ঢাকা: নিত্যপণ্যের দামের সঙ্গে কুলিয়ে উঠতে হিমশিম খাচ্ছে সাধারণ মানুষ। বাজার খরচে তাই লাগাম টানতে হচ্ছে নিম্ন থেকে মধ্যবিত্ত সবার। নির্বাচনের আগে হঠাৎ ৬০০ টাকায় গরুর মাংস বিক্রি শুরু করলে সাধারণ মানুষ গরুর মাংস কিনতে শুরু করে।
পরবর্তীতে দাম বাড়ালে রাজধানীর খলিলকে দেখা যায় শেষ ভরসা হিসেবে। এই সুযোগে তিনিও দাম বাড়িয়ে দেন। কারণ খলিল বিভিন্ন মহল থেকে জীবন নাশের হুমকি পান। রমজানের আগে সরকারিভাবে ৩০টি পয়েন্টে ৬০০ টাকায় দাম নির্ধারণ করে দিলেও ব্যবসায়ীরা গরুর মাংস বিক্রি বন্ধ করে দেন।
কিন্তু নানান চড়াই উৎরাইয়ের পর খলিল নিজের প্রশংসা কুড়িয়ে ঠিকই রমজান মাসের আগ মূহুর্তে খোলা বাজারে ৫৯৫ টাকায় দাম নির্ধারণ করেন। তাতেই মাংস কিনতে হুমড়ি খেয়ে পড়েন সেই খোলা দোকানে। তার দৈনিক গড় বিক্রি পৌছায় ১ কোটিতে। এরপর তার দেখাদেখি পুরান ঢাকার বিভিন্ন পয়েন্টে গরুর মাংস ৬০০ টাকায় বিক্রির খবর পাওয়া যায়।
যদিও খোলা বাজারে গরুর মাংস ৫৯৫-৬০০ টাকায় বিক্রিতে ভোক্তা অধিকারের কর্মকর্তাদের বাহবা পেলেও রাজধানীর বিভিন্ন সুপারশপগুলিতে একই মাংস ঠিকই বিক্রি হচ্ছে ৭৬৯-১২০০ টাকায়। এমন খবর পাওয়ার পর সোনালীনিউজের পক্ষ থেকে মগবাজার মিনা বাজারে পরিদর্শন করতে গেলে তার সত্যতা মেলে। সেখানে হাঁড়সহ গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৬৯ টাকা আর হাঁড় ছাড়া গরুর মাংস ১২০০ টাকা।
মগবাজার মধ্যবিত্ত পরিবারের বেড়ে উঠা ফিরোজ খান নামে এক ক্রেতা জানান, শুনেছি রমজান মাস উপলক্ষে খলিলের দোকানে গরুর মাংস ৫৯৫ টাকা। আমার বাসা থেকে খলিলের দোকান প্রায় ৩ কিলোমিটার। ভাড়ায় যেতে লাগে ২০০ টাকা। সেখানে গিয়ে লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। সেক্ষেত্রে মগবাজার মাংসের দোকানে মাংস কেনা একই কথা। যদিও গরুর মাংসের নামে মহিশের মাংস আর ভেজাল আর রং মেশানো মাংসের ভয়ে মগবাজার সুপারশপগুলো থেকে বেশিরভাগ গরুর মাংস কেনা হয়।
কিন্তু সে তুলনায় মিনা বাজারে দাম অনেক বেশি। কোথায় মাংসের দাম ৫৯৫ টাকা আর এখানে এসে দেখি হাঁড়সহ ৭৬৯ আর হাঁড় ছাড়া ১২০০ টাকায়। তিনি আরও বলেন, খােলা বাজারে গরুর মাংসের দাম কম থাকলেও বেশিরভাগ সময়ে সুপারশপগুলোতে দাম বেশি চোখে পড়ে। কিন্তু এখানে কেন সরকারীভাবে কেন তদারকি করে না। শুধু খোলা বাজারের দাম নির্ধারণ না করে সরকারের উচিত রাজধানীর এগুলো সুপারশপগুলোকে দাম নির্ধারণ করে দেয়া। তাহলেই খোলা বাজারে গরুর মাংসের দাম কমার সম্ভাবনা তৈরি হবে।
এলাকার স্থানীয় রমজান মিয়া (ছদ্মনাম) জানান, আমরা স্বল্প আয়ের মানুষ। আগে সপ্তাহে অন্তত একদিন মাংস কিনতাম। তাছাড়া কম টাকার আশায় বেশিরভাগ সময় কারওয়ান বাজারে যেতাম। সেখানে মাংসের দাম কমানো তো দূরের কথা। তাদের দিকে তাকানোই যায় না। অথচ সেখানে ভেজাল আর রং মিশানোর ভয়। তাই শেষ ভরসা আর বিশ্বাসের জায়গা ছিল রাজধানীর সুপারশপগুলো।
কিন্তু সেখানে মাংসের কিমা, হাঁড়সহ মাংস আর হাঁড় ছাড়া মাংসের দাম শুনলেই মাংস খাবারের কথা ভুলে যাই। তিনি আরও বলেন, এখন অন্যান্য জিনিসপত্রের দাম এত বেশি যে সবজি কিনতেও হিমশিম খেতে হচ্ছে। মাংস কিনব কেমন করে। এছাড়া আমাদের এলাকায় কিছু গরুর মাংসের দোকান আছে। তারা দাম ৭৫০ টাকায় বিক্রি করে থাকেন। তাতেও হাঁড় আর তৈলে ভরা। তাই গরুর মাংস কেনা ছেড়েই দিয়েছি। তাছাড়া রমজান মাসে সব কিছুর দাম বেশি। খুব কষ্টে জীবন যাপন করছি।
ভোক্তাদের অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠন কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, গরুর মাংসের একটা যৌক্তিক দাম থাকা দরকার। তবে, দাম বেঁধে দেয়ার পর সরবরাহ পরিস্থিতি ভালো থাকাও জরুরি। না হলে সেই দাম কার্যকর হবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, সরবরাহ ভালো থাকলে ওই তালিকার চেয়েও কমেও বিক্রি করে ব্যবসায়ীরা।
অন্যদিকে জানা গেছে রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে রমজানের আগে সরকারিভাবে গরুর মাংসের দাম ৬০০ টাকায় বেঁধে দিলে বাজারে মাংস বিক্রিও কমে গেছে। দোকানগুলো গুটিয়ে মাংস বিক্রি বন্ধ করে দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
এআর
আপনার মতামত লিখুন :