ঢাকা: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বিমা খাতের কোম্পানি সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্সে লিমিটেডে প্রশাসন নিয়োগের পর ব্যবসা কমেছে প্রায় ৪০ শতাংশ। এই পরিস্থিতিতে কোম্পানিটি বাঁচাতে ও ব্যবসায়ীক শৃংঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে আইডিআরএ'র নিয়োগ দেয়া ‘অনভিজ্ঞ’ প্রশাসক দ্রুত অপসারণ করে পুরাতন বোর্ড পূর্ন:বহালের দাবি জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা।
এছাড়াও সরকারের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ হতে যোগ্য নিরপেক্ষ পর্যবেক্ষক নিয়োগ ও ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য চিঠিতে অনুরোধ জানানো হয়েছে। গত বুধবার (২৯ মে) সোনালী লাইফের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের পক্ষ থেকে অর্থপ্রতি মন্ত্রী বরাবর এ সংক্রান্ত একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে।
সোনালী লাইফের কর্মকর্তা ও কর্মচারিদের পক্ষ থেকে চিঠিতে বলা হয়, আমরা দীর্ঘ ১১ বছর যাবৎ সুনামের সাথে পরিচালিত সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিতে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছি। অত্যন্ত দুঃখের বিষয় এই যে, এত সুন্দর একটি প্রতিষ্ঠান কতিপয় কিছু অসাধু কর্মকর্তার ষড়যন্ত্রের কারণে হুমকির সম্মুখীন। ২০১৩ সালে প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের সামাজিক নিরাপত্তা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে যে ১৩টি চতুর্থ প্রজন্মের ইনস্যুরেন্স কোম্পানি অনুমোদন দিয়েছিল, এর মধ্যে সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি অন্যতম একটি লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি যার গ্রাহক দাবি নিষ্পত্তি ও কর্মকর্তা কর্মচারীদের শতভাগ দাবি দাওয়া পরিশোধের এক অনন্য নজির সৃষ্টি করেছে।
এছাড়া দেশের প্রায় ৩০ হাজার মাঠকর্মী গত ১১ বছর অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে ৮ লক্ষাধিক পলিসি গ্রাহক তৈরির মাধ্যমে বাংলাদেশের ইন্স্যুরেন্স বিমুখ প্রেক্ষাপট পরিবর্তনের প্রচেষ্টায় কেবল সফলতার সূর্য উদয় খাটাতে চলেছিল, ঠিক তখন সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের সাবেক সিইও মীর রাশেদ বিন আমানসহ একদল স্বার্থান্বেষী মহলের সহযোগিতায় নিজের আর্থিক লাভ, জাল জালিয়াতি ও চারিত্রিক অনৈতিক ঘটনা ধামা চাপা দেওয়ার উদ্দেশ্যে সোনালী লাইফের স্বপ্নদ্রষ্টা ও বিজিএমই’র সাবেক সভাপতি মোস্তফা গোলাম কুদ্দুস ও তার পরিবারের সদস্যদের সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন ও সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানী লিমিটেডকে অনৈতিক এক ঘৃণ্য চক্রান্ত বাস্তবায়নের চেষ্টা চলছে।
যার ধারাবাহিকতায় আইডিআরএ’র চেয়ারম্যানের সরাসরি পৃষ্ঠপোষকতায়, কোম্পানির মাঠকর্মীদের ভবিষ্যৎ ধ্বংসের লক্ষ্যে গত ২১ এপ্রিল একজন অবসর প্রাপ্ত সেনা সদস্য যিনি ইন্স্যুরেন্স সর্ম্পকে সম্পূর্ণ অনভিজ্ঞ ও কোম্পানীর মৌলিক ভিত্তি তথা ব্যবসা ও এর কর্মীদের নানাবিধ সুযোগ সুবিধা বন্ধের মাধ্যমে এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের সুপরিকল্পিত চক্রান্তে মেতে উঠেছে।
চিঠিতে বলা হয়, কোম্পানিতে একজন অদক্ষ, অনভিজ্ঞ ও একরোখা প্রশাসক নিয়োগের কারণে গত এক মাসে কোম্পানির ব্যবসা কমেছে প্রায় ৪০ শতাংশ।
