ঢাকা: গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সরকারকে হঠানোর পর এবার দেশে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে কাজ করছে সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে গড়ে ওঠা শিক্ষার্থীদের সংগঠন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। সংগঠনের পক্ষ থেকে এবার দ্রব্যমূল্য কমাতে এক সপ্তাহের আলটিমেটাম দেওয়া হয়েছে। এই সময়ের মধ্যে দ্রব্যমূল্য জনসাধারণের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে আনতে না পারলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ সব দফতরের কর্মকর্তাদের পদত্যাগের আহ্বান জানানো হয়েছে।
রোববার (১১ আগস্ট) রাজধানীর কাওরান বাজারে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের প্রধান কার্যালয়ের সভাকক্ষে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় এই আলটিমেটাম দেওয়া হয়। বাজার তদারকিসহ সচেতনতামূলক কার্যক্রমে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের সমন্বয়ের কাজ করার লক্ষ্যে এই মত বিনিময় সভার আয়োজন করা হয়।
সভায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক বিন ইয়ামিন মোল্লা বাজার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নয়টি সুপারিশ করেন। সেগুলো হলো- বিপ্লবী ছাত্র জনতা টিম করে প্রতিটি শহর, জেলা, উপজেলা, পাড়া, মহল্লায় বাজার মনিটরিং করবে; তবে তারা কাউকে জরিমানা করতে পারবে না ও আইন নিজের হাতে তোলা যাবে না। প্রতিটি জেলা-উপজেলায় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের মতবিনিময় সভার আয়োজন করা। প্রতিটি বিক্রেতার নিত্যপণ্য ক্রয়ের রশিদ রাখা; প্রতিটি দোকানে মূল্য তালিকা টাঙানো; কেউ বাজার, রাস্তা, দোকান দখল করে ব্যবসা করলে তাকে উৎখাত করা; রাস্তায় চাঁদাবাজি প্রতিরোধ করা; ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের জনবল বৃদ্ধি ও দুর্নীতি-স্বজনপ্রীতি বন্ধ করা।
সভায় জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের মহাপরিচালক (ডিজি) এ এইচ এম সফিকুজ্জামান সভাপতির বক্তব্যে বলেন, ‘আমরা চাপমুক্ত হতে চাই তোমাদের (শিক্ষার্থী) মাধ্যমে। তোমাদের হাতটা এত শক্তিশালী হয়েছে, আমার মনে হয়, তোমরা যেখানে হাত দেবে সেখানেই সোনা ফলবে। আমরা আসলেই ব্যর্থ হয়েছি। আমরা এখন তোমাদের নিয়ে স্বপ্ন দেখি।’
এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, ‘বিভিন্ন করপোরেট গ্রুপ বাজার সিন্ডিকেটের মূল হোতা। আমরা যেখানেই হাত দিচ্ছি, সেখানেই অনিয়ম পাওয়া যাচ্ছে। ইতোমধ্যে অনেকের সামনে মিডিয়া-ক্যামেরা নিয়ে গেলেও অনেক অনিয়ম বন্ধ করতে পারিনি।’
উপ-পরিচালক আতিয়া সুলতানার সঞ্চালনায় মতবিনিময় সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের পরিচালক (অর্থ ও প্রশাসন) মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান, পরিচালক (কার্যক্রম ও গবেষণা) ফকির মুহাম্মদ মুনাওয়ার হোসেন, কনজুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ মিজানুর রহমান প্রমুখ।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আন্দোলন প্রথমে নিছক সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে শুরু হলেও পরবর্তী সময়ে এটি সরকার পতনের আন্দোলনে রূপ নেয়। এক মাসের বেশি সময় আন্দোলন চালিয়ে আসার পর গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে টানা প্রায় ১৬ বছর ধরে ক্ষমতার মসনদ আঁকড়ে ধরে রাখা শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ থেকে
ছাত্রদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ইতোমধ্যে শান্তিতে নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা হয়েছে। এই সরকারেও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দুজন প্রতিনিধি রয়েছেন। এছাড়া সব মন্ত্রণালয়ে ‘সহযোগী উপদেষ্টা’ হিসেবে ছাত্রদের যুক্ত করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
এদিকে সরকার পতনের ফলে দেশজুড়ে যে অরাজকতা সৃষ্টি হয়েছে তা দমনে কাজ করছেন শিক্ষার্থীরা। ট্রাফিক ব্যবস্থাসহ দেশবাসীকে স্বস্তি দিতে নানা দায়িত্ব পালন করছেন ছাত্রছাত্রীরা। এর অংশ হিসেবে এবার তারা জনগণের নাভিশ্বাস ওঠা দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে মনোযোগী হয়েছেন। ইতোমধ্যে দেশের বিভিন্ন স্থানে বাজার নিয়ন্ত্রণে শিক্ষার্থীরা কাজ শুরু করেছেন।
এমএস
আপনার মতামত লিখুন :