনুপাত মাত্র ০.৪ শতাংশ, যা প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে সর্বনিম্ন।
৬৫টি অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি (AMCs) দ্বারা পরিচালিত বাংলাদেশের মিউচুয়াল ফান্ড শিল্পের ব্যবস্থাপনার অধীনে সম্পদ (AUM) গত বছরের হিসাবে ১.৬ বিলিয়ন ছিল।
অন্যদিকে এই প্রেক্ষাপটে, মাত্র ৪৩টি অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি (AMCs) দ্বারা পরিচালিত ভারতীয় মিউচুয়াল ফান্ড শিল্পের ব্যবস্থাপনার অধীনে সম্পদ (AUM) একই সময়ে ছিল ৪৭২ বিলিয়ন। ব্যবস্থাপনার অধীনে সম্পদ (AUM) অর্থ বিনিয়োগের মোট বাজার মূল্যকে বোঝায় যা তহবিল পরিচালকরা তাদের বিনিয়োগকারীদের পক্ষে করেন।
বাংলাদেশে মিউচুয়াল ফান্ডের অজনপ্রিয়তার জন্য বিনিয়োগযোগ্য তহবিলের অভাব এবং কম আস্থাকে দায়ী করেছেন শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা। তারা বলেন, উন্নত দেশগুলিতে মিউচুয়াল ফান্ডগুলি বিনিয়োগের অন্যতম জনপ্রিয় হাতিয়ার। আমাদের দেশে তার বিপরীত।
বাংলাদেশের জিডিপিতে মিউচুয়াল ফান্ড সম্পদের বর্তমান অনুপাত মাত্র ০.৪ শতাংশ, যা ভারতে ১৬.২ শতাংশ, মালয়েশিয়ায় ৫৪ শতাংশ, পাকিস্তানে ১.৩ শতাংশ, থাইল্যান্ডে ২৮.৩ শতাংশ, ভিয়েতনামে ৬.৬ শতাংশ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ১৯৫.৭ শতাংশ এবং কানাডায় ১৮০.৮ শতাংশ৷
এই বিষয়ে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) একজন কর্মকর্তা বলেন, “মিউচুয়াল ফান্ড শেয়ারবাজারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কিন্তু গত দশ বছরে মিউচুয়াল ফান্ড বিনিয়োগকারীদের প্রত্যাশা পূরণ করতে ব্যর্থ হয়েছে।”
শেয়ারবাজার বিশ্লেষক আবু আহমেদ, “একজন তহবিল ব্যবস্থাপককে পেশাগতভাবে তহবিল পরিচালনায় স্বচ্ছতা নিশ্চিত করে এবং স্বাস্থ্যকর রিটার্ন প্রদানের মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে।
তিনি বলেন, “শিল্পটিকে কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত করা উচিত। দেশের মিউচুয়াল ফান্ড ব্যবস্থাপনার অধীনে সম্পদ (AUM) থেকে GDP অনুপাত উল্লেখযোগ্যভাবে ০.৪ শতাংশে রয়ে গেছে। এটি বৃদ্ধির জন্য যথেষ্ট জায়গা আছে।"
ভিআইপিবি অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) শহিদুল ইসলাম, সিএফএ বলেন, “মিউচুয়াল ফান্ড শিল্প বাংলাদেশে এখনও একটি প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে।
তিনি বলেন, এনবিআর এসআরও সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানিগুলির জন্য কম করের বিদ্যমান বিধান প্রসারিত করে শিল্পকে আরও বৃদ্ধিতে সহায়তা করবে।"
এএইচ/আইএ
আপনার মতামত লিখুন :