বর্তমানে যেখানে বাংলাদেশের বেকার সমস্যা এক জাতীয় সমস্যা, সেখানে লাইফ ইন্স্যুরেন্স এ পেশাগত সফলতা অর্জনকারী একটি দেশীয় কোম্পানীর ৩০ হাজার মেধাবী, পরিশ্রমী খেটে খাওয়া মাঠকর্মী ও তাদের পরিবারের জীবন জীবিকা উচ্চ অদক্ষ প্রশাসকের কারণে আজ ধ্বংসের সম্মুখীন।
এতে আরও বলা হয়, কোম্পানীর সাসপেন্ডকৃত পরিচালকদের তদন্তের নামে সরিয়ে দিয়ে কোম্পানি দখলের পায়তারা করছে একটি ষড়যন্ত্রকারী মহল। আমরা গত ১০ বছরের অভিজ্ঞতার আলোকে বলতে চাই যে, গভীর চক্রান্ত করে যে সকল পরিচালকদের অত্র কোম্পানি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে, কোম্পানির সকল পরিচালকদের প্রতি আমরা ৩০ হাজার কর্মী সম্পূর্ণ আস্থাবান ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। যদি কোনো অনিয়ম পূর্ববর্তী সিইও মীর রাশেদ বিন আমান ও কতিপয় বিপথগামী অফিসারদের সহযোগীতায় হয়ে থাকে আমরা তাহাদের নিরপেক্ষ তদন্ত স্বাপেক্ষে শান্তি কামনা করছি। ইন্স্যুরেন্স কোম্পানীর নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএ আজ এ ধরনের পদক্ষেপের কারণে কোম্পানিটি এখন ধ্বংসের পথে।
এমন একটি কোম্পানির পরিচালকদের যদি কোনো ভুলত্রুটি হয়ে থাকে তাহার জন্য পরিচালকদের কারণ দর্শানোর নোটিশ কিংবা সতর্কতা ও জরিমানা করা যেতে পারতো তা না করে। তা না করে কোম্পানিতে একজন অদক্ষ ও অনভিজ্ঞ প্রশাসক বসানো হয়েছে তা আজ দেশবাসির কাছে প্রশ্নবিদ্ধ। আমরা ৩০ হাজার কর্মী যার মাধ্যমে লক্ষাধিক লোক জীবিকা নির্বাহ করে আসছে সকল পরিবার আজ হতাশার মধ্যে জীবন-যাপন করছি।
খুব দ্রুত সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স এর বোর্ড মেম্বারদের পূনর্বহাল ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের পক্ষে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ হতে একজন দক্ষ, নিরপেক্ষ পর্যবেক্ষক নিয়োগের মাধ্যমে আমাদের ও ৮ লক্ষ গ্রাহকের আমানত নিরাপদ করার জন্য আপনার মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপ কামনা করছি। অন্যথায় উক্ত প্রতিষ্ঠানের ৩০ হাজার কর্মীর সঙ্গে জড়িত লক্ষাধিক পরিবারের সদস্যগন দুর্ভোগের শিকার হবে।
যে কারণে উক্ত প্রতিষ্ঠানের ব্যবসায়িক শৃংঙ্খলা ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে অদক্ষ ও অনভিজ্ঞ প্রশাসকের দ্রুত অপসারণ, পুরাতন বোর্ড পূর্ন: বহাল ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ হতে যোগ্য নিরপেক্ষ পর্যবেক্ষক নিয়োগের ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিনীত অনুরোধ করছি।
উল্লেখ, সম্প্রতি সোনালী লাইফ ইন্সুরেন্সের পরিচালনা পর্ষদ স্থগিত করে নতুন প্রশাসক নিয়োগ দিয়েছে বিমা খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ‘বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ’ (আইডিআরএ)। গত ১৮ এপ্রিল আইডিআরএ পরিচালক (আইন) মোহাম্মদ আব্দুল মজিদের সই করা এ সংক্রান্ত আদেশ জারি করা হয়।
যা গত (২১ এপ্রিল) থেকে কার্যকর হবে বলে উল্লেখ করা হয়। (আইডিআরএ) সেই নির্দেশনায় বলা হয়, বিমা আইন ২০১০ এর ধারা-৯৫(১) এর প্রদত্ত ক্ষমতাবলে সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের বিদ্যমান পরিচালনা পর্ষদকে ছয় মাসের জন্য ‘সাসপেন্ড’ করা হলো। একইসঙ্গে কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রণাধীনে বিমাকারীর কার্যক্রম ব্যবস্থাপনার জন্য ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এস এম ফেরদৌস, এনডিসি, পিএসসি, (অব:)-কে প্রশাসক নিয়োগ করা হলো।”।
এআর
আপনার মতামত লিখুন :