ঢাকা : এবারের বাজেট একটি জটিল পরিস্থিতিতে প্রণয়ন করতে যাচ্ছে সরকার। গত বাজেটে সমস্যা ছিল একটি। এবার তিনটি। অনিয়ন্ত্রিত উচ্চ মূল্যস্ফীতি, অভ্যন্তরীণ ও বিদেশি ঋণের ঝুঁকি বাড়ছে, প্রবৃদ্ধির ধারা শ্লথ হচ্ছে কর আহরণ কম হওয়ার কারণে।
রোববার (৫ মে) রাজধানীর হোটেল লেকশোরে সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি) আয়োজিত 'জনসম্পৃক্ত সরকারি আর্থিক ব্যবস্থাপনা: নতুন সরকার, জাতীয় বাজেট ও জন মানুষের প্রত্যাশা' শীর্ষক বাজেট প্রস্তাবনায় এসব কথা বলেন প্রতিষ্ঠানটির সম্মানীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।
ড. দেবপ্রিয় বলেন, দেশের অর্থনীতিতে এখন যোগ সমস্যা হয়েছে অর্থাৎ তিনটি সমস্যা যুক্ত হয়েছে। গত দুই বছর ধরে বাংলাদেশের উচ্চ মূল্যস্ফীতি বিরাজ করছে। এটি এখন অনিয়ন্ত্রিতভাবে বেড়ে চলেছে। দ্বিতীয়ত, আমাদের ঋণের ঝুঁকি বাড়ছে। এ ঋণ শুধু বিদেশি ঋণ না, অভ্যন্তরীণ ব্যক্তিখাতের ঋণের দায়দেনাও বাড়ছে। তৃতীয়ত, দেশের প্রবৃদ্ধির হার শ্লথগতির হয়ে পড়েছে। এটি হয়েছে কর আহরণ কম হওয়ার কারণে, এ খাত না বেড়ে আরও সংকুচিত হয়েছে।
এ অর্থনীতিবিদ বলেন, মূল্যস্ফীতি বিরূপভাবে পিছিয়ে পড়া মানুষের শিক্ষা, স্বাস্থ্যে প্রভাব পড়ে। ফলে বাল্য বিয়েও বাড়ছে। বিশ্বে মূল্যস্ফীতির পতন ঘটেছে, কিন্তু দেশে ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে।
জিডিপিতে ঋণের বোঝা আরও বাড়ছে জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদের যে সুনাম ছিল আমরা কখনো খেলাপি হই না, সে সুনাম আর থাকছে না। ইতোমধ্যে আমরা ৫ বিলিয়ন ডলারের দেনা এখনও আমরা দিতে পারছি না। আমাদের গর্বের জায়গায় চিড় ধরেছে। জিডিপিতে সরকারি ঋণ ৩৭ শতাংশ, ব্যক্তিখাতের ঋণ ৫ শতাংশ- সব মিলিয়ে ৪২ শতাংশ ঋণের বোঝা আছে সরকারের।
জিডিপির লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা কঠিন হবে জানিয়ে দেবপ্রিয় বলেন, সরকার ত্রৈমাসিক জিডিপির তথ্য দিচ্ছে। তাতে যা দেখা যাচ্ছে, গড় প্রবৃদ্ধি ৪ শতাংশ, লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে হলে বাকি সময়ে ১০ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি করতে হবে- যা প্রায় অসম্ভব।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বাজেট প্রত্যাশা নিয়ে জরিপ করেছে সিপিডি। এতে আড়াই হাজারের ওপর অংশগ্রহণকারী ছিল। জরিপের তথ্য তুলে ধরেছেন এ অর্থনীতিবিদ।
জরিপের তথ্য তুলে ধরেন দেবপ্রিয় বলেন, ৬৪ শতাংশ বলেছে তাদের কোনো বাজেট প্রত্যাশা নেই। এতে তিনটি বিষয় পরিষ্কার। তারা শোভন কর্মসংস্থান চায়, মানসম্মত শিক্ষা চায়, সম্প্রসারিত সামাজিক সুরক্ষা চায়।
তিনি সরকারের উদ্দেশ্যে বলেন, পিছিয়ে পড়া মানুষের চাহিদার প্রতি সংবেদনশীল হতে হবে। বাজেট বাস্তবায়নে স্থানীয় সরকারকে যুক্ত করতে হবে। আর স্বাধীন মিডিয়া বড় ভূমিকা পালন করতে পারে। জরিপের বেশিরভাগ মানুষ বলছেন, স্বচ্ছতার জন্য পেনশন ফান্ডকে আলাদা করতে হবে, সামাজিক সুরক্ষায় যোগ করা যাবে না।
এমটিআই
আপনার মতামত লিখুন :